|
পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে ৮ মার্চ 'ফৌজদারি মোকদ্দমা আইনের' সংশোধনী বিলের খসড়ার পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। এবারে জাতীয় গণ কংগ্রেসে দাখিল করা ফৌজদারি মোকদ্দমা আইনের সংশোধনী বিলের খসড়ায় স্পষ্টভাবে 'মানবাধিকারকে সম্মান ও নিশ্চিত করা' লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং এ ধারণা মোকদ্দমা, তদন্ত, মামলা দায়ের ও বিচারসহ নানা পর্যায়ে কার্যকর করা হবে। চীনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ২০০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির দেয়া সংশোধনী বিলের ব্যাখ্যা শুনেছেন এবং প্রতিটি ধারা নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন। জাতীয় গণ কংগ্রেসের অনেক প্রতিনিধি ও মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ফৌজদারি মোকদ্দমার সংশোধন থেকে প্রতিপন্ন হচ্ছে যে, চীনের আইন ব্যবস্থা নিরন্তরভাবে সুগঠিত হচ্ছে। এটা হচ্ছে চীনের মানবাধিকার ব্রতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন।
'জনগণের সেবা করা', 'সবচেয়ে বেশি সংখ্যক জনসাধারণের মৌলিক স্বার্থ রক্ষা করা', 'মানুষের স্বার্থকে শীর্ষস্থানে রাখা' হচ্ছে চীন সরকারের রাষ্ট্র প্রশাসনের বরাবরের মৌলিক উদ্দেশ্য আর গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি। ১৯৯১ সালে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য কার্যালয়ের প্রকাশিত 'চীনের মানবাধিকার অবস্থা' শীর্ষক শ্বেতপত্রে প্রথম বারের মতো চীনের মানবাধিকার ব্রতের উন্নয়ন ও বর্তমান অবস্থা স্মরণ করে পর্যালোচনা করা হয়েছে। ১৯৯৭ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পঞ্চদশ জাতীয় কংগ্রেসে 'মানবাধিকার' ধারণাকে সেই অধিবেশনের রাজনৈতিক রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
চলতি বছরের জাতীয় গণ কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনের অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধি, চীনের সমাজবিজ্ঞান অ্যাকাডেমির উপ-মহাপরিচালক উ ইয়ান বলেন, 'দেশ প্রতিষ্ঠার পর চীনের মানবাধিকার ব্রত ধাপে ধাপে সুশৃঙ্খল ও স্পষ্টভাবে উন্নত হয়েছে। মানবাধিকার ব্রতের উন্নয়নের মান ও মানদণ্ড আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সাথে সাথে উন্নত হচ্ছে। খাওয়া-পরা থেকে সচ্ছল জীবন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় মানবাধিকারের বিষয়বস্তুও ধাপে ধাপে বেড়েছে।'
চীনের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলার ওয়াং লি মিং
একবিংশ শতাব্দীতে প্রবেশের পর চীনের মানবাধিকার নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। 'মানবাধিকারকে সম্মান ও নিশ্চিত করা' পর ২০০৪ সালে সংবিধান আর ২০০৭ সালে 'সম্পত্তি অধিকার আইনে' অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং ২০১২ সালে ফৌজদারি মোকদ্দমা আইনে লিপিবদ্ধ করা হবে। চীনা নাগরিকদের প্রাণ, সম্পত্তি আর স্বাধীনতা ফলপ্রসূ নিশ্চয়তা পাচ্ছে। চীনের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলার ওয়াং লি মিং বলেন, 'ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে প্রচালিত মানবাধিকার তত্ত্ব হচ্ছে জনগণের সম্পত্তি, প্রাণ ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করার তিনটি মৌলিক মানবাধিকার। চীনের আইনে মানবাধিকার নিশ্চিত করার বিষয় নিয়ে অনেক কাজ করা হয়েছে। যেমন ২০০৭ সালে প্রকাশিত 'সম্পত্তি অধিকার আইন' নাগরিকদের মৌলিক সম্পত্তির অধিকার রক্ষা করে। এবারের ফৌজদারি মোকদ্দমা আইনের সংশোধন জনসাধারণের প্রাণ ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। ফলে বলা যায়, সম্পত্তি অধিকার আইনের প্রণয়ন থেকে ফৌজদারি মোকদ্দমা আইনের সংশোধন সবই নাগরিকদের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করা নিয়ে কাজ করছে।'
১৯৭৯ সালের পর এ দ্বিতীয় বার ফৌজদারি মোকদ্দমা আইনের সংশোধন করা হচ্ছে। এবার ৬৫টি নতুন ধারা সৃষ্টি হয়েছে এবং ১১০টি ধারা সংশোধিত হয়েছে। তবে ১৩০ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত বড় উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চীনের মানবাধিকার পরিস্থিতে আরো অনেক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান রয়েছে। চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে বলেছেন, বর্তমানে মানবাধিকার পরিস্থিতি সর্বোত্তম অবস্থায় আছে এ কথা হয়তো কোনো দেশই বলতে পারে না।তবে বর্তমানে আমাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি যা তার চেয়ে নিশ্চয়ই আরো ভাল করা যায়। (ইয়ু / শান্তা)
| ||||
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |