Web bengali.cri.cn   
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতিবিষয়ক সংবাদ --- ২০১৪/৬/২৩
  2014-06-23 20:32:06  cri

** বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমস্যা, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যত নিয়ে ঢাকায় ২১ ও ২২ জুন অনুষ্ঠিত হয় একটি সম্মেলন। রাজধানীর রেডিসন হোটেলে বাংলাদেশ ইকোনমিস্ট ফোরাম (বিইএফ) এ সম্মেলনের আয়োজন করে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল: 'ভিশন ২০৩০: অর্থনৈতিক নীতিকাঠামো ও বহুদলীয় গণতন্ত্রে কৌশল নির্ধারণ'।

সম্মেলনে দেশ-বিদেশের অর্থনীতিবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা এবং বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এতে তারা বাংলাদেশের ভবিষ্যত সম্ভাবনা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। এ ছাড়া, সম্মেলনে রাজস্বনীতি, শেয়ারবাজার, বাণিজ্য, বৈদেশিক সহায়তা, অবকাঠামো, দারিদ্র্য বিমোচন, মানব উন্নয়নের কৌশল ও নীতি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে পেশাজীবী অর্থনীতিবিদদের নিয়ে ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে 'বিইএফ' গঠিত হয়। এটিই ছিল প্রতিষ্ঠানটির প্রথম অর্থনীতিবিষয়ক সম্মেলন। বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট যৌথভাবে এই সম্মেলনের পৃষ্ঠপোষকতা করে।

** পণ্য বিক্রিতে রসিদ ব্যবহার ও মূল্যতালিকা টাঙানোর নির্দেশনা দিল বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নির্দেশনা অনুসারে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনাবেচার ক্ষেত্রে খুচরা বিক্রেতা, পাইকার ও পরিবেশক—এই তিনটি পর্যায়েই পাকা রসিদ ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া পণ্যমূল্য টাঙিয়ে রাখতে হবে দোকানের প্রকাশ্য স্থানে।

মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ ধরনের পাঁচটি নির্দেশনার কথা জানিয়ে দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে ঢাকার দুই (উত্তর ও দক্ষিণ) সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে বলেও চিঠিতে জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ও সরবরাহ ঠিক রাখতে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বিভিন্ন পত্র জারি করা হলেও তা পরিপালিত হচ্ছে না। আইন অমান্য করে কোনো কোনো ব্যবসায়ী বরং ভোক্তা সাধারণের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করছে।

বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের উদ্দেশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে পাঁচটি বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছে সেগুলো হচ্ছে: দোকানের প্রকাশ্য জায়গায় পণ্যমূল্য প্রদর্শন করা, কেনাবেচায় পাকা রসিদের ব্যবহার, এসব রসিদ রক্ষণ করা, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) অনুযায়ী পণ্য কেনাবেচা করা এবং বাজার পরিদর্শনকারী দল বা ভ্রাম্যমাণ আদালতকে চাহিবামাত্র পাকা রসিদ দেখানো। যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ নির্দেশনা মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ও মোবাইল কোর্ট আইন এবং ১৯৫৬ সালের কন্ট্রোল অব এসেনশিয়াল কমোডিটিস অ্যাক্ট অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অমান্যকারীদের ব্যবসায়িক লাইসেন্স (নিবন্ধন) সাময়িকভাবে বাতিল এবং পণ্য বাজেয়াপ্ত করার কথাও বলা হয়েছে।

এদিকে, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র অনুসারে, ২০১০ সালের এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত অভিযান করে আট কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় আড়াই কোটি টাকা জরিমানাই হয়েছে মোড়কে উল্লেখিত দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করার অভিযোগে। কিন্তু, কারও লাইসেন্স বাতিল বা কারও বিরুদ্ধে মামলা করার উদাহরণ তৈরি হয়নি এখনো।

** বাংলাদেশের ৭৪টি পণ্যকে শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা দিতে সম্মত হয়েছে নেপাল। বিনিময়ে বাংলাদেশের কাছ থেকেও ১০৮টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধার বিষয়ে সম্মতি আদায় করে নিয়েছে কাঠমান্ডু। নেপালে বাংলাদেশের দূতাবাসের প্রথম সচিব (ট্রেড প্রমোশন অ্যান্ড কালচার) খান মো. মইনুল হোসেন সম্প্রতি বার্তা সংস্থা বাসসকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে দেওয়া শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় পণ্যের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। উচ্চপর্যায়ের আলোচনার পর উভয় দেশ এ বিষয়ে শিগগিরই একটি চুক্তি সই করতে পারে বলেও তিনি জানান।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবির) তথ্য অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে নেপালে দুই কোটি ৬৪ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। অন্যদিকে, নেপাল থেকে দেশে আমদানি হয়েছে তিন কোটি ৫৬ লাখ ডলারের পণ্য। বাংলাদেশ প্রধানত যেসব পণ্য নেপালে রপ্তানি করে, তার মধ্যে আছে কৃষিপণ্য, রাসায়নিক পণ্য, কাঁচা পাট, ওষুধ, তুলা, সোলার ব্যাটারি, তৈরি পোশাক, প্রসাধনসামগ্রী ও প্লাস্টিকের ফার্নিচার। অন্যদিকে, নেপাল থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে পানীয়, ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম, প্লাস্টিকের পণ্য, রাবার, ভ্রমণ-সম্পর্কিত পণ্য, কাঠের মণ্ড ইত্যাদি। উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের পর নেপালের সঙ্গেই বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সবচে ভালো।

** পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে জাতীয় বিদ্যুত গ্রিডে অতিরিক্ত ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত যোগ করার মাধ্যমে দেশ থেকে লোডশেডিং পুরোপুরি দূর করা হবে। সম্প্রতি দেশটির পার্লামেন্টে মন্ত্রী এ তথ্য জানিয়ে বলেন, দেশে বর্তমানে পিক আওয়ারে বিদ্যুত ঘাটতির পরিমাণ সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াট। তিনি জানান, সরকার সিস্টেম লস ১৬ শতাংশ থেকে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে। গ্যাস ও বিদ্যুত চুরি কমিয়ে আনতে সরকার ব্যাপকভিত্তিক অভিযানও শুরু করেছে বলেও তিনি জানান।

পাক অর্থমন্ত্রী সংসদকে আরো জানান, দেশে অশোধিত তেলের উত্পাদন এক বছরে ৭২০০০ ব্যারেল থেকে বেড়ে এক লাখ ব্যারেলে উন্নীত হয়েছে। তেলের মূল্য নিম্নতম পর্যায়ে রাখতে সরকার ২১০০ কোটি রুপি ভর্তুকি দিয়েছে বলেও জানান পাক অর্থমন্ত্রী।

** এদিকে, পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ সম্প্রতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ৪.৩ ট্রিলিয়ন রুপির অর্থবিল পাস করেছে। নয়দিনের আলোচনা শেষে, ১৪৯ পৃষ্টার অর্থবিল সংসদে পাস হয়। প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের পর বিলটি পয়লা জুলাই থেকে কার্যকর হবে। এবারের অর্থবিলে দেশের সকল প্রদেশের জন্য ৩৬০০ কোটি রুপির বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এদিকে, বাজেট পাস করায় অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার পাক পার্লামেন্টকে অভিনন্দিত করে জানান, বর্তমানে দেশে বিদেশি মুদ্রার মজুত আছে ১৪২০ কোটি মার্কিন ডলার।

** এখন থেকে ভারতের রাষ্ট্রায়াত্ত সংস্থাগুলোকে বাজারে কমপক্ষে মোট ২৫% শেয়ার ছাড়তে হবে। সম্প্রতি দেশটির বাজার নিয়ন্ত্রক 'সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া' (সেবি) নথিভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির শেয়ার মালিকানা নিয়ে এই সিদ্ধান্তই নিয়েছে। ফলে এখন থেকে কেন্দ্রীয় সরকার নিজের হাতে ৭৫ শতাংশের বেশি শেয়ারের মালিকানা রাখতে পারবে না। যে-সব রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় কেন্দ্রের বাড়তি মালিকানা রয়েছে, তিন বছরের মধ্যে সেগুলির বিলগ্নিকরণ সেরে ফেলতে হবে। এতদিন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে কমপক্ষে ১০% শেয়ার বাজারে ছাড়লেই চলত। সেবি চেয়ারম্যান ইউ কে সিংহ জানান, আর্থিক সংস্কারের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

এ প্রসঙ্গে ভারতীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন এক শীর্ষকর্তা আনন্দবাজারকে জানান, সেবি-র নির্দেশ মেনে ৩৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ খাতে কেন্দ্রীয় কোষাগারে ৬০ হাজার কোটি টাকা আসতে পারে। এদিকে, আরও বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার বাজারে এলে যে-সব সাধারণ মানুষ বেশি ঝুঁকি না-নিয়ে শেয়ারে লগ্নি করতে চান, তাঁরাও আগ্রহী হবেন বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন।

** শ্রীলংকার দক্ষিণাঞ্চলের আলুথগামা ও বারুওয়ালার সাম্প্রতিক অশান্ত পরিস্থিতি দেশটির পর্যটন শিল্পের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। দেশটির পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত সংস্থাগুলো এ তথ্য জানিয়েছে। সাধারণত মে-অক্টোবর সময়কালে মধ্যপ্রাচ্যের পর্যটকরা শ্রীলংকায় বেশি বেড়াতে আসেন। কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলের অশান্ত পরিস্থিতির কারণে এবার ওই অঞ্চল থেকে পর্যটক আসার হার কমে গেছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১২ সালে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ১৩২,১৬৯ জন পর্যটক শ্রীলংকায় বেড়াতে এসেছিলেন এবং ২০১৩ সালে এ সংখ্যা বেড়ে ১৮৩,০৯৭ জনে উন্নীত হয়। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে শ্রীলংকায় পর্যটক এসেছে ২৮,৭০৮ জন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯.৬ শতাংশ বেশি।

** শ্রীলংকার চা বোর্ড আন্তর্জাতিক চা বাণিজ্যের বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব মাইক বুন্সটন 'ওবিই'-কে যুক্তরাজ্যে শ্রীলংকার 'সম্মানসূচক চা দূত' নিয়োগ করেছে। আন্তর্জাতিক চা শিল্পের শুভেচ্ছা দূত মাইক বুন্সটন ১৯ বছর ধরে আন্তর্জাতিক চা কমিটির সম্মানসূচক সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০২ সালে অবসর নিলেও, তিনি চা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাথে নানাভাবে জড়িত থাকেন। ২০০৫ সালে তিনি 'চা উত্পাদক-ভোক্তা ফোরাম' আয়োজন করেন। আন্তর্জাতিক চা শিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য ব্রিটেনের রাণী তাকে 'অর্ডার অব দা ব্রিটিশ এমপায়ার' (ওবিই)-এ ভূষিত করেন।

(আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040