|
বাহকরা তাদের যাত্রাপথে মৃত্যু-বিপদের সম্মুখীন হতো। তাদের যাত্রার সবচেয়ে কঠিন জায়গা ছিল এরলাং পাহাড়। বাহকদের খড়ের জুতোর নিচে অবশ্যই পেরেকসহ লোহার অংশ থাকতে হতো, নইলে সে জুতো পরে আছাড় খেতে হতো। কোনও কোনও বাহক অসুস্থতার কারণে রাস্তায় মারা যেত। বসন্তকালে বরফ গলে যাওয়ার পরই কেবল তাদের মৃত্যুদেহ উদ্ধার যেত। যৌবনে বাহক হিসেবে কাজ করার কষ্ট এখনো স্মরণ করেন ৮৩ বছর বয়স্ক লি চোং ছুয়ান। তিনি বলেন,
"প্রাচীন চা-অশ্ব পথের মধ্যে মা'আন পাহাড়ে সুয়েকুওলাং নামক একটি জায়গা আছে। তুষারপাত হলে ওই জায়গার রাস্তা ঢাকা পড়ে যেত। এর ফলে চা ব্যাগ নিয়ে এ জায়গাটি অতিক্রম করার সময় রাস্তা না দেখতে পেলে আমরা যন্ত্রপাতি দিয়ে তুষার পরিস্কার করতাম। তুষার পুরোপুরি সরানোর পরই কেবল আমরা জায়গাটি অতিক্রম করতে পারতাম। না হলে শরীরে ভারী বোঝা থাকার কারণে সহজে আছাড় খাওয়ার এবং পাহাড়ের নিচে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকতো।"
বাহকরা কষ্ট করে হেঁটে হেঁটে বহু পাহাড় অতিক্রম করার মধ্য দিয়ে এ হাজার বছরের ঐতিহাসিক প্রাচীন চা-অশ্ব পথে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশকে পরাজিত করার সাহস বজায় রেখেছে। এর সঙ্গে সঙ্গে তাদের আশাবাদী চেতনা ও সুন্দর বাহক লোকসংগীত বজায় রয়েছে।
উনিশ শ' আটান্ন সালে সিছুয়ান-তিব্বত সড়ক চালু হওয়ার পর বাহকদের যুগ শেষ হয়। সামান্য সংরক্ষিত পাথরসড়ক এখন পাহাড়ের মধ্যে আছে। যদিও এ পুরনো পথ আর ব্যবহার করা হয় না, তবুও তা হারিয়ে যাবে না। সুকণ্ঠ ইট-ঘন্টার শব্দ ও দূরদূরান্ত থেকে আসা সুগন্ধী চায়ে প্রাচীন চা-অশ্ব পথের গল্প প্রতিফলিত হয়।
পাহাড়ের মধ্যে ঘন্টার শব্দ শুনলে বোঝা যেত ঘোড়াদল আসবে। এটা ছিল প্রাচীন চা-অশ্ব পথের বৈশিষ্ট্যময় দৃশ্য। এ রাস্তায় বাহকদের ছাড়া পরিবহন কাজে ব্যবহার করা হতো ঘোড়ার দল। বর্তমানে যদিও ঘোড়াদল আছে, তবে তারা আর মাল বহন করে না; শুধু পর্যটকদের প্রাচীন চা-অশ্ব পথ দেখার জন্য পথ নির্দেশনা দেয়।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |