|
২০১০ সালে সাংহাই বিশ্ব মেলা ১ মে শুরু হবে। তখন সারা বিশ্বের পর্যটকরা বিশ্বের সর্বশেষ ও প্রচলিত জ্বালানি সাশ্রয় ও পরিবেশ সুরক্ষার আদর্শ অনুভব করবে। যেমন বৃষ্টির পানির পুনর্ব্যবহার, সৌর শক্তি ও বায়ু শক্তি দিয়ে তৈরি বিদ্যুত সরবরাহ, এয়ার-কন্ডিশনারের চালিকাশক্তি হিসেবে নদীর পানি ও ভূগর্ভস্থ তাপ ব্যবহার, দেয়ালের তাপ প্রতিরোধসহ নানা নতুন প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে আপনারা ভবিষ্যতের সবুজ জীবন অনুভব করবেন। সম্প্রতি সিআরআই'র সাংবাদিক লি সিয়াও পিং বিশ্ব মেলা উদ্যানে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কয়েক ব্যক্তির সাক্ষাত্কার নিয়েছেন।
ভারতীয় ভবন
ভারতীয় ভবনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা রাজেশ কুমার বলেছেন, 'আমরা চীনের চিয়াংশি প্রদেশ থেকে বাঁশ কিনে ভারতীয় ভবন নির্মাণ করেছি। এটা হচ্ছে এ পর্যন্ত পৃথিবীতে বাঁশ দিয়ে তৈরি বৃহত্তম অর্ধগোলাকৃতির ছাদ। এ ছাদের ওপরে ক্ষুদ্র আকারের বায়ু শক্তি চালিত বিদ্যুত উত্পাদন সরঞ্জাম এবং সৌর শক্তির ব্যাটারি প্যানেল আছে। তা দিয়ে গোটা প্যাভলিয়নের জন্য সবুজ ও দূষণমুক্ত জ্বালানি সরবরাহ করা হবে। অর্ধগোলাকৃতির ছাদের ওপর দিক সবুজ গাছপালা দিয়ে ঢাকা থাকবে। তা জলসেচ করা পানি আবর্তনের পর পুনরায় ব্যবহৃত হয়। তা ছাড়া বৃষ্টির জল সংগ্রহ করে গাছপালার জন্য জলসেচ করা যায়।
রাজেশ বলেন, বিশ্ব মেলা উদ্বোধনের সময় সাংহাইয়ের আবহাওয়া গরমকাল হলেও তাদের ভবনে ঠান্ডা অনুভূত হবে। এ প্রযুক্তিগুলোর মাধ্যমে সেই ভবনে এয়ার-কন্ডিশনার ব্যবহারের হার অনেক কমবে।
জাপানী ভবন
জাপানী উদ্ভাবকরা বিশ্ব মেলার প্যাভলিয়নের নকশার ব্যাপারে অনেক চিন্তাভাবনা করেছেন। জাপানী ভবনের প্রধান ইহারা নোরিইয়োশ বলেন, 'জাপানী ভবনে জ্বালানি সাশ্রয় ও পরিবেশ সুরক্ষা সংক্রান্ত অপেক্ষাকৃত যুত্সই প্রযুক্তি ব্যবহার হয়েছে। আমরা সূর্যালোক, বাতাস এবং বৃষ্টির পানি কাজে লাগিয়ে কার্বন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণের পরিমাণ কমানোর যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালিয়েছি। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আমাদের পরিবেশ সুরক্ষার বায়ু স্তম্ভ। তা দিয়ে সূর্যালোক ও বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করা যায়, বায়ুর প্রাকৃতিক চলাচল বজায় রাখে, পরিবেশ সুরক্ষার ভূমিকা পালন করে। দর্শকরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখার আগে ২০২০ সালের ভবিষ্যত শহরের দৃশ্য দেখতে পাবেন।'
এখন নদীর পানি দিয়ে শীতল করা এবং ভূগর্ভস্থ তাপ প্রযুক্তি অপেক্ষাকৃত পরিপক্ক হয়েছে এবং চীনের কিছু শহরে তা বাস্তবায়িত হয়েছে। সাংহাইয়ের কিছু অফিস ভবনে ভূগর্ভস্থ তাপকে চালিকাশক্তি হিসেবে ব্যবহারের পর প্রতি বছর প্রায় ৪০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় হয়।
এখন সাংহাইয়ের কিছু জ্বালানি সাশ্রয় পণ্য উত্পাদন ব্যবসায়ী বিশ্ব মেলার সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিশ্ব মেলার উদ্যানে অনেক নতুন পণ্য সরবরাহ করছে। বিশ্ব মেলা উদ্যানের প্রধান ব্যবস্থাপক চাং কুও সিন বলেন, বিশ্ব মেলায় জ্বালানি সাশ্রয়ী পণ্য উত্পাদনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নে ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
জ্বালানি সাশ্রয় বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বিশ্ব মেলার পর জনসাধারণের জ্বালানি সাশ্রয় এবং পরিবেশ সুরক্ষার ধারণার ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হবে। জ্বালানি সাশ্রয়ী পণ্য ও প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহারের হারও অনেক বাড়বে। মার্কিন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্বালানি গবেষণা বিষয়ক সহযোগী অধ্যাপক জেনি উডওয়ার্ড বলেন, 'আমি মনে করি, সাংহাই বিশ্ব মেলা সাধারণ মানুষের মধ্যে জ্বালানি সাশ্রয়ের ধারনা জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করবে। বিশ্ব মেলা উদ্যানে জ্বালানি সাশ্রয় ও পরিবেশ সুরক্ষার অনেক বাস্তব উদাহরণ পাওয়া যাবে। এ সব প্রযুক্তি দেখা সত্যিই উত্সাহব্যঞ্জক ব্যাপার। এ পদ্ধতিও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। জনগণ বুঝতে পারবেন যে, জ্বালানি সাশ্রয় হচ্ছে বৈশ্বিক ঊষ্ণায়ন মোকাবিলার কার্যকর উপায়।'
১৫৯ বছর ধরে প্রতিটি বিশ্ব মেলা আমাদের জন্য কিছু না কিছু বিস্ময়কর আবিষ্কার ও উদ্ভাবন নিয়ে আসে। এবারের বিশ্ব মেলা 'শহরঃ জীবনকে আরো সুন্দর করে তোলা' প্রতিপাদ্যে জনগণ আরো বুদ্ধিমত্তার সাথে বৈশ্বিক ঊষ্ণায়ন ও পরিবেশ সুরক্ষাসহ মানবজাতির সম্মুখীন অভিন্ন সমস্যা সমাধান করবে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
| ||||
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |