মস্ত বড় রাজা, এ-কালের নয়, সে-কালের। সুতরাং লোক লস্কর, সৈন্য-সামন্ত, হাতি ঘোড়া বিস্তর- তার আর লেখা জোখা নাই। রাজ্যের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত যেতে সারাদিন লেগে যায়। অবশ্য একটু বেলাকরে বের হতে হয় এবং মাঝে ঘন্টা আস্টেক জিরিয়েও নিতে হয় বই কি! হাতিশালে হাতি....হাতি ছিল, আপাতত মরে গেছে। ঘোড়াশালে ঘোড়া.... ঘোড়া আছে কিন্তু বুড়ো হয়ে বাতে ব্যথায় আর চলতে পারে না, তবে খাবার না পেলে ঠিকই চিঁহি চিঁহি করে ডাকতে থাকে।
লোক লস্করতো বলেছি লেখা-জোখা নাই। একটা হাঁক দিলেই অমনি পিলপিল করে চার-পাঁচজন বেরিয়ে পড়তে পারে- অবশ্য সবসময় বেরোয় না, কারন মাস কয়েক মাইনে না পেয়ে একটু বেয়াড়া হয়ে পড়েছে। সুতরাং এই রাজা হচ্ছে মস্ত বড় রাজা। রাজার রয়েছে মস্তবড় দরবার মহল। মন্ত্রী, কোটাল, পাত্র-মিত্র প্রহরী প্রভৃতি রাজাকে ঘিরে আসর জমিয়ে রাখে। প্রভৃতি মানে একজন ছোকরা চাকর, আর তাকে নিয়ে হল মোট ছ'জন। মন্ত্রী অবশ্য সব সময়ে থাকতে পারে না কারণ মাঝে মাঝেই তাকে সভা কার্য উঠে গিয়ে বাজার-টাজার করে আনতে হয়। কোটাল রান্না চড়িয়ে সময় পেলেই কিন্তু সভায় এসে বসেন। পাত্র-মিত্র ঠায় বসে থাকেন। তাঁদের একজনের বাত আর একজনের হাঁপানি; দরবারের সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা করলে বাড়ে।
রাজ সভায় রাজ কার্য চলে সারাদিন। সবাই মোটামুটি গোমরা মুখে বসে থাকে। রাজা থেকে-থেকে পিঠের জামাটা তুলে হাক দিয়ে ডাকেন-মন্ত্রী-
ব্যস, আর কিছু বলতে হয় না। মন্ত্রী রাজার থেকে দশগুণ জোরে বজ্রগম্ভীর হুংকার দিয়ে ডাকেন-প্রহরী! প্রহরী এসে লম্বা কুরর্নিশ করে ট্যাক থেকে ঝিনুক বার করে দেয়। এরই সাথে শুরুহয়ে গেল রাজসভার প্রথম কার্য- চুলকানি, অর্থাত্ মন্ত্রী এবার আচ্ছা রকম করে রাজা বাহাদুরের পিঠ খানা চুলকে দিতে থাকবে।
খানিক বাদে রাজা বলবেন- উঁ..উঁ..হু
অমনি মন্ত্রী চুলকানো থামিয়ে প্রহরীর হাতে ঝিনুক ফিরিয়ে দিবেন। প্রহরী আবার কুরনিশ করে ঝিনুক ট্যাকে গুঁজে নিয়ে জায়গায় ফিরে যাবে। আবার সবাই চুপচাপ, ব্যাস এভাবেই চলছে রাজ কার্য।
কিন্তু আজ রাজা মহাদয়ের কোথাও কোনো গন্ডগোল হয়েছে। কেননা খানিক বাদেই রাজা মন্ত্রীর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলেন- ম.. মন্ত্রী!
মন্ত্রী: জী .. জী ... মানে আজ্ঞে হুজুর (কাঁপতে কাঁপতে)
রাজা: তোমার গর্দান যাবে, তা কি তুমি জানো?
মন্ত্রী: আজ্ঞে হ্যাঁ
রাজা: কেন জান?
মন্ত্রী: আজ্ঞে না হুজুর'।
রাজা: কি! জান না?
মন্ত্রী: আজ্ঞে জী মানে, না মানে, আজ্ঞে জানি।