

চলমান অস্থিরতার কারণে বাংলদেশে চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উত্পাদন অর্থাত্ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশ কম হবে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন (এসক্যাপ)।
বৃহস্পতিবার এসক্যাপের 'অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমীক্ষা' প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলা হয়, চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। এবার সরকার প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছিল ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ।
এসক্যাপ বলছে, অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচক পর্যালোচনা করে কয়েক মাস আগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ শতাংশ। তবে বর্তমানে অবস্থা চলছে তাতে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে সরকার প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সেটি অর্জন সম্ভব হবে না। কারণ, প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর ঘাটতি রয়েছে; রয়েছে বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা। এসব সমস্যা অতিক্রম করে তাই ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক নিয়েল ওয়াকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক মুস্তাফা কে মুজেরি।
মির্জ্জা আজিজুল বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় এবার প্রবৃদ্ধি দশমিক ৫ থেকে দশমিক ৬ শতাংশ কমে যাবে।
তিনি বলেন, এসক্যাপের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রবৃদ্ধির দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চারে এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৪৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৬তম অবস্থানে রয়েছে। সেই বিবেচনায় অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের অর্জন ভাল, যদিও বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে।
মির্জ্জা আজিজুল বলেন, বাংলাদেশের দরকার প্রবৃদ্ধি। আর সে সঙ্গে দরকার সমাজের নানা বৈষম্য কমানো ও দারিদ্র্য বিমোচনে আরও জোর দেওয়া। এ জন্য সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থার আওতা ও বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। এক্ষেত্রে যেসব ত্রুটি রয়েছে সেগুলোও দূর করা প্রয়োজন আর তার জন্য প্রশাসনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে হবে।
এসক্যাপ তার প্রতিবেদনে সুপারিশ করেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপির ২২ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় করা দরকার।
মির্জ্জা আজিজুল আরও বলেন, বাংলাদেশের জিডিপিতে রাজস্ব আয়ের অবদান দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। তাই জিডিপিতে রাজস্ব আয়ের অবদান বাড়াতে হবে।
মুজেরি বলেন, চলতি বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি গত দুই বছরের চেয়ে কম হবে। অথচ এটি বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। তার মতে, বাংলাদেশে যেভাবে প্রবৃদ্ধি ঘটাতে চাইছে বাস্তবে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। কেন কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না, সেটি খতিয়ে দেখা দরকার বলে মত দেন তিনি।
প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে মুজেরি বলেন, দেশে বর্তমানে যে যুব সম্প্রদায় রয়েছে, তাদের জন্য যথাযথ কর্মস্থল তৈরির বিষয়টিকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিতে হবে।
নিয়েল ওয়াকার মনে করেন কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বাংলাদেশে রাজস্ব সংগ্রহের ব্যবস্থাকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে বলেও তিনি মত দেন। তাঁর মতে, রাজনৈতিক কারণে দেশের অর্থনীতির যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেই বিষয়টির প্রতি রাজনীতিবিদরা গুরুত্ব দেন না। (এসআর)

| ||||



