Web bengali.cri.cn   
চীনের বসন্ত উত্সব
  2013-02-03 14:48:23  cri

ঠিক এর পরেরদিন অর্থাত নতুন বছরের প্রথম দিন। গ্রামবাসীরা পাহাড় থেকে ফিরে এসে গ্রামের শান্ত পরিবেশ দেখে তো অবাক। বৃদ্ধা তখন গ্রামবাসীদেরকে ঐ বৃদ্ধ ভিক্ষুকের কাণ্ডকারখানা সব খুলে বললো। আর এ ঘটনা দ্রুতই আশেপাশের সকল গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। দানব তাড়ানোর উপায় জেনে গেলো সবাই। এরপর থেকে সকল চীনা জাতি এই দিনটিকে 'কোও নিয়ান' বা দানব তাড়ানোর উত্সব হিসেবে উদযাপন করে থাকে। এ সময়ে সকল প্রকার অশুভ আত্মা আর অশুভ শক্তি থেকে রেহাই পেতে রাত জেগে আতশবাজি ফোটায়, বাতি জ্বালায়, আর ঘরে ঘরে লাল রঙের শ্লোক টাঙ্গানো হয়। সমগ্র চীন দেশটাই যেন ঐতিহ্যবাহী এ উত্সবে মেতে উঠে।

বসন্ত উত্সব উদযাপনের জন্য চীনের শহর ও পল্লী অঞ্চলের অধিবাসীরা নানা ধরনের প্রস্তুতিমূলক কাজ করেন। চীনের পল্লী অঞ্চলে উত্সব প্রস্তুতির কাজ বছরের শেষ মাসের প্রথম দিক থেকেই শুরু হয়। কৃষকরা বাড়ীঘর ধোয়া-মোছা করেন, লেপতোষক ধুয়ে পরিষ্কার করেন। বাজার থেকে মিষ্টিজাতীয় খাদ্য, কেক, ফলমুল, মাছ-মাংস ইত্যাদি সু-স্বাদু খাবার কিনেন যাতে উত্সবের দিন অতিথিদের আপ্যায়ন করা যায়। অন্যদিকে শহরে প্রস্তুতিমূলক কাজও উত্সবের অনেকদিন আগে থেকে শুরু হয়ে যায়। টেলিভিশন কেন্দ্র, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন শিল্পী উত্সবকেন্দ্রিক নানা বৈচিত্র্যময় অনুষ্ঠান তৈরীতে ব্যস্ত থাকে। পার্কে পার্কে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী মেলা। দোকানগুলো ভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে দেশে-বিদেশের হরেক রকম পণ্য সরবরাহ করে।

চীন একটি বড় দেশ, কাজেই বিভিন্ন অঞ্চলে বসন্ত উত্সব উদযাপনের পদ্ধতিও ভিন্ন। তবে বসন্ত উত্সবের আগের দিন রাতে অর্থাত্ পুরনো বছরের শেষ দিন রাতে পরিবারের সবাই মিলে এক সঙ্গে বছরের শেষ খাওয়া সম্পন্ন করার প্রথা সমগ্র দেশে প্রায় একই রকম। তবে দক্ষিণ চীনে বছরের শেষ খাবারের টেবিলে দশ-বারো রকম খাদ্য থাকে। এগুলোর মধ্যে টোফু অর্থাত্ সয়াবীনের দই ও মাছ থাকতে হবে। কারণ এই দুটি খাবারের চীনা উচ্চারণের সঙ্গে চীনা শব্দের উচ্চারণে 'সমৃদ্ধি'র সাথে অনেক মিল আছে। এতে নতুন বছরে চীনাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়।

উত্তর চীনে বছরের শেষ খাবারের টেবিলে চিয়াও চি নামের খাবারটি অবশ্যই থাকতে হবে। সেদিন সন্ধ্যায় পরিবারের সবাই এক সঙ্গে মিলে চিয়াও চি তৈরী করেন। চিয়াও চি চীনাদের একটি জনপ্রিয় খাবার। এই খাবার চীন সংস্কৃতির একটি অংশও বলা যায়। পরিবারের সবাই মিলে চিয়াও চি খাওয়াকে সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। চিয়াও চি হলো ময়দার তৈরী গোল আকারের এক কুলী পিঠা যার মধ্যে মাংস ও শাকসব্জি দেয়া হয়। এটি গরম পানির মধ্যে সিদ্ধ করে খাওয়া হয়। চিয়াও চি তৈরীর পদ্ধতি আর খাওয়ার অভ্যাস বিষয়ে বিচিত্র রীতি ও বিশ্বাস যুক্ত রয়েছে।

চিয়াও চি'র ভিতরে মাংস ও শাকসব্জি দেয়া হয়, এ জন্য প্রথমে মাংস ও শাকসব্জি ছুরি দিয়ে টুকরা টুকরা করে কাটতে হয়। মজার বিষয় হচ্ছে, ছুরি দিয়ে 'তোং তোং' করে মাংস ও শাখসব্জি কাটার শব্দ যত জোরে ও দীর্ঘক্ষণ করা যায় ততবেশি মঙ্গল। কেননা শাকসব্জি আর মাংস মেশানোটা কেবল স্বাদ তৈরীর জন্য নয়, এতে পরিবারের অর্থ-সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিও যুক্ত রয়েছে। কারণ চীনা ভাষায় শাকসব্জির উচ্চারণ হলো ছাই, চীনা ভাষায় ধন-সম্পত্তির উচ্চারণও ছাই। মাংস ও শাকসব্জি যত দীর্ঘসময় ধরে এবং জোরে জোরে শব্দ করে কাটা হবে পরিবারের অর্থ সমৃদ্ধিও তত স্থায়ী হবে।

বিভিন্ন আকারের চিয়াও চি

চিয়াও চি তৈরীর ধরনেও অনেক প্রথা রয়েছে। বেশীর ভাগ অঞ্চলের অধিবাসীরা ক্ষীণ চাঁদের আকারের চাও চি তৈরী করেন, কোনো কোনো অঞ্চলের অধিবাসীরা সমৃদ্ধ জীবনের আশায় ইউয়েন পাও আকারে আবার সু-ফলনের আশায় গমের শীষের আকারের চিয়াও চি তৈরী করেন। চিয়াও চি তৈরীর পর ফুটন্ত পানিতে প্রায় দশ বারো মিনিট সিদ্ধ করার পর চিয়াও চি খাওয়া যায়।

1 2 3 4
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040