Web bengali.cri.cn   
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংবাদ---২০১৪/৭/৭
  2014-07-07 18:55:32  cri

১. বাংলাদেশে সরকারি পাটকলে শ্রমিক অসন্তোষ

বাংলাদেশে লোকসানে ভারাক্রান্ত সরকারি ২৬টি পাটকলের শ্রমিকেরা আন্দোলনে নেমেছেন। বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচির কারণে পাটকলগুলোতে উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে।

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)-কে হোল্ডিং কোম্পানি করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে, ২৬টি পাটকলের শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (সিবিএ) সরকারকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় দিয়েছিল। এর মধ্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না-পারায়, বিজেএমসির সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ থেকে সব পাটকলে ধর্মঘট ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। বিজেএমসির সিবিএ সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী বলেন, বিজেএমসিকে হোল্ডিং কোম্পানিতে পরিণত করা হবে আত্মঘাতী। এর ফলে পাটকলগুলো নিয়ে 'হোল্ডিং বাণিজ্য' সৃষ্টি হবে।

বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিজেএমসি প্রায় ৪০০ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে, ৭০০ কোটি টাকার পাটজাত সামগ্রী অবিক্রীত রয়েছে। পাট ব্যবসায়ীদের ২৫০ কোটি টাকা এখনো বকেয়া। দুই সপ্তাহ ধরে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিকের বেতন বন্ধ। আর অর্থাভাবে তাদের ঈদ বোনাস পাওয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

আর্থিক টানাপড়েনের মাঝেই বিজেএমসির পক্ষ থেকে সরকারি পাটকলগুলোর দেনা পরিশোধ, পাট কেনা, শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-বোনাস দেওয়ার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৫০০ কোটি ও দীর্ঘ মেয়াদে ১২০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, বিজেএমসিকে হোল্ডিং কোম্পানি করা না-হলে ওই টাকা পাওয়া যাবে না।

কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলছেন, বিজেএমসিকে হোল্ডিং করার সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত দৈনিক প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি পাটকলগুলোকে হোল্ডিং কোম্পানিতে পরিণত করার সিদ্ধান্ত তাত্ত্বিকভাবে ভালো শোনালেও, তা বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। সরকারি ব্যাংকগুলোকে কোম্পানি করার অভিজ্ঞতা ভালো নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ হয় না এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের আশঙ্কা রয়ে যায়।

এদিকে, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, সরকার এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না, যাতে পাট খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শ্রমিকরা চাকরি হারায়।

উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্র অনুসারে, হোল্ডিং কোম্পানি করা হলে ২৬টি পাটকলের ৪৯ শতাংশ শেয়ার বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেওয়া হবে। এর ফলে পাটকলগুলোকে নিজস্ব আয় ও সম্পদ দিয়ে চলতে হবে।

২. জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়ার সব শর্ত পূরণ করেনি বাংলাদেশ: যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের অবাধ বাজারসুবিধা (জিএসপি) ফিরে পেতে দেশটি যেসব শর্ত দিয়েছিল, তার সবগুলো এখনো পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার। মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের (ইউএসটিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে প্রথম আলো বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানায়।

মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শর্ত পূরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করলেও, শ্রমিকদের অধিকার ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই আরও কাজ করতে হবে। মার্কিন জিএসপি উপকমিটি ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের অগ্রগতির পরবর্তী পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট দেবে।

উল্লেখ্য, শ্রমিক অধিকার ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার নাজুক পরিস্থিতির কারণে ২০০৩ সালের জুনে ওবামা প্রশাসন সে দেশে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি-সুবিধা সাময়িকভাবে স্থগিত করে। পরে, জিএসপি ফিরে পেতে বাংলাদেশ সরকারকে কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে বলা হয়।

৩. তাইওয়ানে ওষুধ রপ্তানি করবে বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মা

তাইওয়ান ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (টিএফডিএ)-এর কাছ থেকে 'গুড ম্যানুফেকচারিং প্র্যাকটিসেস সার্টিফিকেট' পেয়েছে বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্ততকারী কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মা। ফলে এখন থেকে তাইওয়ানে কোম্পানিটি ওষুধ রপ্তানি করার সুযোগ পাবে। বৃহস্পতিবার বেক্সিমকো ফার্মার পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি প্রাথমিকভাবে ওরাল সলিড, ইনহেলার ও স্টেরিল আই ড্রপের জন্য অনুমোদন পেয়েছে। এতে আরো বলা হয়, বর্তমানে বেক্সিমকো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। ইতোমধ্যে তারা এজিইএস (ইইউ), টিজিএ (অস্ট্রেলিয়া) এবং এএনভিআইএসএ-সহ (ব্রাজিল) আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে জিএমপি (গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাককটিসেস) সার্টিফিকেট পেয়েছে।

৪. চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে কনটেইনারে আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে কনটেইনার পরিবহন গত অর্থবছরের চেয়ে বেড়েছে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সংখ্যার হিসেবে আগের বছরের তুলনায় এ বছর দেড় লক্ষাধিক কনটেইনার বেশি হ্যান্ডলিং করেছে বন্দরটি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী এবং খালি কনটেইনার পরিবহন হয় ১৬ লাখ ২৫ হাজার। অন্যদিকে, আগের বছর ২০১২-১৩ অর্থবছরে পরিবহন হয় ১৪ লাখ ৬৮ হাজার কনটেইনার। বন্দরের আয়ের সবচেয়ে বড় খাত হলো কনটেইনার পরিবহন। প্রাপ্ত হিসেব অনুসারে, প্রতিবছর বন্দরের মোট আয়ের প্রায় ৫৫ শতাংশ আসে কনটেইনার পরিবহন খাতে।

এদিকে, সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব এখনো চূড়ান্ত করেনি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে ২০১২-১৩ অর্থবছরের অনিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী, বন্দরের মোট আয় হয়েছে এক হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে কনটেইনার ও পণ্য পরিবহন খাত থেকে এসেছে এক হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। এই টাকার মধ্যে শুধু কনটেইনার খাতে আয় হয়েছে প্রায় ৮৭২ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, কনটেইনার পরিবহনের হার বৃদ্ধিকে অর্থনৈতিক অগ্রগতির নির্দেশক হিসেবে দেখা হয়। কারণ, রপ্তানির প্রায় পুরোটাই কনটেইনারে পরিবহন হয়। আবার কনটেইনারে আমদানি পণ্যের মধ্যে আছে পোশাকশিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি।

৫. প্রথমবারের মতো আগের বছরের তুলনায় কম রেমিটেন্স এলো বাংলাদেশে

বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কোনো একটি অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় কম রেমিটেন্স এসেছে। বিদায়ী ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে এক হাজার ৪২২ কোটি ৭০ লাখ (১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ কম। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এক হাজার ৪৪৬ কোটি (১৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিল প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকা শক্তিশালী হওয়ায় গত বছর রেমিটেন্স তুলনামূলকভাবে কম এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

৬. ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির দাম পাঁচ দিনে ৩৬ পয়সা বাড়লো

গেল সপ্তাহে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রা রুপির দাম বেড়েছে ৩৬ পয়সা। বিগত দেড় মাসে সাপ্তাহিক হিসেবে এটিই ছিল রুপির সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি। আগামী ১০ জুলাই মোদী সরকারের প্রথম বাজেটে অর্থনীতির উন্নয়নের রূপরেখা স্পষ্ট হবে, এই প্রত্যাশাই এর কারণ বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। এর আগে গত ১৬ মে শেষ হওয়া সপ্তাহে রুপির দাম ১২৫ পয়সা বেড়ে গিয়েছিল। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার মুদ্রাবাজার বন্ধের সময় এক ডলার গিয়ে দাঁড়ায় ৫৯.৭২ রুপিতে।

৭. আইএমএফের কাছ থেকে চতুর্থ দফায় ৫৫৬ মিলিয়ন ডলার ঋণ পেল পাকিস্তান

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর কাছ থেকে চতুর্থ দফার ৫৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ হাতে পেয়েছে পাকিস্তান। প্রতিষ্ঠানটি গত মাসে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পারফরমেন্স মূল্যায়ণ করার পর সম্প্রতি এ অর্থ ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ঋণের এ অর্থপ্রাপ্তির পর পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বেড়ে ১৪৮০ কোটি ডলারে দাঁড়ালো। উল্লেখ্য, দেশটির অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় গত বছর আইএমএফ ৬৮০ কোটি ডলারে ঋণ মঞ্জুর করে।

৮. পাকিস্তান এয়ারলাইন্সকে বিমান ভাড়া দিতে অস্বীকার করলো বিদেশি কোম্পানি

চারটি বিদেশি বিমান চলাচল কোম্পানি নিরাপত্তাজনিত কারণে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সকে (পিআইএ) 'ওয়েট লিজ' ভিত্তিতে বিমান দিতে অস্বীকার করেছে। পূর্ব ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার এই এয়ারলাইন্সগুলো আগে পিআইএ-কে চারটি বিমান ভাড়া দিতে রাজি হলেও, করাচি বিমানবন্দরে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর মুখ ফিরিয়ে নেয়। জুনের শুরুতে পিআইএ বিমান ভাড়ার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করলে ওই বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছিল।

পিআইএ-র একটি সূত্র পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডনকে জানায়, 'ড্রাই লিজ' ভিত্তিতে বিমান পেতেও বেগ পেতে হচ্ছে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সকে। উল্লেখ্য, 'ওয়েট লিজ' পদ্ধতিতে, বিমানের পাশাপাশি পাইলট ও কেবিন ক্রু-ও সরবরাহ করা হয়ে থাকে এবং বিমান রক্ষণাবেক্ষণ সেবাও পাওয়া যায়। অন্যদিকে, 'ড্রাই লিজ' পদ্ধতিতে শুধু বিমান ভাড়া নেওয়া যায়।

(আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040