Web bengali.cri.cn   
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতির সংবাদ ---২০১৪/০৮/০৪
  2014-08-04 20:06:54  cri

**আগামী বছর বাংলাদেশে বেকার হতে পারে ৩৩ লাখ: উন্নয়ন অন্বেষণ

আগামী বছর বেকার মানুষের সংখ্যা ৩৩ লাখ হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন অন্বেষণ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ খবর জানিয়েছে তারা। পরিসংখ্যান ব্যুরো জানায় ২০১০ সালে দেশে বেকার মানুষের সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ। আর ২০০০ সালে ছিল ১৭ লাখ। উন্নয়ন অন্বেষণের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বার্ষিক বেকারত্ব বৃদ্ধির গড় হার ছিল ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। সে ধারাবাহিকতায় প্রকৃত পরিস্থিতি জানা যাবে আরও বছর খানেক পরে যখন বিবিএস শ্রমশক্তির ২০১৫ সালের পূর্ণাঙ্গ তথ্য–উপাত্ত প্রকাশ করবে৷

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুসারে, বিগত চার সপ্তাহ ধরে কাজ খুঁজেছে তবে কাজ পায়নি কিন্তু আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কাজ পেতে পারে বা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই বিদ্যমান মজুরিতে কাজ শুরু করবে এমন কর্মক্ষম মানুষকে বেকার বলা হয়৷ বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আইএলওর এ সংজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন ও বিতর্ক রয়েছে।

তবে বিবিএস কর্মসংস্থান ও বেকারত্ব পরিস্থিতি নির্ধারণে এখন পর্যন্ত আইএলওর এই মানদণ্ড অনুসরণ করে আসছে। আর এ মানদণ্ড অনুসারে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার অনেক নিম্ন পর্যায়ে। ২০১০ সালে দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। আর ২০০৫ সালে ছিল ৪ দশমিক ৩ শতাংশ।

উন্নয়ন অন্বেষণ বলছে, ২০০৫ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি আংশিক বেকারত্ব, অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান, যুব বেকারত্ব ও মোট শ্রমশক্তিতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

**ঘোষিত মুদ্রানীতিতে শুভঙ্করের ফাঁকি: বিশ্লেষক

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরের আগামী ছয় মাসের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় একে বিনিয়োগ ও শেয়ারবাজারবান্ধব বলে উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে এগুলোর পক্ষে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এতে ঋণের সুদের হার কমানোর কোনো কৌশল নেয়া হয়নি। উল্টো স্থানীয় ব্যাংকগুলো থেকে ঋণের জোগান কমানোর ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। সরকারের ঋণের জোগান নিশ্চিত করতে গিয়ে বেসরকারি ঋণের সুদের হার বাড়ানোর মতো আভাসও আছে, যা বিনিয়োগকে আরও নিরুৎসাহিত করবে বলে মনে করছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

উদ্যোক্তারা জানান, বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বর্তমানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাদের (উদ্যোক্তা) মধ্যে আস্থার সঞ্চার করা, ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানো, সার্ভিস চার্জ সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনা, লিজিং খাতকে প্রতিযোগিতামূলক করা, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করা, আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়নসহ কার্যকরী জোরালো পদক্ষেপ নেয়া। ঘোষিত মুদ্রানীতিতে এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। উল্টো বিদ্যমান সংকটময় পরিস্থিতিকে আড়াল করে মুদ্রানীতির মাধ্যমে বিনিয়োগ বাড়ানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে আনার স্বপ্ন দেখানো হয়েছে, যা বাস্তবসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

**চীনে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির হার ব্যাপক বেড়েছে

এক বছরের ব্যবধানে চীনে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির হার ব্যাপক বেড়েছে। বিগত অর্থবছরে (২০১৩-১৪) চীনে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৪ কোটি ৬১ লাখ ডলার। এর আগের বছর (২০১২-১৩) চীনে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছিল ৪৫ কোটি ৮১ লাখ ডলার।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবি এ হালনাগাদ পরিসংখ্যান দিয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত অর্থবছরে চীনে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি প্রায় ৬৩ শতাংশ বেড়েছে। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে আরও দেখা যায় যে চার বছরের ব্যবধানে চীনে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি চার গুণের বেশি বেড়েছে।

চীন বাংলাদেশকে প্রায় পাঁচ হাজার পণ্যে অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার দিয়েছে। এসব পণ্য বর্তমানে চীনের মোট আমদানির ৬০ শতাংশ। ২০১০ সাল থেকে চীন ক্রমাগত এই সুবিধা বাড়িয়ে যাচ্ছে। এসব পণ্যে ৩৫ শতাংশ স্থানীয় মূল্য সংযোজনের শর্তে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আর এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্য চুক্তি বার আপটা'র আওতায়।

চীনের বাজারে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিজাত পণ্যগুলো হলো, নিট পোশাক ও ওভেন পোশাক, বস্ত্রসামগ্রী, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক, পাট ও পাটজাত পণ্য।

**ভারতের বাধায় আটকে গেল বাণিজ্য সহজীকরণ চুক্তি

বাণিজ্য সহজীকরণ (ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন) বিষয়ে যে বৈশ্বিক চুক্তি অনুমোদন হওয়ার কথা ছিল, ভারতের প্রবল আপত্তিতে তা আটকে গেছে। জেনেভায় গত ৩১ জুলাই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সাধারণ পরিষদের বৈঠকটি তাই কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়েছে। এতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটি) দোহা পর্ব আলোচনা আবার অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেল।

