Web bengali.cri.cn   
'আই ইয়ো শি' নামক শিশু আনন্দ অপেরা দল
  2011-10-28 19:52:26  cri

২০০৯ সালে কিছু স্বেচ্ছাসেবক রক্তদান কার্যক্রম প্রচারের জন্য এক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এ প্রচারমূলক চলচ্চিত্রটি খুব ভালো সামাজিক প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। এর ফলে তাঁরা সিছুয়ান প্রদেশের চেনতু শহরের যুব স্বেচ্ছাসেবক সমিতির অধীনে 'আই ইয়ো শি' অর্থাত্ অপেরাকে পছন্দ করো নামে এক অপেরা দল গঠন করেন, স্থানীয় অনেক পেশাজীবী ব্যক্তি আর অনুরাগী এ অপেরা দলে যোগ দেন। ২০১০ সালে এ কল্যাণমূলক অপেরা দল চেনতু শহরের চিনচিয়াং অঞ্চলের আই ইয়ো শি কমিউনিটির সাংস্কৃতিক উন্নয়ন কেন্দ্রের নামে নিবন্ধিত হয়। লিউ ফেই হচ্ছেন এ কেন্দ্রের পরিচালক। এ কেন্দ্রে বিশেষ করে বাবা-মা থেকে দূরে থাকা শিশুদের জন্য 'আই ইয়ো শি' নামে একটি শিশু আনন্দ অপেরা দল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। লিউ ফেই এ শিশু আনন্দ অপেরা দল গঠনের পিছনের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন।

২০০৬ সাল থেকে লিউ ফেই ছিয়োং লাইয়ে সিয়াও ছিন নামে একজন শিশুকে আর্থিক সাহায্য দিতে শুরু করেন। সিয়াও ছিনের বাবা-মা কাজ করতে বাইরে গেছেন। সিয়াও ছিন সংগীত পছন্দ করে জেনে লিউ ফেই তাকে একটি ইলেক্ট্রনিক কিবোর্ড উপহার দিয়েছেন। এক বছর পর যখন লিউ ফেই সিয়াও ছিনকে দেখতে যান, তখন সিয়াও ছিন আনন্দের সাথে সেই ইলেক্ট্রনিক কিবোর্ডে এক সুর বাজিয়েছে। কিন্তু লিউ ফেই বুঝতে পারেন যে, সিয়াও ছিন কিবোর্ড বাজানোর সময় তার হাতের ভঙ্গি ছিল সম্পূর্ণ ভূল। কারণ সিয়াও ছিনকে ইলেক্ট্রনিক কিবোর্ড শেখানোর কোন শিক্ষক নেই। এক বছরে সে কেবল নিজেই বাজানোর চর্চা করেছে। এ ঘটনা লিউ ফেইয়ের মনে গভীর দাগ কেটেছে। তিনি উপলব্ধি করেছেন যে, বাবা-মা থেকে দূরে থাকা শিশুদেরকে কেবল জিনিসপত্র দিলে হবে না, তাদেরকে সত্যি সত্যি সাহায্য করতে চাইলে অন্যান্য ক্ষেত্রের ওপরও মনোযোগ দেয়া উচিত। তখন থেকে লিউ ফেই এর মনে একটিই চিন্তা করেন, তা হলো 'তাদের কি দরকার?'

সে সময়ই সিছুয়ান প্রদেশের কমিউনিস্ট যুব লীগ কমিটি কৃষকদের সন্তানদের নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চেয়েছিল। লিউ ফেই ও অন্য স্বেচ্ছাসেবকরা এ খবর জানার পর যুব লীগ কমিটির কাছে এ প্রকল্প নেয়ার জন্য আবেদন করেছেন। ফলে 'আই ইয়ো শি' কেন্দ্র একটি আনন্দ অপেরা দল গঠন করেছে। তখন থেকে তাঁরা কল্যাণমূলক ক্ষুদ্র চলচ্চিত্র 'সর্বশ্রেষ্ঠ ভবিষ্যত' এর শুটিং শুরু করেন।

চলচ্চিত্র শুটিং করার জায়গা ছিল শিচিয়াকুয়ান থানার ইয়ুবা গ্রাম । লিউ ফেই আর স্বেচ্ছাসেবকরা সে গ্রামে গিয়ে পরিদর্শন করেন। যদিও যাওয়ার আগে তাঁরা ভেবেছিলেন যে, গ্রামে বাবা-মা থেকে দূরে থাকা শিশুদের চরিত্রসহ নানা ক্ষেত্রে কোন না কোন সমস্যা থাকার সম্ভাবনা আছে, তবে ইয়ুবা গ্রামে পৌঁছার পর তাঁরা উপলব্ধি করেছেন যে, শিশুদের আত্মীয়স্বজনের হাতের স্পর্শ ও মনের যত্ন দরকার। স্বেচ্ছাসেবকরা শিশুদের মাথায় হাত বুলানোর সময় শিশুরা তাদের খুব আপন মনে করে এবং তাদের হাতের সাথে সাথে গায়ে দোলে। স্বেচ্ছাসেবকরা বুঝতে পেরেছেন যে, কেউ এসে যদি শিশুদের মনের শূন্যতা পূরণ করতো তাহলে কত ভালো হত।

'সর্বশ্রেষ্ঠ ভবিষ্যত' চলচ্চিত্রের মধ্যে একজন শিশুর গল্প বাস্তব জীবন থেকে নেয়া হয়েছে। সে বাচ্চার বয়স অনুসারে স্কুলে থাকা উচিত। কিন্তু সে স্কুলে যায় না। সে অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে চায় না। সে কেবল রাস্তায় গিয়ে খালি বোতল কুড়িয়ে বেড়ায়। সে মনে করে, বাবা-মা টাকা অর্জনের জন্য স্বদেশ ত্যাগ করেছেন, এর ফলে সে বাবা-মার আদর পায় না। সে মনে করে, যদি হাতে টাকাথাকে, তাহলে সব থাকবে। বাবা-মায়ের আর বাইরে গিয়ে কাজ করার প্রয়োজন নেই। সে দিন রাত বাবা-মার কাছে থাকতে পারবে। সেই জন্য এ ৮ বছর বয়সী ছেলেটি বোতল কুড়িয়ে পাওয়ার মধ্য দিয়ে টাকা উপার্জন করার চেষ্টা চালায়। লিউ ফেই পরিদর্শনের সময় জেনেছেন যে, বাবা-মা থেকে দূরে থাকা অনেক শিশুরই এ ছেলের মতো প্রায় একইরকম চিন্তাভাবনা আছে।

লিউ ফেই বলেন, যখন আমরা শিশুদেরকে জিজ্ঞেস করি, 'তোমাদের আদর্শ কী?' অর্ধেক শিশু আমাদের বলে, তাদের আদর্শ হচ্ছে টাকা উপার্জন করা। তারা মনে করে, তাদের সমস্ত সমস্যা টাকার জন্য সৃষ্টি হয়েছে। টাকা থাকলে সব সমস্যার সমাধান হবে। বাবা-মা কেন তাদেরকে গ্রামে রেখে বাইরে কাজ করতে গেছে, কারণ তাদের পরিবার গরীব। শিশুদের কথা শুনে লিউ ফেই মনে করেন, শিশুদেরকে এক সঠিক চিন্তাধারা দেয়া উচিত।

আরো বেশি লোক যেন বাবা-মা থেকে দূরে থাকা শিশুদের সাহায্য করতে উদ্বুদ্ধ হয় সে উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছাসেবকরা সিদ্ধান্ত নেন যে, অবশ্যই এ ক্ষুদ্র চলচ্চিত্রটি ভালোভাবে বানাতে হবে। তখন এ আনন্দ অপেরা দলে মাত্র ২০ হাজার ইউয়ান ছিল। তাদের কোন পেশাগত সরঞ্জাম আর অভিনেতা অভিনেত্রী ছিল না। একটি ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ করা তাদের পক্ষে ছিল প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। তবে অবশেষে তা সম্পন্ন হয়েছে। 'সর্বশ্রেষ্ঠ ভবিষ্যত' নির্মাণের প্রক্রিয়ায় স্বেচ্ছাসেবকরা শ্রম ও পারিশ্রমিকের কথা বিবেচনা না করে সময়, টাকা ও পরিশ্রম ব্যয় করে চলচ্চিত্রটি সম্পন্ন করেছেন।

চলচ্চিত্র তোলার সময় অপেরা দলে বিশেষ করে দু'জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তাঁরা শিশুদের মানসিক সমস্যা বিচার করে হস্তক্ষেপ ও নির্দেশনা করেন এবং শিশুদের সুস্থ মানসিক গঠনে সাহায্য করেন। এটা হচ্ছে লিউ ফেই ও শিশু আনন্দ অপেরা দলের প্রয়াসের দিক।

লিউ ফেই বলেন, 'আনন্দ অপেরা দল বেশ কয়েকটি প্রকল্প সম্পন্ন করেছে। এখন আমরা তহবিলের কাছে আর্থিক সহায়তার আবেদন করছি। আমরা আশা করি, এক স্কুলে বা এক কমিউনিটিতে স্থায়ীভাবে এ প্রকল্প করতে যাবো। আমরা বাবা-মা থেকে দূরে থাকা শিশুদের আরো বেশি আনন্দ ও ভরসা দেবো।' (ইয়ু)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040