Web bengali.cri.cn   
অজন্তার বিষ্ময়কর সৃষ্টি
  2012-01-17 19:08:55  cri

পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুহাচিত্র ও ভাস্কর্যের জন্য ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো অজন্তা গুহাকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের অন্তর্ভুক্ত করে।ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের আওরঙ্গবাদ জেলায় অজন্তা গ্রামের পাশেই পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত ২৯টি গুহায় রয়েছে অপূর্ব সব ভাস্কর্য,দেয়ালচিত্র বা ফ্রেসকো এবং পাথর খোদাই কাজ।পাহাড়ের গায়ে পাথর কেটে এই গুহাগুলো সৃষ্টি করা হয়েছে ।এই গুহা-মন্দিরগুলো দুটি পর্বে নির্মিত হয় ।১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১০০ খ্রিস্টাব্দ সময়ে ৯,১০,১২ এবং১৫ নম্বর গুহা-মন্দির নির্মিত হয়।সাতবাহন রাজবংশের সময় হীনযান বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী এখানে গৌতম বুদ্ধের জীবনের বিভিন্ন ঘটনার ভিত্তিতে সৃষ্টি করা হয় ম্যুরাল,ফ্রেসকো ও ভাস্কর্য ।এখানে দ্বিতীয় পর্বের কাজ হয় ৪৬০ থেকে ৪৮০ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ২০ বছর সময়ের মধ্যে।ভক্তক রাজবংশের সম্রাট হরিসেনার রাজত্বকালে ২৩টি গুহায় মন্দির নির্মিত হয়।গুহাগুলোতে শিল্পীরা রীতিমত পরষ্পরের সাথে প্রতিযোগিতা করে গুহার দেয়ালে ফুটিয়ে তোলেন তাঁদের শিল্পকর্ম যা মানব সভ্যতার শিল্পকলার ইতিহাসের এক অনন্য সম্পদে পরিণত হয় ।৪৮০ খ্রীস্টাব্দে সম্রাট হরিসেনার রাজত্বের অবসান হলে মন্দিরগুলো ধীরে ধীরে পরিত্যাক্ত হয় ।বিস্মৃতির অন্ধকারে তলিয়ে যায় এই অতুল কীর্তি ।অরণ্য গ্রাস করে নেয় পুরো এলাকা ।গুহাগুলো পরিণত হয় সাপ ও অন্যান্য বন্য জন্তুর আবাস স্থলে ।শতাব্দীর পর শতাব্দী কেটে যায়।১৮১৯ সালে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ব্রিটিশ সেনা অফিসার জন স্মিথ জঙ্গলে বাঘ শিকার করতে গিয়ে প্রথমে ১০ নম্বর গুহাটি খুঁজে পান । বাদুর, সাপ আর অন্যান্য ছোট বড় জন্তুর ভয় সত্ত্বেও জন স্মিথ গুহার শিল্প সম্পদ দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান ।এরপর এখানে শুরু হয় প্রত্নতাত্বিক অভিযান।

গুহা মন্দিরগুলোতে দুটি বা তিনটি প্রবেশদ্বার রয়েছে । একটি মূল প্রবেশদ্বার ও অন্যগুলো পার্শ্বদ্বার হিসেবে ব্যবহৃত হত ।দুটি দরজার মাঝখানে রয়েছে চারকোণা জানালা ।ভিতরে রয়েছে অনেকগুলো স্তম্ভ ।মন্দিরের সামনে চত্বরে একসময় ছিল অনেক ভাস্কর্য । এর ধ্বংসাবশেষ এখনো সংরক্ষিত রয়েছে ।প্রথম গুহায় রয়েছে বৌদ্ধ জাতক কাহিনীর বিভিন্ন ঘটনার ভাস্কর্য ।গুহার দেয়ালে গৌতম বুদ্ধের একটি বিশাল মূর্তি উত্কীর্ণ রয়েছে । ধর্মচক্রপ্রবর্তন মুদ্রায় এই বুদ্ধ মূর্তিটি শিল্প নৈপূণ্যে অনবদ্য ।গুহার অন্যান্য দেয়ালে রয়েছে জাতক কাহিনীর ফ্রেসকো ।গুহার স্তম্ভগুলো কারুকার্যশোভিত । অন্যান্য গুহার ভিতরেও একই ভাবে বোধিস্বত্তের বিভিন্ন রূপের ভাস্কর্য ও দেয়ালচিত্র রয়েছে । এছাড়া রয়েছে মঞ্জুশ্রীসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ দেবদেবীর মূর্তি ।গুহা গুলোর অলংকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে লতাপাতা, মানুষ,অপ্সরা,যক্ষ,নাগ এবং বিভিন্ন বাস্তব ও কাল্পনিক প্রাণীর মূর্তি ও ফ্রেসকো ।গুহাগুলোর মেঝে ছাড়া দেয়ালের ও ছাদের প্রতিটি অংশে রয়েছে কারুকার্য,মূর্তি, ফ্রেসকো ও ম্যুরাল ।দ্বিতীয় গুহার প্রবেশদ্বার অন্য গুহাগুলোর চেয়ে একটু অন্যরকম ভাবে নির্মিত । কারুকার্যও বেশি ।গুহা গুলোর সামনে রয়েছে বারান্দা ।বারান্দার ছাদ ও স্তম্ভগুলো দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যে শোভিত ।প্রতিটি গুহার মাঝখানে রয়েছে প্রশস্ত জায়গা বা হল ।হলগুলোর চারদিকে রয়েছে বড় চারটি স্তম্ভ ।ছাদ যেন ধ্বসে না পড়ে সে জন্য রয়েছে পাথরের খিলান ।চতুর্থ গুহাটি বেশ বড় ।তবে এর কিছু অংশের নির্মাণ অসমাপ্ত রয়েছে ।চতুর্থ গুহায় বোধি স্বত্ব অবলোকিতেশ্বরের বিভিন্ন মুর্তি উত্কীর্ণ রয়েছে । অজন্তায় গুহাচিত্রের জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে তা পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের গুহাচিত্রের পদ্ধতির চেয়ে সম্পূর্ণ পৃথক ।ভারতের প্রাচীনতম মন্দিরচিত্রেরও অন্যতম হলো অজন্তার মন্দির চিত্র ।পাহাড় কেটে কিভাবে এই মন্দিরগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল তা আজও স্থাপত্যজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক বড় বিষ্ময়।প্রতিদিন দেশ বিদেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক আওরঙ্গবাদ শহর থেকে একটু দূরে অজন্তার ভুবনবিখ্যাত মন্দির দেখতে আসেন ।প্রাচীন ভারতীয় শিল্পীদের অপূর্ব শিল্প প্রতিভায় বিষ্ময়ে বিমুগ্ধ হন তাঁরা ।(শান্তা)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040