Web bengali.cri.cn   
সাবাশ বাংলাদেশ
  2012-03-23 16:56:15  cri

আজ আপনাদের শোনাবো ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতীকী ভাস্কর্য সাবাশ বাংলাদেশের কথা।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এই ভাস্কর্যটি অবস্থিত।বাংলাদেশের বিখ্যাত স্থপতি শিল্পী নিতুন কুন্ডু এই ভাস্কর্যের নির্মাতা।সাবাশ বাংলাদেশ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্ ভাস্কর্য।বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের যে প্রতীকি ভাস্কর্যগুলো রয়েছে তার মধ্যে প্রকাশভঙ্গীর সরলতা,গতিময়তা,মুক্তিযুদ্ধের চেতনার তেজস্বী প্রকাশ এবং নন্দনতাত্বিক দিক থেকে এই ভাস্কর্যটি অনবদ্য ।

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় স্বতন্ত্র ভূমিকা।ভাষাআন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন,ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান এবং ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের প্রতিটি গণ আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিক্ষকরা গৌরবময় সাহসী ভূমিকা রেখেছেন।১৯৬৯ সালে তত্কালীন পাকিস্তান বিরোধী গণ আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিক্ষকরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।ছাত্রদের উপর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের প্রতিবাদ জানানোর সময় সেনাদের গুলিতে শহীদ হন অধ্যাপক ড.শামসুজ্জোহা।১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ নিরস্ত্র বাঙালির উপর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে রাজশাহী শহরের পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র শিক্ষক কর্মচারী শহীদ হন। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্প স্থাপন করে হানাদার বাহিনী।মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ গ্রামবাসীর ওপর নির্যাতন নিপীড়ন চালানো হয় এই ক্যাম্পে।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হবিবুর রহমান,অধ্যাপক সুখরঞ্জন সমাদ্দার,অধ্যাপক মীর আবদুল কাইয়ুমসহ অনেক শিক্ষক,কর্মকর্তা কর্মচারী ও ছাত্র হানাদার বাহিনীর নির্যাতনে শহীদ হন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি স্মারক ভাষ্কর্য নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।সিনেট ভবনের দক্ষিণে ভাস্কর্য নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হয়। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ১৯৯১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি প্রখ্যাত শিল্পী নিতুন কুন্ডু এই ভাস্কর্যের নির্মাণ কাজ শুরু করেন।নির্মাণ কাজ শেষ হলে ভাস্কর্যের ফলক উন্মোচন করেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম।

৪০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছে।পুরো ভাস্কর্যটি একট বিশাল বেদীর ওপর স্থাপিত।কয়েকধাপ সিঁড়ি দিয়ে ভাস্কর্যের মূল বেদীতে উঠতে হয়।ভাস্কর্যের কেন্দ্রীয় অংশে রয়েছে দু'জন বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতি।একজন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা রাইফেল হাতে এগিয়ে যাওয়ার ভঙ্গিতে বাঁ পা বাড়িয়ে দিয়েছেন।তাঁর এক হাতে রাইফেল, অন্য হাত মাথার সামান্য উপরে দৃঢ় মুষ্টিবদ্ধভাবে রয়েছে।তাঁর পরনে লুঙ্গি।উর্ধাংগ উন্মুক্ত।তরুণ মুক্তিযোদ্ধার পেশীবহুল দেহ অমিত শক্তির আভাস দিচ্ছে।তরুণের চুল ঘন ও প্রশস্ত ললাট দৃঢ়তা ও উদারতার প্রতীক।এই মুক্তিযোদ্ধা সাধারণ গ্রামীণ তরুণের প্রতীক যাঁরা দেশকে স্বাধীন করার জন্য বীরবিক্রমে মরণপণ যুদ্ধ করেছেন।অন্য প্রতিকৃতিতে তরুণ মুক্তিযোদ্ধা দুহাতে দৃঢ়ভাবে রাইফেলধরে দৌড়ের ভঙ্গিতে রয়েছেন।এই তরুণ মুক্তিযোদ্ধার পরণে প্যান্ট ও হাফ হাতা শার্ট।বুকের কাছে শার্টের বোতাম কিছুটা খোলা।তরুণের মাথায় এলোমেলো চুলের প্রাচুর্য।চোখের শাণিত দৃষ্টিতে মেধা ও সাহসের ছাপ।দৌড়ের ভঙ্গিতে রয়েছে গতি,সাহস ও বীরত্বের প্রকাশ।তরুণের ঝাকড়া চুল আধুনিক সভ্যতার প্রতীক।এই তরুণ বাংলাদেশের নগরের শিক্ষার্থী মুক্তিযোদ্ধার প্রতীক।মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিপুল সংখ্যায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।বস্তুত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় অংশই ছিল তরুণ ছাত্রসমাজ।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরও বহু ছাত্র যুদ্ধে অংশ নেন,বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। ছাত্র যোদ্ধাদের প্রতীক এই ভাস্কর্যের তরুণ।

এ দুজন মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতির পিছনে রয়েছে ৩৬ ফুট উঁচু একটি দেয়াল।দেয়ালে উপরের অংশে রয়েছে একটি বৃত্ত।এই বৃত্ত স্বাধীনতার সূর্যের প্রতীক।ভাস্কর্যটির নিচের দিকে ডান ও বাম উভয় পাশে ৬ ফুট বাই ৫ ফুট আয়তাকার দুটি দেয়াল চিত্র রয়েছে।দেয়ালে খোদাই করা রয়েছে দুটি ভিন্ন চিত্র।ডানদিকের দেয়ালে রয়েছে দু'জন যুবক যুবতী।যুবকের কাঁধে রাইফেল,মুখে কালো দাঁড়ি,কোমরে গামছা বাঁধা।এই যুবক মুক্তিযোদ্ধা বাউলের প্রতীক।মুক্তিযুদ্ধে বাউল,লোকজ শিল্পীসহ বাংলাদেশের যে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নিয়েছিলেন তা তুলে ধরা হয়েছে এখানে।বাউল তরুনের পাশে রয়েছে একতারা হাতে বাউল তরুণী। ডানদিকের দেয়ালে রয়েছে মায়ের কোলে শিশু,দু'জন তরুণী একজনের হাতে পতাকা।পতাকার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে গেঞ্জি পরা এক কিশোর।৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ।এ জনযুদ্ধে নারী শিশু সহ সর্ব স্তরের জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সমর্থন ছিল।এই জনতার প্রতীক হলো দেয়ালের প্রতিকৃতিগুলো।

ভাস্কর্যের সামনে রয়েছে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার অমর পংক্তি:সাবাস বাংলাদেশ/এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়/জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার/তবু মাথা নোয়াবার নয়।

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের চিরন্তন স্মৃতি বহণ করছে স্মারক ভাস্কর্য সাবাশ বাংলাদেশ।(শান্তা)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040