Web bengali.cri.cn   
বাংলায় বসন্ত বরণ
  2012-02-10 19:18:19  cri
সুপ্রাচীন কাল থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষ বিভিন্নভাবে বসন্ত ঋতুকে বরণ করার জন্য বিভিন্ন উত্সবের আয়োজন করেছে।বাংলা বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী ফাল্গুন চৈত্র এ দু'মাস বসন্তকাল ।এ সময় বাংলাদেশের প্রকৃতিতে নতুন রূপ দেখা দেয় ।শীতের শেষে গাছে গাছে দেখা দেয় কচি সবুজ পাতা।দক্ষিণ দিক থেকে বসন্তের বাতাস সমীরণ বয়ে যায় ।বসন্তে চন্দ্রমল্লিকা,গাঁদা,মালতী,মাধবী,বকুলসহ বিভিন্ন ফুল ফোটে ।আমের মুকুলের সৌরভে ভরে ওঠে চারদিক ।বসন্তকে বরণ করার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম উত্সবের আয়োজন করা হয় ।পহেলা ফাল্গুনে বা ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় পালন করা হয় বসন্ত-বরণ উত্সব।ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত চারুকলা ভবনের প্রাঙ্গণে বসন্ত বরণের জন্য দিনভর উত্সব চলে ।চারুকলার বকুলতলায় সকালে বসন্ত-বন্দনার মাধ্যমে শুরু হয় উত্সব ।মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে বসন্তের বন্দনা করা হয়।এর পর নাচ, গান ও কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে বসন্ত উত্সব পালন করা হয় ।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের লেখা গান ও কবিতা এ অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ।ছায়ানট,উদীচীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে থাকে।বসন্ত উত্সবের প্রধান অনুষঙ্গ হলো ফুল।দেশের বৃহত্তম ফুলের মার্কেট শাহবাগ ও কাটাবনের ফুলের দোকানগুলোতে এ ঊপলক্ষে বিপুল পরিমাণে ফুল বিক্রি হয়।গাঁদা,রজনীগন্ধা ও গোলাপফুলের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি।পহেলা ফাল্গুন বা বসন্তের প্রথম দিনে বাঙালি নারীরা বাসন্তী বা হলুদ রঙের শাড়ি পরে । অনেকেই তাজা ফুলের অলংকার ব্যবহার করে অথবা চুলে জড়িয়ে নেয় গাঁদা ফুলের মালা ।ঢাকার শাহবাগ এদিন বাসন্তী রং শাড়ি পরা নারী ও ফুলের সমারোহে রঙীন হয়ে ওঠে ।বাংলা একাডেমির বইমেলা,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস,ছাত্রশিক্ষক কেন্দ্র,চারুকলাসহ পুরো শাহবাগ এলাকাতেই অসংখ্য মানুষের ভিড় জমে ।বিশেষ করে বাংলা একাডেমির বইমেলা প্রাঙ্গণ ফুল ও হলুদ রংএর পোশাকের আভায় বাসন্তী রং ধারণ করে। এছাড়া পুরো বসন্তকালজুড়েই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে বসন্তকালীন কবিতা পাঠ,গান ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বসন্ত বরণ উত্সব বিখ্যাত।এদিন নাচ,গান, কবিতা আবৃত্তি ছাড়াও বিশেষভাবে হোলির উত্সব হয় ।ছাত্রছাত্রীরা পরষ্পরকে আবির মাখানোর মধ্য দিয়ে উত্সব করেন ।বসন্তকালে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে দোলপূর্ণিমা ও রাশ উত্সব চলে ।দোল ও রাশ হলো বিশেষভাবে শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধার বৃন্দাবনলীলা স্মরণে পালন করা উত্সব।মাঘের শেষ বা ফাল্গুনের শুরুতে পূর্ণিমায় শ্রীকৃষ্ণ স্মরণে কীর্তন চলার পর সকাল থেকে শুরু হয় রং খেলা।একে হোলিখেলাও বলা হয়।আবির হলো বিশেষ ধরণের লাল রং।এই আবির ছড়িয়ে চলে রং খেলা ।দোল ও রাশ উত্সব মূলত বাংলার বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের উত্সব।রাশ উত্সব ও দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে।বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের ভবানীপুরে রাশমেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজ শিল্পীদের সমাগম ঘটে ।লোকজ গায়করা কীর্তনসহ বিভিন্ন লোকজসংগীত পরিবেশন করেন।পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটাতেও রাশপূর্ণিমায় মেলা বসে।সমুদ্র সৈকতে বাসন্তী আমেজ,পূর্ণিমার আলো,মেলায় আগত লোকশিল্পীদের গান—সব মিলে এক অপূর্ব অনুভূতির সৃষ্টি হয়।বসন্তকালের এসব রাশমেলায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তুর পাশাপাশি হস্তশিল্পজাত অনেক সামগ্রী বিক্রি হয়।দূর দূরান্ত থেকে লোকজ কারুশিল্পীরা রাশমেলায় নিয়ে আসেন তাঁদের পশরা।সাতক্ষীরা জেলার শ্মশানঘাট মেলা,দেবহাটা রাশমেলা,ফরিদপুরের রাজবাড়ি,কাটুনিয়া,মুন্সীগঞ্জ জেলার রাশমেলা বিখ্যাত।গোপালপুর ও শ্যামনগরের দোলমেলাও বিখ্যাত।ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপ ও নদীয়ায় বসন্তকালে রাশমেলা বসে।কৃষ্ণনগরের রাশমেলা ও দোল উত্সব তিনশ'বছরেরও বেশি পুরোনো।কালনার রাশমেলার বয়সও তিনশ বছরের বেশি।কুচবিহারের করিমপুর,কাটিহার,কোরা ও লাভপুরের রাশমেলাও ঐতিহ্যবাহী।শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর স্মরণে বসন্তকালে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে চড়কপূজার আয়োজন করা হয়।চড়ক উপলক্ষে বিভিন্ন অঞ্চলে বসে মেলা।চড়কের মেলায় সন্ন্যাসীরা বিভিন্ন রকম খেলা ও বাজির কৌশল পরিবেশন করেন।মেলায় কীর্তন,যাত্রা,পালাগান ও পুতুল নাচের আসর বসে।পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন স্থানে এ সব মেলায় ঝুমুরদল নাচ গান পরিবেশন করে।রাশমেলায় কবিগানের আসরও খুব জনপ্রিয়।

এভাবে ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন উত্সবের মাধ্যমে বাংলার জনজীবনে বরণ করে নেওয়া হয় বসন্ত ঋতুকে।বসন্তকালীন এসব উত্সব বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং বাঙালীর একান্ত নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য।(শান্তা)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040