ভারতের দাবি, আগে খাদ্য-নিরাপত্তার বিষয়ে একটি স্থায়ী সমঝোতায় আসতে হবে। তাহলে বাণিজ্য সহজীকরণ চুক্তিতে আর কোনো বাধা থাকবে না।

বাণিজ্য সহজীকরণ হলো, বিভিন্ন দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে কাগজপত্র-দলিলাদি কমিয়ে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে দ্রুত যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যেন বন্দরে পণ্য খালাস কম খরচে দ্রুত সম্পন্ন করা যায়। এ বছর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে এসংক্রান্ত প্রটোকল অনুমোদন এবং আগামী বছর এই চুক্তি কার্যকর হলে বিশ্ব অর্থনীতিতে আগামী ১০ বছরে এক লাখ কোটি ডলারের সমপরিমাণ কর্মকাণ্ড যোগ হবে, আর দুই কোটি ১০ লাখ কর্মসংস্থান হবে।

উল্লেখ্য, গত বছর ডিসেম্বর মাসে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে অনেক দর-কষাকষি করে সদস্য দেশগুলো শেষ পর্যন্ত একটা সমঝোতায় এসেছিল। বাণিজ্য সহজীকরণ, কৃষি ভর্তুকি ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিষয় নিয়ে বালি ঘোষণা অনুমোদন করা হয়। ওই সম্মেলনেও ভারতের দাবি ছিল খাদ্য-নিরাপত্তার ও কৃষি ভর্তুকি বিষয়ে একটি স্থায়ী সমাধান।

ভারত কৃষকদের কাছ থেকে ন্যূনতম সমর্থন মূল্যে চাল ও গম কিনে খাদ্য মজুত গড়ে তুলছে। এই মজুত থেকে গরিব মানুষকে সস্তায় খাদ্য বিতরণ করা হবে। শেষ পর্যন্ত বালি ঘোষণায় চার বছরের অন্তর্বর্তীকালীন সময় প্রদান করে বলা হয় যে ভারতসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো খাদ্য মজুত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কৃষি ভর্তুকির সীমা অতিক্রম করলেও তা ডব্লিউটিও বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার আওতায় আসবে না।

কিন্তু আট মাসের মাথায় যখন ডব্লিউটিওর সাধারণ পরিষদ বাণিজ্য সহজীকরণ চুক্তি অনুমোদন করে তা বৈশ্বিক আইনে রূপ দেওয়ার কাজটি একেবারে শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে, তখন ভারত ভেটো দিয়ে বসল।

**নেপালকে ১শ' কোটি ডলার ঋণ দেবেন নরেন্দ্র মোদি

নেপালে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়ে দেশটির উন্নয়নের জন্য নতুন করে ১শ' কোটি ডলার স্বল্প সুদের ঋণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

গত রোববার ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে করে নেপাল যান মোদি। রাজধানী কাঠমান্ডুতে পৌঁছার পর সেখানে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা।

দুই দিনের সফরের প্রথম দিন প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার সঙ্গে ৩০ মিনিট ধরে একান্ত বৈঠক করেন মোদি। পরে নেপালের গণপরিষদে দেয়া বক্তব্যে দেশটির উন্নয়নে নতুন করে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার ঘোষণা দেন তিনি।এর আগেও নেপালের জন্য ২৫ কোটি ডলার 'লাইন অব ক্রেডিট' বরাদ্দ দিয়েছিল মোদি সরকার। আগের অর্থবরাদ্দের বাইরে নতুন এই অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানান মোদি।

দীর্ঘ ১৭ বছর পর ভারতের সরকার প্রধান হিসেবে মোদি কাঠমান্ডু সফর করছেন। সফরকালে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য নিয়ে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে দুই দেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

দুই দিনের সফরে নেপালের মাওবাদীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে মোদির বৈঠক কারার কথা রয়েছে বলে রয়টার্স জানায়। নেপাল যাত্রার আগে এক বিবৃতিতে মোদি বলেন, æসফলে ব্যবসা, বিনিয়োগ, জলবিদ্যুৎ, কৃষি ও পরিবেশসহ দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে।"

ক্ষমতা গ্রহণের পর ভুটানে প্রথম বিদেশ সফর করেন মোদি। ওই সফরেও প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন তিনি।

ভারতের সহায়তায় ২০২০ সালের মধ্যে নেপাল ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ ভারতেই রপ্তানি করা হবে।

**দক্ষিণ এশিয়ার স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য শুল্কযুক্ত পণ্য তালিকা সংক্ষিপ্ত করবে পাকিস্তান

দক্ষিণ এশিয়ার স্বল্পোন্নত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সুবিধার্তে সীমান্ত উন্মুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের বাণিজ্য মন্ত্রী খুররাম দস্তগীর গত শনিবার এ খবর জানিয়েছে।

দেশটির দৈনিক ডনের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে বলা হয়েছে, ভুটানে দক্ষিণ এশিয়া সহযোগিতা সংস্থা- সার্কের এক বৈঠকে এ প্রস্তাবনার কথা তুলে ধরেন মন্ত্রী।

এদিকে, সার্কভুক্ত দেশগুলোর জন্য পাকিস্তান তার স্পর্শকাতর পণ্যের তালিকা ১১৬৯টি থেকে কমিয়ে ৯৬৩টি করেছে। এসব পণ্য আমদানিতে প্রতিবেশী দেশগুলোকে শুল্ক গুণতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানিয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ যেমন ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল ও আফগানিস্তানের জন্য এসব পণ্য প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হয়েছে। যদিও স্থানীয় কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষায় কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক বহাল রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে ভারতও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য তার শুল্কযুক্ত পণ্যের তালিকা কমিয়ে ২৫টি করেছে। (তৌহিদ)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040