|
চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি হচ্ছে চীনের চন্দ্র পঞ্জিকার প্রথম মাসের প্রথম দিন, অর্থাত্ বসন্ত উত্সবের প্রথম দিন। খ্রীষ্টানদের বড় দিনের মতো বা বাঙ্গালীদের বর্ষবরণ উত্সবের মতো এই বসন্ত উত্সব হচ্ছে চীনাদের জন্য সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘতম উত্সব, যাকে বর্ষ বরণ উত্সবও বলা হয়। তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বসন্ত উত্সব উদযাপনের বিষয়-রীতি-বৈচিত্র্যে কিছু পরিবর্তন হলেও চীনা নাগরিকদের জীবন-চেতনায় এ উত্সবের আবেদন আগের মতোই তীব্র আবেগ তাড়িত এক বিশেষ প্রথা হিসেবে লালিত। ঐতিহ্য আর রীতি অনুসারে বসন্ত উত্সব চীনের চন্দ্রবর্ষের শেষ মাসের ২৩ তারিখ থেকে নতুন বছরের প্রথম মাসের ১৫ তারিখ অর্থাত্ লন্ঠন উত্সব পর্যন্ত প্রায় তিন সপ্তাহ ব্যাপী স্থায়ী হয়। বসন্ত উত্সবের ঠিক আগের দিন অর্থাত পুরনো বছরের শেষ দিন এবং নতুন বছরের প্রথম দিন অর্থাত বসন্ত উত্সবের প্রথম দিন হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুইটি দিন।
শুভ নববর্ষ
আজকের বাংলায় গল্প বাংলার গল্প আসরটি চীনের ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উত্সব নিয়ে যে সকল রূপকথা, প্রচলিত রীতি আর প্রথাগত কথন রয়েছে তাই নিয়ে সাজানো হয়েছে। আর এই আসরে আপনাদের সাথে আছি আমি–এবং আমার সহকর্মী--। আসুন তাহলে গল্প-কথনের মধ্য দিয়ে সবাই মিলে উপভোগ করি চীনের বসন্ত উত্সব।
ইতিহাস বলে, চীনাদের বসন্ত উত্সব চার হাজার বছরেরও বেশী পুরনো। তবে প্রথম দিকে এই উত্সবের নাম বসন্ত উত্সব ছিল না, এর নির্ধারিত তারিখও ছিল না। খ্রিষ্টপূর্ব ২১০০ সালের দিকে, তখনকার অধিবাসীরা সৌরজগতে বৃহষ্পতির একবার প্রদক্ষিণে যে সময় লাগতো তাকে এক সুই বলে অভিহিত করতেন, সে সময়ে এ উত্সবের নাম দেয়া হয় সুই। খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ সালের কাছাকাছি সময়ে, তখনকার অধিবাসীরা এ উত্সবকে চীনা ভাষায় 'নিয়েন' বলতেন। 'নিয়েন' এর অর্থ সু-ফসল। যে বছর খাদ্য-শস্যের ভালো ফসল হতো সে বছরকে "ইউয়ো নিয়েন" বলা হতো। আর যে বছর খুব ভালো ফসল হতো সেই বছরকে "দা ইউয়ো নিয়েন" বলা হতো। আর বসন্ত উত্সব উদযাপন করাকে চীনা ভাষায় 'কোও নিয়ান' বলা হয়। এই 'নিয়ান' নিয়ে চীনে অতি প্রচলিত একটি কিংবদন্তী রয়েছে।
প্রাচীনকালে 'নিয়ান' নামে ছিল এক দানব, দেখতে মস্ত বড়, ভয়ংকর হিংস্র আর মাথায় ছিল সুঁচালো দুটি শিং। গভীর সমুদ্রগর্ভে ছিল তার বাস। কেবল একবার, বছরের ঠিক শেষ দিনের শেষ রাতের অন্ধকারে ওপরে উঠে আসতো আর সামনে মানুষ বা প্রাণী যা পেত সব খেয়ে ফেলতো। ফলে ভয়ংকর এই দানব 'নিয়ানে'র ভয়ে প্রতি বছরের ঐ শেষ দিনটিতে গ্রামের সকল মানুষ যে যার মত করে আর যত তারাতারি সম্ভব পাহাড়ের গভীর জঙ্গলে পালিয়ে থাকতো।
একবার বছরের শেষ দিনে ঐ গ্রামে অচেনা এক ভিক্ষুক আসে। কিন্তু গ্রামবাসীরা তখন দানবের ভয়ে ঘর ছেড়ে পাহাড়ে চলে যাচ্ছিল আর ভিক্ষুকের দিকে ফিরে তাকানোরও সময় ছিল না তাদের। তবে গ্রামের পূর্বদিকের একজন বৃদ্ধা ভিক্ষুককে কিছু খাবার দিয়ে বলল-
'তুমি তাড়াতাড়ি পাহাড়ে চলে যাও, কাল সুর্য ওঠার আগে নিচে আসবে না'।
একথা শুনে ভিক্ষুক হাঁসতে হাঁসতে বললো, "আমাকে যদি আপনার বাড়িতে এক রাত থাকতে দেন, তাহলে ঐ দানব 'নিয়ান'কে আমি তাড়িয়ে দিতে পারি।" বৃদ্ধা ভিক্ষুকের কথা বিশ্বাস করাতো দূরে থাক উল্টো তখনই তাকে পালিয়ে যেতে বললো। উত্তরে সেই ভিক্ষুক একটু মৃদু হেসে আর কিছুই বললো না।
বসন্ত উত্সবের আতশবাজি
রাত তখন গভীর আর ঘুট ঘুটে অন্ধকার, দানব 'নিয়ান' গ্রামে ঢুকে লক্ষ্য করলো- "কি ব্যাপার! সব কিছু তো ঠিক আগের মতো মনে হচ্ছে না! বৃদ্ধার ঘরের দরজায় লাল কাগজ টাঙানো আর ভিতরে মোমবাতির উজ্জ্বল আলো?" দানব 'নিয়ান' ভয়ে একটু কেঁপে উঠল যেন। ব্যাপারটা বোঝার জন্য চুপে চুপে যেই না দরজার কাছে গেল ওমনি ঘরের ভিতর থেকে 'ধ্রুম ধ্রাম পিং পাং' বিস্ফোরণের আওয়াজ আসতে থাকলো। আওয়াজের কারনে দানব 'নিয়ানের' মস্তিস্কে ভীষণ যন্ত্রণা তৈরী হয় আর ভয়ে কাঁপতে থাকে। কারণ 'নিয়ান' লাল রং, অগ্নিকুণ্ডলী আর বিস্ফোরণ সহ্য করতে পারে না, এগুলোকে ভয় পায় ভীষণ। এ সময় ঘরের দরজা খুলে গাঁয়ে লাল পোশাক পড়া একজন বৃদ্ধ হা-হা করে হেসে উঠলো দানবটির সামনে। এতে দানব 'নিয়ান' নিজেই মৃত্যুর ভয়ে পড়িমড়ি করে প্রাণ নিয়ে দৌড়ে পালায়, ফিরে যায় গভীর সমূদ্রগর্ভে ।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |