|
চলতি কৃষি মৌসুমে সেচ কাজে বিদ্যুত্ সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে শিল্প কারখানায় ১২ ঘণ্টা বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সাম্প্রতিক ওই ঘোষণা মতে, মে মাসের শেষ পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত কলকারখানা বন্ধ রাখতে হবে। এ ঘোষণা ভাবিয়ে তুলেছে দেশের শিল্প মালিকদের, যারা ভয়ানক বিদ্যুত্ ঘাটতি ও লোড-শেডিংয়ে ইতোমধ্যেই নাকাল। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে দেশের শিল্প উত্পাদন আবার হুমকির মধ্যে পড়বে। বিনিয়োগ ও উত্পাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে রাতে শিল্পকারখানায় বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তারা। দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) বলছে, পর্যাপ্ত বিদ্যুত্ সরবরাহ না থাকায় এমনিতেই দেশের শিল্পকারখানাগুলোতে উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে। তার ওপর রাতের বেলায় যদি বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়, তাহলে শিল্পকারখানার উত্পাদনব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বিপর্যপ্ত হবে।
এফবিসিসিআই মনে করে, দেশে বিনিয়োগ ও উত্পাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হলে সব ধরনের শিল্পকারখানায় পর্যাপ্ত বিদ্যুত্ ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি। সে কারণে এবং কর্মসংস্থানের বিষয়টি মাথায় রেখে রাতে বিদ্যুত্ সংযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।
সংগঠন বলছে, বর্তমানে বিদ্যুত্ বিভ্রাটের কারণে বাংলাদেশের শিল্পকারখানাগুলো দিনের বেলায়ও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুত্ পাচ্ছে না। অথচ দেশের বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তিন শিফটে উত্পাদনকাজ চালানোর সক্ষমতা রয়েছে এবং সে অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক-কর্মচারীও নিয়োজিত আছে। বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ করা হলে এসব শিল্পকারখানায় উত্পাদন বন্ধ থাকবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি অনেক শ্রমিক চাকরি হারাবেন।
তবে নতুন সিদ্ধান্ত সাধারণভাবে সকল শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করলেও, এটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতির কারণ হবে রপ্তানিমুখী শিল্পখাতের জন্য। বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতি বলছে, নতুন সিদ্ধান্তের ফলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গড় বিদ্যুত্ সরবরাহ ব্যাপকভাবে নেমে আসবে। আর বিদ্যুত্ ঘাটতির কারণে উত্পাদন ব্যাহত হওয়ায় যথাসময়ে পণ্য জাহাজীকরণ করা যাবে না। আর সেটা হলে সবচেয়ে গুরুতর হুমকিতে পড়বে রফতানি খাত, যাকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে টিকে থাকতে হয়।
বাস্তবতা হলো গ্রীষ্ম মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে দিনের অর্ধেক সময়ই বিদ্যুত্ থাকে না। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো যে নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুত্ উত্পাদন করে নেবে তার উপায়ও সীমিত। কারণ বিদ্যুত্ উত্পাদনের অন্যতম উপাদান প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে; সারা দেশেই গ্যাসের চাপ প্রয়োজনের তুলনায় এখন অনেক কম। নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য পরিস্থিতি আরও নাজুক। কারণ শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদান বন্ধ রয়েছে দীর্ঘ দুই বছর ধরে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে যেসব শিল্প কারখানা চালু রয়েছে সেগুলোতে উত্পাদনক্ষমতা অনুযায়ী উত্পাদন হচ্ছে না। বিকল্প পদ্ধতিতে উত্পাদন ঠিক রাখতে গিয়ে উত্পাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোর। এ কারণে লোকসান দিয়েও শিল্প কারখানা টিকিয়ে রেখেছেন অনেকেই। আবার তাদের মধ্যে অনেকেই লোকসানের ধকল কাটাতে না পারায় বন্ধ করে দিচ্ছেন শিল্পকারখানা।
শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সারা রাত বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে দেশের শিল্পখাত, বিশেষ করে রপ্তানিমুখী খাতে ধস নামবে বলে যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা যদি সত্যি হয় তাহলে আখেরে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতিই, যাকে রক্ষায় সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সেচখাতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ সরবরাহের যে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে, তার সঙ্গে কেউ-ই দ্বিমত পোষণ করবে না। কারণ কৃষিই এখনও বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কৃষিকে রক্ষা করতে গিয়ে অর্থনীতির দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত শিল্পকে ধ্বংস হতে দেওয়া কোনো যুক্তির কাজ কিনা। আসলে বিদ্যুত্ রেশনিং দীর্ঘকালীন এ সমস্যার কোনো সমাধান নয়। সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদ্যুত্ উত্পাদন বাড়ানোর। কিন্তু একের পর এক সরকার কম মনোযোগী থেকেছে এ কাজটির প্রতি; তারা বরাবরই চেয়েছেন সমস্যার আপাত সমাধান। আর সে কারণে বিদ্যুত্ ঘাটতি সমস্যার কোনো সমাধান হতে পারেনি আজও।(শিয়াবুর)
| ||||
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |