

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ঋণের সুদ মওকুফ এবং মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা দিতে সরকার এই তহবিল গঠন করছে।
পুঁজিবাজারের জন্য এর আগে সরকারি উদ্যোগে বড় অংকের মিউচুয়াল ফান্ড গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বড় অংকের অর্থ নিয়ে 'পুনঃঅর্থায়ন স্কিম' গঠনের প্রক্রিয়া এই প্রথম।
এক সাংবাদিক সম্মেলনে সুর চৌধুরী বলেন, "মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে আর্থিক সহযোগিতার লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে একটি উপায় বের করতে বলা হয়েছিল। ওই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এই তহবিল গঠনের একটি প্রস্তাব দিয়েছে। এটা এখনো চূড়ান্ত কিছু নয়। সরকার যদি এই প্রস্তাবে রাজি হয় তবে এই তহবিল কার্যকর করা হবে।"
গত ২০১০ থেকে ২০১১ সালে পুঁজিবাজার ধসের কারণে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো ব্যাপক লোকসানের শিকার হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের বিতরণ করা ঋণের সুদের ৫০ শতাংশ মওকুফ এবং ৫০ শতাংশ ব্লক অ্যাকাউন্টে রেখে ১০ শতাংশ সুদে ঋণ পুনঃ তফসিল করে আদায় করার পরামর্শ দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো তাদের এই লোকসান পুষিয়ে নিতে আর্থিক সহযোগিতার আবেদন করে সরকারের কাছে। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কিভাবে একটি তহবিল গঠন করা যায়, সেজন্য সরকার বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি পন্থা বের করতে বলে।
সুর চৌধুরী বলেন, সরকারের প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক এ ধরনের তহবিল পরিচালনা করলে বাজারে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এক টাকা বের হলে বাজারে তার মূল্য তিন টাকার সমান হয়। যা মূল্যস্থিতিকে প্রভাবিত করে। সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মুনাফা থেকে সরকারের কোষাগারে যে অর্থ জমা হয়, সেই টাকা থেকে ৯০০ কোটি টাকা এই তহবিল গঠনের জন্য দেওয়া হবে। এই অর্থ সরকার তার বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে খরচ করবে। ফলে এখানে মূল্যস্ফীতি ঘটার কোনো আশঙ্কা থাকছে না।
২০১০ সাল থেকে পুঁজি বাজারে ব্যাপক উত্থানপতন শুরু হয়। পরের বছর তা বড় ধরনের ধসের রূপ নেয়। ২০১২ সালের মার্চে গড় লেনদেন হাজার কোটি টাকায় থাকলেও বছর শেষে তা তিনশ কোটি টাকায় নেমে আসে। এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে ২৮ হাজার কোটি টাকা। লোকসানের চাপে গত বছর প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ক্ষদ্র বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়ে যান।
এই হতাশা কাটাতে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) ক্যাপিটাল মার্কেট মাস্টার প্ল্যান অনুমোদন করে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য প্যাকেজ বাস্তবায়ন শুরু হয়। পরিবর্তন করা হয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচকও । অবশ্য সরকারের এতো উদ্যোগের পরও আস্থা ফেরেনি পুঁজিবাজারে। গড় লেনদেন এখনো পাঁচশ কোটি টাকার নিচে।
এস কে সুর চৌধুরী আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এই তহবিল পরিচালনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত থাকবে না। এটি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এ উদ্যোগে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে কি না - সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এস কে সুর বলেন, "সরকার প্রথম বছরেও জনসন্তুষ্টির জন্য কাজ করে, শেষ বছরেও করে। অতএব, এখানে রাজনৈতিক বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি।"
পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন উদ্যোগের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণের বিপরীতে প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি হার কমিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে নিরাপত্তা সঞ্চিতি কমানোর ফলে ব্যাংকগুলোর প্রভিশনিংয়ে ৫০০ কোটি টাকা কম লাগবে, যে অর্থ তারা পুঁজি বাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে।
শেয়ারবাজারে ধসের পর থেকে সরকার বাজারের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার জন্য নানা উদ্যোগের কথা বলে আসছে – কয়েকটি উদ্যোগ ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছেও। কিন্তু বাজার পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি – না বেড়েছে শেয়ারের মূল্যসূচক, না লেনদেনের পরিমাণ। একটি উদ্যোগের ঘোষণা দেওয়ার পর সাময়িকভাবে শেয়ারের দাম বাড়লেও, কয়েকদিনের ব্যবধানে তার চেয়ে বেশি পতন হয়েছে আবার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে, মূলত সেজন্যই এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। সর্বশেষ পুনঃঅর্থায়ন উদ্যোগ সে আস্থা-সংকট কাটাতে কতটা ভূমিকা রাখবে তা এই মুহূর্তে কেউ বলতে পারছেন না। সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছু সময়।(এসআর)

| ||||



