এদিকে মোরগেরও মন খারাপ। যদিও তাকে ১২টি রাশির একটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে ড্রাগণ তার আগে স্থান পেয়েছে। নির্বাচনের পর একদিন সে ড্রাগণের কাছে গিয়ে নিজের শিঙ ফেরত আনতে যাওয়ার কথা ভাবতে লাগলো। মোরগটি মনে মনে ভাবছে, ড্রাগণ আমার শিঙ পড়ে নির্বাচিত হয়েছে। ফলে দেখা মাত্র ড্রাগন তাকে আন্তরিক অভ্যর্থনা জানিয়ে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। তাই যথাশিগগির সম্ভব তার শিঙটি ফেরত আনতে যাওয়া উচিত।
যেই কথা সেই কাজ, মোরগ ড্রাগণকে খুঁজতে হ্রদের তীরে চলে যায়। দূর থেকে সে দেখতে পেল, হ্রদের পানিতে ড্রাগণ খেলছে এবং এক জোড়া শিঙ ড্রাগণের মাথার ওপর আছে। মোরগ তাড়াতাড়ি এগিয়ে মাথা তুলে বললো, "ড্রাগণ ভাই, আপনাকে অভিনন্দন। আপনি ১২টি রাশিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন এবং অনেকের আগে স্থান পেয়েছেন। আপনার ইচ্ছা তো পূরণ হলো এবার আমার শিঙ জোড়া আমাকে ফেরত দিন।"
ড্রাগণ আনন্দের সাথে পানি খেলছিল। মোরগের কথা শোনামাত্র আকস্মিকভাবে তার মুখ কালো হয়ে যায়। ড্রাগণ মনে মনে ভাবছে, 'কি করি এখন, এড়িয়ে যাওয়া যাবে না আবার উত্তর না দিলেও চলবে না'। সে বলল, "মোরগ দাদা, দেখো, তুমিতো শিঙ ছাড়াই ১২টি রাশির সারিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছো। তোমার স্থানও খুব পিছনে নয়। তুমি যদি এই শিঙ জোড়া এখন ফেরত নিয়ে যাও তাহলে স্বর্গের রাজা হয়তো তাঁর আদেশও ফেরত নিয়ে যাবে। মানে সে রকম সম্ভাবনা আছে কিনা তাই। আর এখনতো আমি নিজেই আর শিঙ ছাড়া থাকতে পারি না, মাথাটা কেমন যেন ভন ভন করে ঘুরতে থাকে।"
মোরগ বুঝে যায় যে, ড্রাগণ তাকে শিঙ ফেরত দিতে চাচ্ছে না। ফলে সে এখন মজার মজার সব কথা দিয়ে শিঙ ফেরত না দেবার ফন্দি আঁটছে। এবার মোরগও রেগে গেল, সে বলল, "ড্রাগণ ভাই, কথায় আছে 'যে সময় মত ধার পরিশোধ করে, সেই উত্তম, তার পক্ষে পুনরায় ধার পেতে বা সাহায্য পেতে কোন সমস্যা হয় না।' কিন্তু তুমি ধার করা জিনিষ নিজের দখলে রেখে দিবে আবার নিজের বলে চালিয়ে দেবার ফন্দি করছো, এটা কিন্তু ভীষণ অন্যায়।"
এ কথা শুনে ড্রাগণের মুখ লাল হয়ে গেল, হঠাত্ যেন কিছুই বলতে পারলো না। সে তাড়াহুড়ো করে বললো, "মোরগ দাদা, আমি, আমি হঠাত্ আমার একটু অসুখ অসুখ লাগছে। আমি এখন চলে যাই। পরে কথা হবে।" এ কথা বলে সে দ্রুতই হ্রদের পানিতে ডুব দিয়ে হারিয়ে যায় দূরে বহু দূরে।
মোরগ আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল, বুঝে পাচ্ছেনা যে, তার আর কি করা উচিত বা কিভাবেই শিঙ উদ্ধার করা যায়। তারপর সে পানির দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে চিত্কার করে বললো, "ড্রাগণ ভাই, তুমি এভাবে করতে পারো না। আমার শিঙ আমাকে ফেরত দাও।" কিন্তু হ্রদের পানি একটুও নড়লো না। ড্রাগন কোথায়? তার ছায়া তো পাওয়া যায় না। মোরগ বার বার চিত্কার করে ডাকলো, কিন্তু ড্রাগণ পানির নিচে লুকিয়ে থাকে, মোরগের কথার কোনো উত্তর দেয় না সে।
মোরগ বার বার চিত্কার করে ডাকতে ডাকতে ক্লান্ত হয়ে হ্রদের তীরের একটি পাথরের ওপর বসে পরে। এ সময়ে হঠাত্ চেলাপোকার কথা মনে পড়লো মোরগের। চেলাপোকা হচ্ছে এ ঘটনার জামিনদার। ড্রাগনকে রাজি করানোর দায়িত্ব তারও রয়েছে। এরপর মোরগ চেলাপোকাকে খুঁজতে শুরু করলো। অনেক চেষ্টা করে অবশেষে কতগুলো পাথরের মধ্যে তাকে পাওয়া গেল। মোরগটি পুরো ঘটনা চেলাপোকাকে বর্ণনা করে এবং ন্যায়বিচার করার অনুরোধ জানায়।
কিন্তু চেলাপোকা সব কথা শুনার পর বুঝতে পারলো যে, এটা খুব জটিল একটি ব্যাপার। তবে সে জামিন দিয়েছে, কিছু না বললে তো চলবে না। তাই সে মনে মনে ভাবলো, "ড্রাগণ ভাইকেতো আর রাজি করাতে পারবো না। কারন জোরাজোরি করলে হয়তো আমাকে মেরেই বসতে পারে। তবে মোরগকে আমি কেবল মোরগকে সান্ত্বনা দিতে পারি, সেই চেষ্টাই করা উচিত।" সিদ্ধান্ত নেয়ার পর চেলাপোকা আস্তে আস্তে বললো, "এ কাজটা সত্যি ড্রাগণ ভাই একদম ঠিক করে নি। তবে হয় তো সে কেবল মজার জন্য। দু তিন দিন পর নিশ্চয়ই তোমাকে ফেরত দিবে। তুমি চিন্তা করো না। একটু অপেক্ষা করো।" মোরগ রাজি হলো না। সে বলল, "সে যদি এখন আমাকে ফেরত না দিলে আরও সময় লেগে যাবে, আর তখন ফেরত দেয়ার সম্ভাবনা আরোও কমে যাবে।"