Web bengali.cri.cn   
চীনের বসন্ত উত্সব
  2013-02-03 14:48:23  cri

এই রীতির বিষয়েও কাহিনী আছে। প্রাচীনকালের একটি অলীক কাহিনীতে চুয়ান সু নামে এক লোকের এক অলস ছেলে ছিল, ছেলেটি কোনো কাজ করত না, সবসময় ময়লা ও ছেড়া কাপড় পরত এবং জাউ খেতো। ছুসির দিন রাত্রে এই ছেলে শীতে আর ক্ষুধায় ঘরের কোণে মৃত্যুবরণ করে। তাই ছুসির দিন চীনারা ঘরবাড়ী পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ীর ছেড়া কাপড়গুলো ফেলে দেন এবং বাসি ভাত ও তরকারী দুপুর বেলায় খেয়ে ফেলেন অথবা ফেলে দেন, চীনারা অভাব ও দারিদ্র্যের পুরনো বছরকে বিদায় করে নতুন বছরের সমৃদ্ধি কামনা করেন ।

ঘর-বাড়ী পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার পর চীনারা বাড়ীর দরজায় মঙ্গলসূচক দ্বি-চরণ শ্লোক এঁটে দেন এবং লন্ঠন ঝুলিয়ে দেন। কোনো কোনো জায়গায় ছুসির রাত্রে 'থু সু' নামে এক ধরনের পানীয় পান করা হয়। এই পানীয়ের মধ্যে মদ ও পানি ছাড়া নানা ধরনের ভেষজ ওষুধ মেশানো হয়। একটি উপকথায় বলা হয়েছে, প্রাচিনকালে 'থু সু' নামে একটি কাচাঁ ঘরে একজন লোক থাকতেন। তিনি রোজ পাহাড়ে ভেষজ ওষুধ সংগ্রহ করার চেষ্টা করতেন, ছুসির সন্ধ্যায় তিনি নিজের তৈরী ভেষজ ওষুধ সিদ্ধ করে সবাইকে খাওয়ান এবং এই ওষুধের উপাদানগুলো গ্রামবাসীদের বলেন। তাই গ্রামবাসীরা তার তৈরী এই ভেষজ ওষুধকে 'থু সু' বলেন। চীনের প্রাচীন ওষুধপত্রে বলা হয়েছে ' থু সুর ' মধ্যে সাত ধরনের ভেষজ ওষুধ আছে , কাজেই ' থু সু ' খেয়ে রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

বসন্ত উত্সবের আগেরদিন রাতে পরিবারের অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের বয়োবৃদ্ধদের প্রণাম করে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হয়, বয়োবৃদ্ধরা ছোটদের শ্রদ্ধা গ্রহণ করেন এবং তাদের কিছু হাতখরচ দেন, চীনে এই টাকাকে 'ইয়া সুই ছিয়েন ' বলা হয, মানে বছর শেষের পুরষ্কার, সাধারণতঃ বড়রা শুধু স্কুলবয়সী ছেলেমেয়েকে 'ইয়া সুই ছিয়েন' প্রদান করেন, প্রাপ্ত বয়স্কদের সাধারণত ইয়াসুই ছিয়েন দেয়া হয় না। সেই রাত্রে সবাই নিজের ইচ্ছা অনুসারে বিনোদন করতে পারেন, অনেকে সারা রাত জেগে টি-ভি অনুষ্ঠান দেখেন, তাস খেলেন। সেদিন রাত জাগাও চীনের চন্দ্রবর্ষের শেষ রাতের একটি ঐতিহ্য বা রীতি। বছরের অন্য সময় ছোট ছেলেমেয়েদের বাবা মায়ের শাসন মানতে হয়, একমাত্র ছুসির রাত্রে তাদের অভিভাবকদের কথা শুনতে হয় না, কাজেই সেদিন রাত্রে সর্বত্রই আনন্দের পরিবেশ বিরাজ করে। সেই রাতে লোকেরা নাচগান আর গল্প-কথার মধ্য দিয়ে পুরোনো বছরকে বিদায় করেন এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানান। পরিবারের সবাই নতুন জামা-পোশাক পরে মেহমানদের স্বাগত জানান অথবা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের বাড়ীতে যান, পরস্পরকে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

বসন্ত উত্সবে নানান বৈচিত্র্যের নানান রঙের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। স্থানীয় অপেরা, চলচ্চিত্র, সিংহ নাচ, মন্দির মেলাসহ নানা কর্মসুচীর দ্বারা সর্বত্রই উত্সবের আনন্দমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। তবে কেউ কেউ বাড়িতে বসে বসন্ত উত্সব উপলক্ষে টেলিভিশনে প্রচারিত বিশেষ অনুষ্ঠান মালা উপভোগ করে থাকেন।

বাড়ীর প্রবেশদ্বারে দ্বি-চরণ শ্লোক ও দেওয়াল চিত্র এঁটে দেয়া আর দরজায় নানা ধরনের চীনা লন্ঠন ঝুলানোও বসন্ত উত্সবের একটি বিশেষ রেওয়াজ। বসন্ত উত্সবের আগে বাজারে প্রচুর দেওয়াল চিত্র পাওয়া যায়। এতে মানুষের সুখী জীবনের ছবি, সুন্দর ফুল ও মনোরম দৃশ্যের চিত্র অত্যন্ত জনপ্রিয়। লন্ঠন প্রদর্শনীও এসময়ে দেখার মতো একটি বিষয় হয়ে ওঠে। চীনা লন্ঠন চীনের এক ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্ম, সেগুলোর কোনোটার আকার খরগোশের মতো, কোনোটা ছাগলের মতো, কোনোটা টেলিভিশন কার্টুনের কোনো জনপ্রিয় চরিত্রের আকার।

  তবে জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে চীনাদের বসন্ত উত্সব উদযাপনের ধরনও পরিবর্তন হয়েছে। এখন অনেক চীনাবাসী বসন্ত উত্সবের ছুটি কাটানোর জন্য বিদেশ ভ্রমন করেন। 

বন্ধুরা, এতক্ষণ আমরা চীনের বসন্ত উত্সবের সম্পর্কে নানান গল্প কথা বলেছি। এটা হুবহু গল্প না হলেও এর মধ্য দিয়ে আপনারা চীনাদের ঐতিহ্যের ওপর কিছু ধারণা পেয়েছেন নিশ্চয়ই।

আজ চীনের ছুসি অর্থাত্ চীনের বসন্ত উত্সবের আগের দিন, আমরা পেইচিং থেকে আপনাদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, আপনাদের সুস্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধ জীবনের কামনা করি। (ইয়ু / লিপন)


1 2 3 4
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040