Web bengali.cri.cn   
বাংলাদেশে রেকর্ড বিদেশি সহায়তা
  2013-08-12 18:22:26  cri

বাংলাদেশে গত অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ বিদেশি সহায়তা এসেছে, যদিও দেশের বৃহত্তম অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে ওই সময় বিশ্বব্যাংকসহ কয়েকটি দাতাসংস্থার সঙ্গে সরকারের ব্যাপক টানাপড়েন চলে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্যে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা ২৭৮ কোটি ৬১ লাখ ডলার অর্থ ছাড় করে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে আগে নেওয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ৮৯ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। ফলে হাতে পাওয়া প্রকৃত বিদেশি সাহায্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮৮ কোটি ৬৬ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৪ শতাংশ বেশি।

এক বছরে দাতাদের ঋণ-সহায়তা ছাড়ের এ পরিমাণ এবং হাতে পাওয়া প্রকৃত সহায়তার পরিমাণ দু'ক্ষেত্রেই নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। আগে কোনো বছরই দাতারা এক বছরে এতো অর্থ ছাড় দেয়নি এবং প্রকৃত সহায়তা হিসেবেও বাংলাদেশ অর্থ পায়নি।

কোনো অর্থবছরে মোট যে পরিমাণ সহায়তা আসে, তা থেকে বিভিন্ন সময়ে নেওয়া ঋণ-সহায়তার সুদ-আসল পরিশোধের পর বাকি অর্থকেই প্রকৃত বা নিট সহায়তা হিসাবে গণ্য করা হয়।

বিদেশি সহায়তার অর্থপ্রবাহের এ গতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে চাইলেও দীর্ঘ সময় ধরে অনেক টানাপড়েনের পর সরকার সে ঋণ নেবে না বলে বিশ্বব্যাংকে জানিয়ে দেয়।

মুহিত বলেন, অনেকে ভেবেছিলেন, পদ্মা সেতুর ঋণ ফিরিয়ে দেওয়ার পর বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটবে; বিদেশি সহায়তা কমে যাবে। কিন্তু তা হয়নি; বরং সহায়তা আরও বেড়েছে। খোদ বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি অন্য দাতারাও আগের চেয়ে বেশি অর্থ ছাড় করেছে।

ইআরডির তথ্যের দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে যে ২৭৮ কোটি ৬১ লাখ ৪০ হাজার ডলার ঋণ-সহায়তা আসে, তার মধ্যে ২৭৬ কোটি ৬১ লাখ ৪০ হাজার ডলার ছিল প্রকল্প সহায়তা। আর ২ কোটি ডলার আসে খাদ্য সহায়তা হিসাবে।

অর্থমন্ত্রী মুহিত জানান, বাংলাদেশ পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থের প্রস্তাব ফিরিয়ে নিলেও অন্য তিনটি প্রকল্পে প্রায় সমপরিমাণ অর্থ দিচ্ছে আন্তর্জাতিক এ অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান। এটা প্রমাণ করে, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের কোনো অবনতি হয়নি।

এর আগে ২০১১-১২ অর্থবছরে মোট ২০৩ কোটি ডলার ঋণ-সহায়তার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে নেওয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে ব্যয় হয় ৭৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। ফলে হাতে পাওয়া প্রকৃত সহায়তার পরিমাণ দাঁড়ায় ১২৪ কোটি ৭৮ লাখ ২০ হাজার ডলার।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে সংস্থাটি বিভিন্ন প্রকল্পে ৬২ কোটি ডলারের মতো ছাড় করে। এ অঙ্ক আগের অর্থবছরের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। এছাড়া বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের ৪৫০ কোটি ডলারের ৩৬টি প্রকল্প চলমান রয়েছে।

এর আগে গত ২০১০-১১ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ১৭৭ কোটি ৭২ লাখ ডলারের বিদেশি সহায়তা এসেছিল, যার মধ্যে সুদ-আসল পরিশোধে চলে যায় ৭২ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। প্রকৃত সহায়তার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০৪ কোটি ৯৬ লাখ ডলারে।

বিগত ২০০৯-১০ অর্থবছরে মোট সহায়তা এসেছিল ২১৬ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের, যার মধ্যে ৬৮ কোটি ৭৪ লাখ ডলার ব্যয় হয় আগের সুদ-আসল পরিশোধে। ওই বছর প্রকৃত সহায়তা ছিল ১৪৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

২০০৮-০৯ অর্থবছরে নেট সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশ হাতে পায় ১০২ কোটি ২৮ লাখ ডলার, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ১৩৭ কোটি ৬৫ লাখ ডলার এবং ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ১০৯ কোটি ৯৫ লাখ ডলার।

২০০৫-০৬ অর্থবছরে এ পরিমাণ ছিল ১০৭ কোটি ৮৮ লাখ ডলার, ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ১০১ কোটি ৫৮ লাখ ডলার এবং ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ৬১ কোটি ৩ লাখ ডলার।

২০০২-০৩ অর্থবছরে প্রকৃত সহায়তা আসে ১১৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার, ২০০১-০২ অর্থবছরে ১০১ কোটি ৯৮ লাখ, ২০০০-২০০১ অর্থবছরে ৯৫ কোটি ২৩ লাখ ডলার এবং ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে ১১৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। (এসআর)

মন্তব্য
লিঙ্ক