Web bengali.cri.cn   
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক খবর --- ২০১৪/০৯/০৫
  2014-09-05 16:48:58  cri

১. ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) চলতি বছরের পয়লা জানুয়ারি থেকে নতুন পদ্ধতিতে জিএসপি-সুবিধা দেওয়া শুরু করায় বাংলাদেশের পোশাকশিল্প খানিকটা চাপের মুখে পড়লেও, এতে উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। বাংলাদেশেরওপরইইউরসংশোধিতজিএসপিরপ্রভাববিশ্লেষণকরেএমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই)-এর পরিচালক মোস্তফা আবিদ খান। গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিএফটিআইর বিশ্লেষণ অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) পোশাকসহ প্রধান পণ্যগুলোয় ইইউতে যেখানে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেড়েছে, সেখানে এসব পণ্যে পাকিস্তানের মোট রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। আলোচ্য সময়কালে পোশাক ও বস্ত্র খাতের মধ্যে বাংলাদেশি হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি কমেছে ৩ শতাংশ, যেখানে পাকিস্তানের বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশি ওভেন ও নিট পোশাক রপ্তানি বাড়লেও, পাকিস্তানের তুলনায় তা ছিল কম।

এ প্রসঙ্গে মোস্তফা আবিদ খান বলেন, 'মনে হচ্ছে পাকিস্তান জিএসপির অধিকতর সদ্ব্যবহার করতে পারছে। আর তাই বাংলাদেশি পোশাককে আগামী দিনে আরেকটু প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। তবে এই চাপটা অনেক বেশি হবে হোম টেক্সটাইল পণ্যে।'

ইইউতে তৈরি পোশাকের প্রধান সরবরাহকারী সাত দেশের ওপর পাকিস্তানের জিএসপি-সুবিধা পাওয়ার প্রভাব বিশ্লেষণ করে তিনি দেখান যে, পাকিস্তানের রপ্তানি ১০০ কোটি ডলারের মতো বাড়তে পারে। তবে পাকিস্তান যে পরিমাণ রপ্তানি করবে, তার প্রায় ৭০ শতাংশই হবে বাণিজ্য সৃষ্টির (ট্রেড ক্রিয়েশন) মাধ্যমে। বাকি ৩০ শতাংশ হবে বাণিজ্য স্থানান্তরের (ট্রেড ডাইভারশন) মাধ্যমে। এই ৩০ শতাংশের মধ্যে বেশির ভাগটাই আবার চীনের ব্যবসা কমে গিয়ে পাকিস্তানের ব্যবসা বাড়বে। এ ছাড়া তুরস্ক, বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার রপ্তানি অল্প করে কমে গিয়ে যোগ হবে পাকিস্তানের রপ্তানির সঙ্গে।

উল্লেখ্য, জিএসপি (জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স) হলো ইইউভুক্ত দেশগুলোয় শর্তসাপেক্ষে শুল্কমুক্ত বাজার-সুবিধা পাওয়ার পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ ইইউতে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্তভাবে পণ্য রপ্তানি করতে পারে। তবে এখানে রুলস অব অরিজিন বা উৎস বিধির শর্ত পরিপালন করতে হয়। উৎস বিধিব লতে সাধারণত কোনো পণ্য উৎপাদনে কী পরিমাণ কাঁচামাল স্থানীয় উৎস থেকে ব্যবহার করতে হয় ও কীভাবে করতে হয়, তা বুঝিয়ে থাকে।

২. খাদ্যপণ্যের দাম কমায় গেল আগস্টে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি আগের মাসের তুলনায় ০.১৩ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। তিনি জানান, জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭.৪০ শতাংশ এবং আগস্টে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬.৯১ শতাংশে।

মন্ত্রী আরো জানান, আগস্টে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উপখাতে মূল্যস্ফীতি ৭.৬৭ ও ৫.৭৬ শতাংশ ছিল এবং জুলাইয়ে ছিল যথাক্রমে ৭.৯৪ ও ৫.৭১ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতি কমা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমরা নিত্যপ্রয়োজনীয়সহ ৫০ শতাংশ খাদ্য আমদানি করি। বিদেশে খাদ্যপণ্যের দাম অনেক কমে গেছে। এর ফলে মূল্যস্ফীতিও অনেক কমে গেছে। বিদেশি পণ্যের দাম কমলে মূল্যম্ফীতি আরও কমবে।'দেশের সাম্প্রতিক বন্যা মূল্যস্ফীতিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বন্যা দীর্ঘস্থায়ী না-হলে মূল্যস্ফীতিতে এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। তবে বন্যা প্রলম্বিত হলে এবং তাতে ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক হলে মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।

