
বসন্ত উত্সবকে স্বাগত জানানোর জন্য চীনের শহরাঞ্চল ও পল্লী অঞ্চলের অধিবাসীরা নানা ধরনের প্রস্তুতিমূলক কাজ করেন। চীনের পল্লী অঞ্চলে প্রস্তুতির কাজ বছরের শেষ মাসের প্রথম দিক থেকেই শুরু হয়। কৃষকরা বাড়ীঘর পরিষ্কার করেন, লেপতোষক ধুয়ে পরিষ্কার করেন, বাজার থেকে বসন্ত উত্সবের খাবার ও মেহমানকে খাওয়ানোর খাদ্যদ্রব্য কিনে আনেন, যেমন মিষ্টিজাতীয় খাদ্য, কেক, ফলমুল ও মাছ-মাংস ইত্যাদি। বড় বড় শহরে উত্সবের প্রস্তুতিও উত্সবের অনেক দিন আগে থেকেই শুরু হয়। সাংস্কৃতিক বিভাগগুলো ও বিভিন্ন শিল্পীদল উত্সবকালের সাংস্কৃতিক কর্মসূচী তৈরীর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, টেলিভিশন কেন্দ্রগুলো বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেয়, বিভিন্ন পার্কে নানা ধরনের মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি চলতে থাকে আর বিভাগীয় দোকানগুলো নাগরিকদের চাহিদা মেটানোর জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তথা বিদেশ থেকে পণ্যদ্রব্য জোগাড় করার প্রচেষ্টা করে। একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, বসন্ত উত্সবকালে চীনাদের কেনাকাটা তাদের সারা বছরের কেনাকাটার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশী।

চীন একটি বড় দেশ, কাজেই বিভিন্ন জায়গায় বসন্ত উত্সব উদযাপনের রীতিনীতি ভিন্ন। তবে বসন্ত উত্সবের আগের দিন রাতে অর্থাত্ পুরনো বছরের শেষ দিন রাতে পরিবারের সবাই এক সংগে মিলে বছরের শেষ খাওয়া সম্পন্ন করার প্রথা সমগ্র দেশে প্রায় একই। দক্ষিণ চীনে বছরের শেষ দিনের খাবারের টেবিলে দশ-বারো রকমের তরিতরকারী থাকে, এগুলোর মধ্যে তৌফু অর্থাত্ সয়াবীনের দই ও মাছ থাকতে হবে। কারণ এই দু'টি খাবারের চীনা উচ্চারণের সংগে ঠিক সমৃদ্ধির চীনা শব্দের উচ্চারণের অনেক মিল আছে। এতে নতুন বছরে চীনাদের আশা-আকাংখা প্রতিফলিত হয়েছে। উত্তর চীনে বছরের শেষ খাবারের টেবিলে চিয়াও চি নামক এক খাবার অবশ্যই থাকতে হবে। সেদিন সন্ধ্যায় পরিবারের সবাই এক সংগে মিলে চিয়াও চি তৈরী করেন। চিয়াউ চি চীনের এক জনপ্রিয় খাবার, চিয়াও চি মাংসের পুর দেয়া এক কুলী পিঠে, বছরের শেষ রাতে পরিবারের সকল সদস্য মিলিতভাবে চিয়াও চি তৈরী করে ফুটন্ত পানির মধ্যে সেদ্ধ করে ভিনেগার ও অন্যান্য মশলার সংগে খান।
1 2 3 4