Web bengali.cri.cn   
দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক সংবাদ --- ২০১৪/১০/১৩
  2014-10-13 17:37:29  cri

১. ধারণার চেয়ে অনেক আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে বিশ্বের 'বৃহত্তম অর্থনীতি'র তকমাটি পেল চীন। অন্যদিকে, প্রায় দেড়'শ বছর পর বিশ্বে মার্কিন অর্থনীতি নেমে এল দ্বিতীয় স্থানে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল এ তথ্য জানিয়েছে সম্প্রতি। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, চীনের অর্থনীতির আকার বর্তমানে ১১ ট্রিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ১০.৮ ট্রিলিয়ন পাউন্ডের। ১৮৭২ সালে যুক্তরাজ্যকে পেছনে ফেলে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির খেতাবটি পেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

আইএমএফের হিসাব অনুসারে, ২০১৯ সাল নাগাদ চীনের অর্থনীতির আকার দাঁড়াতে পারে ১৬.৭ ট্রিলিয়ন পাউন্ডে। তখন মার্কিন অর্থনীতির আকার দাঁড়াতে পারে ১৩.৮ ট্রিলিয়ন পাউন্ড স্টার্লিংয়ে। উল্লেখ্য, পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি বা পিপিপির ভিত্তিতে অর্থনীতির আকার নির্ধারণ করে থাকে আইএমএফ। সমপরিমাণ অর্থে কোন দেশে বেশি দ্রব্য ক্রয় করা যায়, তার ভিত্তিতে পিপিপি নির্ধারণ করা হয়। এর ভিত্তিতে অর্থনীতির আকার ঠিক করার সময় জীবনযাপনের ব্যয় বিবেচনা করা হয় না।

২. চীনের ইউননান প্রদেশের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনডেন্টিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএএ) নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে চীনের ইউননানের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলটি এ আগ্রহ প্রকাশ করে। রাজধানী ঢাকার বিজয়নগরের একটি হোটেলে এদিন সন্ধ্যায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বিআইএএর পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির সভাপতি কে এম এইচ শহিদুল হক। আর ১৩ সদস্যের চীনা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন ইউননান প্রদেশের বাণিজ্য বিভাগের উপ-মহাপরিচালক ইয়াং ওয়াই। বৈঠকে সস্তা শ্রমের কথা উল্লেখ করে বিদ্যুত ও অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করতে চীনা ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান শহিদুল হক। জবাবে ইয়াং ওয়াই বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন এবং এ ব্যাপারে নিজেদের আগ্রহের কথা জানান। তিনি বলেন, তাঁর দলে বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের শিল্পোদ্যোক্তারা রয়েছেন, যাঁরা বিনিয়োগের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন।

৩. ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি পাঁচ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার উপায় অন্বেষণ করতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আগামী ৭ থেকে ৯ ডিসেম্বর আয়োজিত হবে 'বাংলাদেশ আরএমজি ২০২১' সম্মেলন। এতে তৈরি পোশাক শীর্ষ সম্মেলন বা 'অ্যাপারেল সামিট ২০১৪'সহ একাধিক সভা ও অগ্নিনিরাপত্তা প্রদর্শনী থাকবে। দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর উদ্যোগে 'তৈরি পোশাক শীর্ষ সম্মেলন ২০১৪' অনুষ্ঠিত হবে। উত্তর আমেরিকার তৈরি পোশাক ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্সের উদ্যোগে থাকবে 'বাংলাদেশ ভবন ও অগ্নিনিরাপত্তা প্রদর্শনী' এবং জিআইজেডের উদ্যোগে সামাজিক ও পরিবেশ খাতে অনন্য অবদান রাখার জন্য শ্রেষ্ঠ কারখানাকে পুরস্কার দেওয়া হবে। এ ছাড়া, আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক পণ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ বিষয়েও আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

৪. বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারো ২২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান স্থানীয় গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, গত বুধবার দিন শেষে রিজার্ভ ছিল ২২০২ কোটি ডলার।

গত ৭ অগাস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২২০০ কোটি ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করে। তবে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা 'আকু'র দেনা পরিশোধ করার পর তা কিছুটা কমে এসেছিল।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০,০০০ কোটি মার্কিন ডলারের কিছু বেশি। অন্যদিকে, পাকিস্তানের রিজার্ভ ১০০০ কোটি ডলার।

৫. চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬.২ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) অর্জিত হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। প্রবৃদ্ধির সম্ভাব্য এই হারকে 'সন্তোষজনক' বলেও আখ্যায়িত করেছে এই বিশ্ব সংস্থাটি। গত সোমবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের 'সাউথ এশিয়া ইকনোমিক ফোকাস' প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, "সম্প্রতি বাংলাদেশ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পথে ফিরে আসায় তা দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে প্রধান ভূমিকা রাখবে।"

এ ছাড়া, ২০১৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর গড় প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এতে ২০১৫ সালে ভারতে ৬.৪ শতাংশ, শ্রীলংকায় ৮.২, পাকিস্তানে ৪.৪ এবং নেপালে ৪.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) 'এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০১৪' এর হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের চলতি অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭.৩ শতাংশ।

৬. এদিকে বাংলাদেশে চলতি বছর মোট ১৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী-আয় আসতে পারে বলে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সংস্থাটির মাইগ্রেশন অ্যান্ড রেমিট্যান্স ইউনিটের তৈরি করা এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় গত ৬ অক্টোবর। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ প্রবাসী আয়ের দিক দিয়ে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের মধ্যে অষ্টম স্থানেই থাকবে।

প্রতিবেদন অনুসারে, গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশে এবার প্রবাসী আয় ৮.৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। গত বছর বাংলাদেশের প্রবাসী-আয় আগের বছরের তুলনায় ২.৬৬ শতাংশ কমেছিল। প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক একটি জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যেসব পরিবারে প্রবাসী-আয় আসে, তা তাদের মোট আয়ের ৮০ শতাংশের সমান এবং এ দেশের মাথাপিছু জাতীয় আয়ের দ্বিগুণ।

এদিকে, বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুসারে, চলতি বছর দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবাসী-আয়ে গড় প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৫ শতাংশ। আর এই অঞ্চলের মোট প্রবাসী-আয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ১১৭০০ কোটি ডলারে। প্রতিবেদন অনুসারে, প্রবাসী-আয়ের বৈশ্বিক তালিকায় প্রথম স্থানে থাকবে ভারত। এ বছর দেশটিতে প্রবাসী-আয়ের পরিমাণ ৭১০০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। এক্ষেত্রে ৬৪০০ কোটি ডলার নিয়ে প্রবাসী-আয়ের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকবে চীন। অন্যদিকে, শীর্ষ দশে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান থাকবে সপ্তম স্থানে। দেশটিতে আসতে পারে ১৭০০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।

৭. বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের মালিকদের ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। তিনি বলেছেন, ত্রিপুরাতে পোশাক কারখানা স্থাপনের জন্য জমি কোনো সমস্যা নয়। তা ছাড়া শিগগিরই রাজ্যে বিদ্যুতও উদ্বৃত্ত হবে। ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গত বুধবার বৈঠক করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার সন্দীপ চক্রবর্ত্তী। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান নিয়ে তিনি ঢাকায় পোশাকশিল্প ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলবেন।

এ বিনিয়োগ আহ্বান সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশের পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়ীরা যেখানে ভালো সুযোগ পাবেন, সেখানেই যাবেন। চীন, ভারত, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে যেমন বিনিয়োগ এসেছে, তেমনি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরাও ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় বিনিয়োগ করেছেন। তবে ত্রিপুরায় শুল্ক ছাড়, নগদ সহায়তার মতো সুযোগ-সুবিধা না-পেলে ব্যবসায়ীরা সেখানে যেতে চাইবেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

৮. গত ২০১১ সালে নীতি তৈরি হলেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তেমন সাড়া মেলেনি। তাই বিনিয়োগ পেতে সেই নীতি সংশোধন করতে চাইছে রাজ্য সরকার। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে, আগামী বছরের শুরুর দিকে রাজ্যে 'বিশ্ববঙ্গ সম্মেলন'-এর সময়েই চূড়ান্ত হতে পারে সেই সংশোধিত নীতি। রাজ্যে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে নতুন উদ্যোগ ও সুযোগ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ভারত চেম্বার আয়োজিত এক সভায় রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের অধিকর্তা জয়ন্ত কুমার আইকত জানিয়েছেন, এই শিল্পে বেশ কিছু নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা আছে। তিনি জানান, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের কিছু ক্ষেত্রে সম্ভাবনা থাকলেও অন্য রাজ্যের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে। তিনি তামিলনাড়ু ও মহারাষ্ট্রের কলা প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের কথা উল্লেখ করে বলেন, এ ধরনের কোনো শিল্প পশ্চিমবঙ্গে নেই।

৯. চলতি বছরের প্রথম আট মাসে শ্রীলংকায় সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। দেশটির বিনিয়োগ মন্ত্রী লাক্সমান ইয়াপা আবেওয়ার্দানে সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ১০৬ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে পর্যটন খাতেই সবচে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত বছর ১৫০ কোটি ডলারের সরাসরি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হলেও, শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগ আসে ১৩৯ কোটি ডলার।

(আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040