৩. বাংলাদেশের খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। গত বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে পরিকল্পনা কমিশন আয়োজিত ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মধ্যমেয়াদি মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ওপর এক আলোচনা সভায় দেশের খেলাপি ঋণের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির কথা স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও। এ ধরনের ঋণ বেড়ে যাওয়া কিছুদিন পরপর সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকে নতুন করে অর্থায়ন করতে হচ্ছে বলে জানান তারা।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, আগে ছয় মাসের হিসাব ধরে খেলাপি ঋণের হার নির্ধারণ করা হতো। এখন তিন মাসের হিসাব ধরে এই হার নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। তাই আগের চেয়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী বলেন, খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি আসলেই খারাপ অবস্থায় রয়েছে; এই ঋণ ব্যবস্থাপনার পারফরম্যান্স ভালো নয়। কীভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানো যায়, তা নিয়ে সভায় উপস্থিত আলোচকদের কাছ থেকে পরামর্শ চান তিনি।

এসময় বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধূরী রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোয় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমানোর পরামর্শ দেন। আর সুশাসনের অভাবে সরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে বলে মত প্রকাশ করেন অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে সহনীয় খেলাপি ঋণের মাত্রা হলো ২-৩ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশে তা ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও খেলাপি ঋণের হার মাত্র ২ শতাংশ।

উল্লেখ্য, গত মার্চ মাসে বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৮ হাজার ১৭২ কোটি টাকা; যা বিতরণ করা মোট ঋণের ৭.৯৮ শতাংশ। কিন্তু জুন মাসে এসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকায়; যা মোট ঋণের ১০.৭৫ শতাংশ।

৪. গত বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত হয় 'দ্বিতীয় বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন, এশিয়া'। সম্মেলনের আয়োজন করে অর্থনৈতিক সাময়িকী 'ফিন্যান্স এশিয়া'।

দিনব্যাপী সম্মেলনে এশিয়ার ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও রেটিং এজেন্সি বা ঋণমান নির্ণয়কারীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০০ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গহওর রিজভীসহ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা এবং কয়েকটি ব্যাংক, শেয়ারবাজার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পদস্থ কর্মকর্তারা অংশ নেন। সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি,বিনিয়োগের সুযোগ, রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য, শেয়ারবাজার,অবকাঠামো উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

৫. বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা সূচকে একধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। গতবছর এই সূচকে দেশটি ১৪৮টি দেশের মধ্যে ১১০তম স্থানে থাকলেও, এবার ১৪৪টি দেশের মধ্যে এর অবস্থান ১০৯-এ।জেনেভাভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) 'গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস রিপোর্ট ২০১৪-১৫' প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে যে তালিকা দেওয়া হয়েছে তাতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে সুইজারল্যান্ড। এর পরেই আছে যথাক্রমে সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, জাপান, হংকং, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্য।দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপাল ১৫ ধাপ এগিয়ে ১০২, ভুটান ছয় ধাপ এগিয়ে ১০৩, মিয়ানমার পাঁচ ধাপ এগিয়ে ১৩৪তম স্থানে এবং ভারত ৭১, শ্রীলঙ্কা ৭৩ ও পাকিস্তান ১২৯তম স্থানে রয়েছে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জিডিপির আকার দেখানো হয়েছে ১৪১৩০ কোটি মার্কিন ডলার। এ ছাড়া, দেশটির মাথাপিছু আয় ৯০৪ ডলার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ।

উল্লেখ্য, মোট ১২টি খাতে একবছরের অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম ওই সক্ষমতার তালিকা তৈরি করেছে। খাতগুলো হচ্ছে- প্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো, বৃহৎঅর্থনৈতিকপরিবেশ, স্বাস্থ্য ও প্রাথমিক শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, পণ্যবাজারের দক্ষতা, শ্রমবাজারের দক্ষতা, আর্থিক বাজারের উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, বাজারের আকার, ব্যবসায়িক নমনীয়তা এবং উদ্ভাবন।

৬. চলিত বছরের শেষ নাগাদ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় নিজেদের পরিকাঠামো ব্যবহার করে থ্রিজি পরিষেবা চালু করতে যাচ্ছে'এয়ারটেল'। এতদিন পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলে থ্রিজি পরিসেবা দেওয়ার জন্য 'স্পেকট্রাম' থাকলেও, কলকাতা সার্কেলে এয়ারটেলের হাতে সেই 'স্পেকট্রাম' ছিল না। তবে থ্রিজি পরিষেবা দেওয়ার জন্য তারা ভোডাফোনের সঙ্গে সমঝোতা করেছিল। ভোডাফোন কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গ—এই দুই সার্কেলেই এই পরিসেবা দেওয়ার জন্য স্পেকট্রাম ও লাইসেন্স পেয়েছিল। এয়ারটেলের পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার সিইও রবীন্দ্র সিংহ নেগির বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানিয়েছে, কলকাতায় থ্রিজি পরিসেবা দেওয়ার জন্য গত ফেব্রুয়ারির নিলামে ৯০০ মেগাহারতজের প্রয়োজনীয় স্পেকট্রাম জিতেছে এয়ারটেল। তবে এখনও তা তাঁদের হাতে আসেনি। কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুত সেই স্পেকট্রাম বরাদ্দ করবে বলে তাঁদের আশা। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের মধ্যে নিজস্ব স্পেকট্রামের মাধ্যমেই থ্রিজি পরিষেবা চালু করার ব্যাপারে আশাবাদী এই মোবাইল পরিষেবা সংস্থাটি।

(আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040