Web bengali.cri.cn   
ভাষা আন্দোলনের শহীদ মিনার
  2012-02-17 18:37:35  cri

শহীদ মিনার বাঙালির জাতীয় চেতনা,ভাষা ও সংস্কৃতির চিরন্তন প্রতীক।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে এবং গণিত ভবনের বিপরীত দিকে শহীদ মিনার অবস্থিত।শহীদ মিনারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস।১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়।তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী বাঙালিরা ছিল পুরো পাকিস্তানেই সংখ্যাগরিষ্ঠ।কিন্তু বাঙালির দাবীকে উপেক্ষা করে উর্দুকেই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করা হয়। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় বাংলার ছাত্র জনতা আন্দোলন শুরু করে। ভাষাবিদ ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ,প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম, গণিতবিদ ড.কাজী মোতাহার হোসেন,সংসদ সদস্য ধীরেন দত্তসহ বাংলার দেশপ্রেমিক বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের সমর্থনে ছাত্র জনতার আন্দোলন চলতে থাকে।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ।শহীদ হন বরকত,রফিক,জব্বার,সালাম,শফিউর,অহিউল্লাহসহ নাম না জানা অনেকে।শহীদ স্মৃতিকে শ্রদ্ধা জানাতে ২২ ফেব্রুয়ারিতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করেন।ভাষা আন্দোলনের ছাত্রকর্মীরা পুরান ঢাকার কয়েকজন রাজমিস্ত্রীর সহায়তায় রাতের বেলা এই মিনার নির্মাণ করেন।শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ কথাটি হাতে লিখে এই শহীদ মিনারে প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে দেন তাঁরা।চারদিন পর পুলিশ এটি ভেঙ্গে দেয়।দু'বছর পর ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়।আগের শহীদ মিনারের স্থানে অস্থায়ীভাবে একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।এর উদ্বোধন করেন নাট্যগুরু নুরুল মোমেন।সেই সঙ্গে এই স্থানে একটি স্থায়ী মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্থপতি হামিদুর রহমান ১৯৫৭ সালে শহীদ মিনারের নির্মাণ শুরু করেন।স্থপতি হামিদুর রহমান ও ভাস্কর নভেরা আহমেদের তত্বাবধানে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ চলতে থাকে।কিন্তু ১৯৬০ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হলে শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়।এই অসমাপ্ত শহীদ মিনার ১৯৬৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালি বুদ্ধিজীবী,ছাত্র ও সাধারণ জনতার উপস্থিতিতে উদ্বোধন করা হয়।ভাষা শহীদ আবুল বরকতের মা এই শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী সেনা বাহিনী শহীদ মিনার ধ্বংস করে দেয়।১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বরে বিজয় অর্জনের পর ১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে তত্কালীন রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরির নেতৃত্বে গঠিত কমিটি আবার শহীদ মিনার নির্মানের জন্য কাজ শুরু করে।দ্রুততম সময়ে নির্মাণের জন্য হামিদুর রহমানের মূল নকশাকে পুরোপুরি অনুসরণ না করে শহীদ মিনারের বেদী ও মূল কাঠামো শুধু নির্মাণ করা হয়।যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনারা যে ম্যুরালগুলো ধ্বংস করেছিল তা আর গড়ে তোলা হয়নি।মূল পরিকল্পনায় থাকা জাদুঘর,লাইব্রেরি ও অন্যান্য অংশও বাদ দেওয়া হয়।১৯৮৩ সালে শহীদ মিনারে আরো কিছু অংশ নির্মান করে বর্তমান চেহারায় আনা হয়।বর্তমানে শহীদ মিনারে তিন স্তর বেদীর উপর মূল কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে।মাঝখানে রয়েছে ঈষত্ অবনত সবচেয়ে বড় একটি স্তম্ভ।এর দু পাশে দুটি করে চারটি স্তম্ভ রয়েছে।বড় স্তম্ভটি দেশমাতা এবং ছোট স্তম্ভগুলো দেশমাতার সন্তানের প্রতীক।২০১০ সালের ২৫ আগস্ট বাংলাদেশের হাইকোর্ট শহীদ মিনার চত্বরে একটি জাদুঘর ও লাইব্রেরি স্থাপনের জন্য জনকর্মবিভাগের প্রতি নির্দেশ জারি করে।

প্রতি বছর একুশে ফেব্রয়ারিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়। মাতৃভাষা দিবসে শহীদ মিনারে জনতার ঢল নামে।রাষ্ট্রীয় প্রধানদের পাশাপাশি সরকারি বেসরকারি সব সংগঠন এবং অসংখ্য মানুষ শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।শহীদ মিনার চত্বর এবং পুরো সড়ক জুড়ে আঁকা হয় আল্পনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আল্পনা আঁকেন। ঢাকামেডিকেল কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত অনুষদের সীমানা প্রাচীরে লেখা হয় বাংলা সাহিত্যের গুণীজনদের বাণী ।একুশের প্রথম প্রহর অর্থাত্ রাত বারোটা থেকেই লাখো মানুষের ঢল নামে শহীদ মিনারেএবং সারাদিন ধরেই শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

তবে শুধু একুশে ফেব্রুয়ারিতেই নয়।সারা বছর ধরেই শহীদ মিনারের চত্বরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড চলে।ঢাকা মহানগরের সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হলো শহীদ মিনার।মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় জীবন উত্সর্গকারী মহান ভাষা শহীদদের স্মৃতিতে নির্মিত শহীদ মিনার মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির অধিকার রক্ষার অনন্য প্রতীক।(শান্তা)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040