জাপানের স্কুল পূর্ব শিক্ষা ব্যবস্থা

জাপানে শিশু শিক্ষার তাত্পর্যের ওপর গভীর উপলব্ধি রয়েছে। বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে সত্তুরের দশক পর্যন্ত জাপানের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ দু'বার 'শিশু শিক্ষা উন্নয়ন পরিকল্পনা' উত্থাপন করে। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী স্কুল পূর্ব শিক্ষাকে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে জাপানের তিন থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুদের কিন্ডারগার্টেনে ভর্তির হার ছিল ২৬.৯ শতাংশ। কিন্তু ১৯৮১ সালে ৪ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের কিন্ডারগার্টেনে ভর্তির হার শতকরা একশ ভাগে এসে দাঁড়িয়েছে।

এখন জাপানে প্রায় সত্তুর শতাংশ কিন্ডারগার্টেন হচ্ছে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। এ পরিপ্রেক্ষিতে জাপান সরকার শিক্ষা আইন প্রনয়নের মাধ্যমে ব্যক্তিগত কিন্ডারগার্টেনের স্বার্থ রক্ষা এবং উন্নয়নে সহায়তা করার ওপর খুব গুরুত্ব দিচ্ছে। জাপান সরকার পরপর 'কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার বিবরণ' ও 'কিন্ডারগার্টেন স্থাপনের মানদন্ড'সহ সংশ্লিষ্ট নিয়মকানুন জারি করেছে। এ নিয়মকানুন ব্যক্তিগত কিন্ডারগার্টেনের মর্যাদা, গুণগত মান এবং ব্যবস্থাপনাসহ নানা ক্ষেত্রে বিস্তারিত নিয়ম প্রণয়ন করেছে। বলা যায়, আইন অনুসারে শিশুদের শিক্ষাগ্রহণের নানা অধিকার রক্ষা করার পাশাপাশি কিন্ডারগার্টেনগুলোকে এখন নিয়ম অনুযায়ী সব কাজ করতে হয়।

বিংশ শতাব্দীর সত্তুরের দশকের প্রথম দিক থেকে জাপানের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ব্যক্তিগত কিন্ডারগার্টেনের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী ব্যক্তিগত কিন্ডারগার্টেনগুলোকে দেয়া আর্থিক ভর্তুকির পরিমাণ বিপুল মাত্রায় বৃদ্ধি করেছে। তা ছাড়া জাপান সরকার পরিবারের অবস্থা বিবেচনা করে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি দেয়ার মাধ্যমে শিশুদের ব্যক্তিগত কিন্ডারগার্টেনে ভর্তির ফি ও শিশুদের দেখাশোনার ফিও মওকুফ করাসহ বেশ কিছু পরিবারকে কিন্ডারগার্টেনে প্রবেশের জন্য বোনাস দেয়। জাপানের অনেক বেসরকারী সংস্থা নানা পদ্ধতিতে ব্যক্তিগত কিন্ডারগার্টেনের জন্য আরো বেশি সরকারী ভর্তুকি দেয়ার চেষ্টা করছে, যাতে শিশুদের শিক্ষার ফি আরো কমানো যায়। এ বেসরকারী সংস্থাগুলো কিন্ডারগার্টেন আর সরকারের মধ্যকার যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের ভূমিকা পালন করছে।

এখানে বিশেষ করে উল্লেখ্য করতে হয় যে, জাপানের স্কুল পূর্ব শিক্ষার একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কিন্ডারগার্টেনের স্বাধীনতাকে সম্মান করা। জাপানের ব্যক্তিগত কিন্ডারগার্টেনগুলোর স্বাধীনভাবে উন্নয়নের অবকাশ আছে, ফলে তাদের শিক্ষাদানের উপায় আরো নমনীয় ও বহুবিধ। অন্য দেশের মতো জাপানও কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও বাছাই করার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা সমাজে শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে বিবেচিত হন। তাদের বেতন সাধারণ সরকারী কর্মকর্তার বেতন থেকে প্রায় বিশ শতাংশ বেশি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাপানের শিশু শিক্ষকের মান নিরন্তরভাবে বাড়ছে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)