Web bengali.cri.cn   
অপরূপ-কথা
  2013-04-22 18:42:48  cri

রাজা: এই নাও বখশিস।

ছেলেটি মাথা না তুলেই তাস খেলতে খেলতেই রাজার দিকে এক হাত বাড়িয়ে দেয়। আর রাজা এ পকেট ও-পকেট করে খুঁজতে থাকে অবশেষে একটি ফতুয়ার ঝুল পকেট থেকে একটি আস্ত টাকা বের করে দেয়। ছেলেটি টাকাটা নিয়ে ঠং করে মাটিতে ঠুকে ফিরিয়ে দিয়ে বলে—

ছোকরা: এটা অচল টাকা

রাজা: আচ্ছা এটা আমি রেখে দিচ্ছি, বাকি রইল, কাল এসে নিয়ে যেও কেমন?

রাজকার্য আবার চুপ হয়ে যায়।

রাজার কিন্তু ভীষণ স্মরণশক্তি! ঘন্টা কয়েক নিরব থাকার পর হঠাত্ মন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলেন—

রাজা: এই মন্ত্রী তোমার না গর্দান যাবে?

মন্ত্রী: যাব বৈকি! আলবত্ যাবে, হাজার বার যাবে! তবে কি হুজুর আজকে তো হচ্ছে না, আজ কোথাও যাত্রা নাস্তি হয়েছে। কাল না হয় গর্দান নেবেন ক্ষণ।

রাজা: হ্যাঁ, বেশ বলেছ! কাল যেন ঠিক ঠিক মনে থাকে! আর গর্দানের কথা আমাকে মনে করিয়ে দিতে যেন ভুল না হয়।

খানিক বাদে রাজা হাঙ্গরের ন্যায় মুখ হা করে মস্ত এক হাই তোলে। তারপর সবার উদ্দ্যেশে বলেন- 'ব্যাস অনেক কার্য হয়েছে, আজকের মতো সভা ভঙ্গ। এমনি করেই রাজ্য-শাসন চলে। রাজার দোর্দন্ড প্রতাপে বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খায়। অবশ্য বাঘ জল ছাড়া আরো কিছু খায়। চোর ডাকাত এই রাজ্যে ত্রিসীমানায় ঘেঁষে না। কারণ চুরির মাল যা পায় তাতে পোষায় না। এহেন সুখের রাজ্যে একদিন এক বিপত্তি ঘটলো। রাজা সভায় বসে আছেন। মন্ত্রী গেছেন বাজারে, কোটাল রান্না ঘরে, আর ছোকরা চাকর এখনো হাজিরা খাতায় নাম সই করেনি। এমন সময়ে প্রহরী রাজাকে কুরনিশ করে দাঁড়িয়ে বললো- 'হুজুর দূত এসেছে'। রাজা এ সময়ে কেবলমাত্র প্রাতকালীন ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছিল। তাই সে চোখ বুজেই বললো—'গর্দান নাও।

প্রহরী: হুজুর দূত

রাজা: আরে দুত্তোর দূত, বললাম না গর্দান নিতে।

মন্ত্রী ততক্ষণে বাজার টাজার সেরে ঝোলা পোটলা হাতে সভায় এসে উপস্থিত হয়েছেন। ব্যপারটা বেশ জটিল হয়ে উঠছে বুঝতে পেরে সে রাজাকে বললেন- 'হুজুর দূত যে অবধ্য'

রাজা: কি অবাধ্য! তাহলেতো আর কথাই নাই, আগে তার মাথা নিয়ে তারপর বলো কি হয়েছে।

মন্ত্রী: আজ্ঞে হুজুর অবাধ্য নয় অবধ্য অর্থাত্ যাকে বধ করা যায় না! কেননা শাস্ত্রে বলে- দূতকে যে মারতে নেই হুজুর। আর তা ছাড়া ও যে রামনগরের দূত!

রাজার ঘুম টুম এবার উবে গেল। ধড়মড় করে উঠে বসে সভয়ে বললেন- য়্যাঁ, রামনগরের দূত! কৈ দেখো দিকিনি কি কাণ্ড কি কাণ্ড, দূত এসেছে তা আগে বলবে তো নাকি! এই শুনতে টুনতে পায়নি তো! রামনগরের রাজাটা যা ভারী গোঁয়ার আর চোয়াড়, শুনতে পেলে এক্ষুনি যুদ্ধ বাধিয়ে বসবে—একটি ছুতো পেলে হয় আর কি!

মন্ত্রী: আজ্ঞে হ্যাঁ, মহারাজ, শুনেছি তাঁর পুরোন তলোয়ারখানা শান দেবার পর থেকে তিনি সেটার ধার পরীক্ষা করবার জন্য উসখুস করছেন।

রাজা: উঁ! বলছো কি হে মন্ত্রী! তাই নাকি! আর তোমরা সব গাধার দল মান্যবর দূতকে রেখেছো বসিয়ে; দেখ, দেখ আবার কি ফ্যাসাদ বাধিয়েছে।

1 2 3 4 5
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক