Web bengali.cri.cn   
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর কয়েকটি অর্থনৈতিক সংবাদ ---২০১৪/১২/২৯
  2014-12-29 17:19:43  cri

১. বাংলাদেশ থেকে ২৫ হাজার টন সেদ্ধ চাল আমদানি করছে শ্রীলংকা। গত শনিবার সাড়ে ১২ হাজার টন চাল নিয়ে 'বাংলার কাকলী' নামক জাহাজ কলম্বোর উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করে। বাকি সাড়ে ১২ হাজার টন চাল যাবে নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহের দিকে।

এদিকে, বাংলাদেশের খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারোয়ার খান স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আরো ৭৫ হাজার টন চাল রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪০ হাজার টন চাল আমদানির প্রস্তাব এসেছে বলেও তিনি জানান। তিনি জানান, খুব শিগগিরই বিষয়টি চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশ থেকে একটি প্রতিনিধিদল ভারতে যাবে।

চাল রপ্তানির ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলেও দাবি করেন তিনি।

২. চীন থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানির পরিমাণ২০ শাতংশ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুসারে,২০১৩-১৪ অর্থবছরে চীন থেকে পণ্য আমদানি করা হয় ৭৫৪ কোটি ডলারের, যা ২০১২-১৩অর্থবছরেরতুলনায়প্রায়২০শতাংশবেশি।

পরিসংখ্যান বলছে,২০০৯-১০ অর্থবছরে চীন থেকে ৩৭৯ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশ, যা ২০১০-১১ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৯০ কোটি ৫৭ লাখ ডলারে। এরপর ২০১১-১২ অর্থবছরে তা আরও বেড়ে হয়৬৪১ কোটি ডলার। বিশ্ববাজার থেকে বাংলাদেশে মোট আমদানির প্রায় ২১ শতাংশই সম্পন্ন হয় চীন থেকে।

এদিকে, চীনে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানিও বেড়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে যেখানে ৪৫ কোটি ৮১ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল, সেখানে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৪ কোটি ৬১ লাখ ডলার।

৩.বিদেশে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের মসলাপণ্য রপ্তানি বেড়েছে।দেশটির রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) দেশ থেকে এক কোটি ডলারের মসলাপণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে মসলা রপ্তানি হয়েছিল ৭৭ লাখ ৯০ হাজার ডলারের। এক বছরে মসলা রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের আয় বেড়েছে ২৮.৭৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের জন্য ইপিবি মসলা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল ৮৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার। কিন্তু রপ্তানি হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি।

উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে কাঁচা মসলার পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত গুঁড়া হলুদ, মরিচ, জিরা এবং মিক্সড মসলা রপ্তানি হচ্ছে।

৪.রেল খাতের উন্নয়নে ৬৫০৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়ে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পের আওতায় আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত দুটো ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প ব্যয়ের ৫৪৭৭ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং ইউরোপীয় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি)। বাকি অর্থ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে দেবে। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এর সভায় এই প্রকল্পসহ মোট ১০,৬২৫ কোটি টাকার ৮টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এগুলোর মধ্যে ৬টি নতুন এবং দুটি সংশোধিত প্রকল্প। একনেকের সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ খুব শিগগিরই ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের একটি প্রধান করিডোরে পরিণত হবে। তখন বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোকে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে মালামাল পরিবহণ সুবিধা দিতে পারবে। এতে করে বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা আকৃষ্ট হবেন এবং বিনিয়োগ বাড়বে বলেও মন্ত্রি মন্তব্য করেন।

৫.রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা তা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করবেন এবং প্রয়োজন হলে রাস্তায় নামবেন। গত রোববার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিজ ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)। বিবৃতিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বানও জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক সমস্যাগুলো হরতালের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে কোনোভাবেই সমাধান করা সম্ভব নয়। হরতালের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি দেশের অর্থনীতিকে চরম বিপর্যয় এবং এক অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাবে। এ নিয়ে দেশের ব্যবসায়ী সমাজ উদ্বিগ্ন।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, হরতালে নাগরিক জীবন, উত্পাদনব্যবস্থা, পণ্য সরবরাহসহ দৈনন্দিন কার্যক্রম ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিঘ্নিত হয় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমও। এটা সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি, বাণিজ্য ও নাগরিক কর্মকাণ্ডকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

৬. ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়লেও, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান। তিনি গত বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকায় আয়োজিত পঞ্চদশ জাতীয় পরিসংখ্যান সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ দাবি করেন।

তিনি বলেন, মাত্র কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের খেলাপি ঋণের কারণে সার্বিক খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি মনে হয়। কিন্তু কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকসহ কয়েকটি রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান বাদ দিলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে দুই শতাংশের মতো।

উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিক বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৭ হাজার ২৯০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, যা ব্যাংকিং খাতের বিতরণ করা মোট ঋণের ১১.৬০ শতাংশ।

৭. রোববার বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেষ হয় পাঁচদিনের রিহ্যাব মেলা। রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন (রিহ্যাব) আয়োজিত এই মেলায় ৩৭৪টি ফ্ল্যাট ও ৪১২টি প্লট বিক্রি হয়েছে। এসব ফ্ল্যাট ও প্লটের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় চারশ কোটি টাকা। পাশাপাশি ক্রেতাদের কাছ থেকে ৫২১ কোটি টাকার ফ্ল্যাট, প্লট ও বাণিজ্যিক স্পেস কেনার প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন বিক্রেতারা। মেলায় ১৫২টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে।

৮. চীনের জাতীয় এয়ারলাইন্স 'এয়ার চায়না' আগামী বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি সিচুয়ান প্রদেশের রাজধানী ছেংতু থেকে শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বো পর্যন্ত সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করবে। সম্প্রতি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানায়।

সপ্তাহে চারটি ফ্লাইট এই রুটে চলাচল করবে এবং এ রুটে এয়ারবাস এ৩৩০ এয়ারক্রাফ্ট ব্যবহার করা হবে। ছেংতু থেকে কলম্বো পৌঁছাতে সময় লাগবে সাড়ে পাঁচ ঘন্টা। এই প্রথম ছেংতু থেকে শ্রীলংকার কোনো শহরে সরাসরি ফ্লাইট চালু হতে যাচ্ছে। বর্তমানে ছেংতুর সাথে বিভিন্ন দেশের ৭৮টি আন্তর্জাতিক রুট রয়েছে। এসব রুটের মাধ্যমে ছেংতু বিশ্বের ১৮৭টি শহরের সাথে সংযুক্ত।

৯. পাকিস্তানে নন-টেক্সটাইল পণ্যের রপ্তানি আয় কমেছে। চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়কালে এ খাতে দেশটির আয় ছিল ৪২১ কোটি ডলার। অথচ এর আগের অর্থবছরের একই সময়কালে এ খাত থেকে দেশটির রপ্তানি আয় হয়েছিল ৪৬৯ কোটি ডলার।

বিদ্যুত ও গ্যাস সরবরাহে ঘাটতির কারণেই এ খাতে পাকিস্তানের রপ্তানি আয় কমেছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।

১০.২০১৫ সালে ভারতীয়রা অনলাইন কেনাকাটায় গড়ে ৬৭% বাড়তি খরচ করবেন। অ্যাসোচ্যাম-প্রাইসওয়াটারহাউস কুপার্স-এর যৌথ সমীক্ষায় এ রকম আভাস পাওয়া গেছে। চলতি বছর অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতিজন ভারতীয় গড়ে খরচ করেছেন ৬ হাজার রূপি, যা আগামী বছর দাঁড়াবে ১০ হাজার রূপিতে। এ ছাড়া, ২০১৪ সালে প্রায় ৪ কোটি ভারতীয় যেখানে অনলাইনে কিছু কেনাকাটা সেরেছেন, সেখানে নতুন বছরে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি ভারতীয় অনলাইনে কেনাকাটা করবেন বলে সমীক্ষায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ভারতে ১৭০০ কোটি ডলারের (১ লক্ষ ২ হাজার কোটি রূপি) এই শিল্প বছরে বাড়ছে ৩৫ শতাংশ হারে। দেশটিতে অনলাইন ব্যবসায় নিযুক্ত আছেন ২৫ হাজার কর্মী।

(তথ্যসূত্র: প্রথম আলো, ইত্তেফাক, বিডিনিউজ, আনন্দবাজার পত্রিকা, কলম্বো পেইজ, ডন ডটকম, টাইমস্‌অব ইন্ডিয়া, ইত্যাদি)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040