রাজা: ঠিক বলছো, প্রহরী, যেখান থেকে পার রাজপুত্র জোগার করে নিয়ে আসো'।
মন্ত্রী: মহারাজ, রাজপুত্রের চেহারাটা কী রকম হবে একটুকু আঁচ করতে না পারলে ওই বা খোঁজে কেমন করে'।
রাজা: কেন? এ আবার এমন কি কঠিন কাজ, এই ধরো আমার চেহারার মতো'।
মন্ত্রী রাজার চেহারার দিকে বার কয়েক তাকিয়ে মাথা নিচু করে চুলকাতে থাকেন।
রাজা: চুপ করে আছ যে বড়, কি বলতে চাও আমার চেহারা খারাপ?'
মন্ত্রী: আজ্ঞে মহারাজ, তা নয়, তা কি বলতে পারি! তবে কিনা আপনার মতো মহা সুদর্শন সুপুরুষ এ রাজ্যে আর কোথায় খুঁজে পাবে, তাই ভাবছিলাম'।
রাজা: তাই বটে, তাই বটে, তোমার বুদ্ধির তারিফ করতেই হয় দেখছি! তা হলে উপায় কি?'
মন্ত্রী: এই ধরুন যদি আমাদের- এই না হয় আমারই মতোন যদি কেউ....
রাজা: পাগল হয়েছো, রাজকন্যা ভয় পেয়ে মূর্ছা যাক আর কী!
মন্ত্রী মুখ-চোখ লাল করে গম্ভীর হয়ে যান। এবং শেষ পর্যন্ত ঠিক হলো রাজার মতোই চেহারা দরকার। তবে অতটা ভাল না পেলেও চলবে।
এবারে হয়েছে আরেক জ্বালা, চেহারা মেলে কিন্তু রাজ পুত্র হতে কেই রাজি হয় না। রামনগরের মেয়েদের বড় বদনাম। তারা নাকি বড় বেশি লেখাপড়া জানে- ফট করে যদি কিছু শুধিয়েই বসে! এদিকে রামনগরের তো আর তর সয় না। এবার যদি রাজপুত্র নিয়ে যায় তবে তারা তাকে তুলে নিতে আসবেই, বলে গেলো দূত। এ অবস্থায় বরযাত্রা না করে আর কোনো উপায় রইল না। শুরু হলো বরযাত্রা, কিন্তু বরের পাল্কি খালিই চলে। রাজা বললেন, 'ওহে মন্ত্রী, চোখ দুটো সজাগ রেখো, তেমন- তেমন দেখলেই পাল্কিতে তুলে নেবে'। কিন্তু তেমন তেমন আর মেলে না। বরযাত্রীর দল কাঁপতে কাঁপতে গিয়ে রামনগরে প্রবশ করে। লোকজন তো ছুটে আসে বর কই বর কই বলে। রাজা এবার কাঁদ-কাঁদ হয়ে মন্ত্রিকে বলেন- 'মন্ত্রী এইবার যে গেলুম রে'।
ছোকরা তাড়াতাড়ি দৌড়ে গিয়ে সকলকে হাকিয়ে দেয়-'বিয়ের আগে আমাদের বর দেখানো নিয়ম নাই!'
রাজা: ঠিক ঠিক বলেছে, মনে ছিল না'।
মন্ত্রী: ঠিক বটে, মনে ছিল না।
কিন্তু বিয়ের দিন তো আর চালাকি চলে না। রামনগরের লোক এসে বলে-'বর কই?'
এবারে রাজা তাকায় মন্ত্রীর দিকে আর মন্ত্রী রাজার দিকে।
ছোকরা চাকর এবার আরেক বুদ্ধি বার করে। বললে-' আমাদের বিয়ের নিয়ম আলাদা।
সবাই: কি রকম?
ছোকরা: আমাদের বর সভায় বসে ছদ্মবেশে। রাজকন্যাকে খুঁজে বার করে মালা পরিয়ে দিতে হয়'।
সকলে: আচ্ছা তাই সই।
মস্তবড় বিয়ের সভা। লোকজন গিজগিজ করে। সভা জুড়ে বরযাত্রী দল বসে আছে। রাজকন্যা মালা হাতে সভায় ঢোকেন। এদিক ওদিক চেয়ে আস্তে আস্তে গিয়ে মালা পরিয়ে দেন- ছোকরা চাকরের গলায়।
রাজা চমকে ওঠে বলেন-'য়্যাঁ, ও যে...
মন্ত্রী: মহারাজ চেপে যান।
রাম রাজা: ও যে মানে?
মন্ত্রী: আজ্ঞে রামনগরের মান্যবর, ও যে নয়, ওই যে।
রাম রাজা: ওই যে কী?
মন্ত্রী: আজ্ঞে মহারাজ বলতে চাচ্ছিলেন যে, ও-ই-যে আমাদের রাজপুত্র, ছদ্মবেশ ধরে ছিল তো তাই রাজ পোশাক ছাড়া খানিকটা চাকরের বেশ ধরেছে, এই আর কি?
রাম রাজা: তাই বলুন, সে আর কে না জানে।
এদিকে মহাধুম ধামে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে দেশে ফেরেন রাজা। রামনগরের রাজ দরবারে হাসাহাসির ধুম পড়ে যায়। রামনগরের রাজা বলেন—'আচ্ছা বোকা বানান গেছে, কী বল মন্ত্রী?
রামনগরের মন্ত্রী: আজ্ঞে যা বলছেন।
রাম রাজা মহাখুশী হয়ে মন্ত্রীকে বলছে- 'একেবারে বোকার দেশ কী বল, রাজকন্যা আর মন্ত্রীর কন্যার তফাত্ বুঝতে পারে না। ছ্যা ছ্যা ছ্যা!
কথাটা এবার মন্ত্রীর ভাল লাগে না। তবু রাজার সঙ্গে হাসতেই হয়। হাসতে হাসতে বলেন-'কিন্তু রাজপুত্তরের চেহারাটা ভালো। রাজা হলে মানাবে বেশ'।
রাম নগরের রাজা এবার চটে গিয়ে মন্ত্রীকে বললেন-'তার মানে?'