Web bengali.cri.cn   
চীনের বারো রাশির গল্প
  2013-04-01 16:49:43  cri

কিন্তু ইঁদুর অন্যদের হাস্য-কটাক্ষ উপেক্ষা করে তার যুক্তি তুলে ধরে দৃঢ়তার সাথে বললো, "স্বর্গের রাজা, তুমি জানো না? মানুষ আমাকে দেখে সবসময় বলে, 'ওরে বাবা! এতো বড় ইঁদুর!' বরং কখনো কাউকে বলতে শুনবেন না যে, 'এতো বড় গরু'।"

স্বর্গের রাজা ইঁদুরের যুক্তি শুনে একটু বিস্মত ও হতবুদ্ধি হয়ে যায়। সে অন্য প্রাণীকে জিজ্ঞেস করলো, "এটা কি সত্যি? তাহলে আমি কেন কখনো শুনিনি?" অন্যরা মনে করে, ইঁদুর বড়াই করছে। কিন্তু ইঁদুর আস্থার সঙ্গে বলল, "আমি চালবাজ না। আপনারা আমার সঙ্গে আসুন, আমি আপনাদের প্রমাণ করে দিবো।"

স্বর্গের রাজাও মনে করে, সত্যের শক্তি কথার চেয়ে বেশি। এরপর রাজা নির্বাচিত সব প্রাণীদের নিজের চওড়া জামার হাতার মধ্যে রেখে পৃথিবীতে চলে যায়, ইঁদুরের কথার সত্যতা পরীক্ষা করার জন্য। সেখানে তারা একটি গ্রামে পৌঁছার পর স্বর্গের রাজা আর অন্য প্রাণী রাস্তার পাশে লুকিয়ে থাকে। এমন সময়ে এক বড় মহিষ মন্থর গতিতে গ্রামের পথ দিয়ে হেটে যাচ্ছিল। পথচারীরা তা দেখে বলল, "এটা কার বাড়ির মহিষ, কেন পথে পথে হাঁটছে? এতো বড় মহিষ জমি চাষের জন্য বেশ ভাল হবে।"

ঠিক এ সময় ইঁদুরটি মহিষের পিঠে লাফ দিয়ে ওঠে পড়ে। লোকজন ইঁদুরটিকে দেখে অবাক হয়ে বললো, "বাহ্, এতো বড় ইঁদুর।" এ কথা শুনে ইঁদুর তো আনন্দে আত্মহারা হয়ে মহিষের পিঠে কয়েকবার ডিগবাজি দেয়, কারণ তার কথা প্রমাণিত হলো। স্বর্গের রাজা আর অন্য প্রাণীরা আর কিছু বলতে পারলো না।

এরপর স্বর্গের প্রাসাদে ফিরে গিয়ে রাজা ঘোষণা করলো, "১২টি রাশির মধ্যে ইঁদুর প্রথম, গরু হচ্ছে দ্বিতীয়।"

ইঁদুরতো এ ফল শুনে মহাখুশি, গানের সুরে নাচতে নাচতে বাড়িতে ফিরে গেল। এদিকে বিড়ালের ঘুম মাত্র ভেঙেছে। সে ইঁদুরের গানের সুর শুনে প্রশ্ন করলো, "ইঁদুর ভাই, অনুষ্ঠানে যাবার সময় কি হয়েছে? আমি কি এক্ষুনি উঠবো?।"

ইঁদুর বললো, "হুম! তা উঠতে পারো তবে, রাশি নির্বাচন শেষ হয়ে গেছে। তুমিতো মরার মতো ঘুমিয়ে ছিলে। সত্যি অতি অলস তুমি। স্বর্গের রাজা ১২টি প্রাণী নির্বাচন করেছেন। আমি প্রথম। আমি হচ্ছি ১২টি রাশির সর্দার।"

বিড়াল বিস্মিত দৃষ্টিতে ইঁদুরের দিকে থেকে বললো, "শেষ হয়েছে? তুমি কেন আমাকে ডাকো নি?"

ইঁদুর হালকা স্বরে বললো, "বেশি কাজ ছিল, মনে নেই।"

বিড়াল এ কথা শুনে রাগে হুশ বিছানা ছেড়ে দাঁড়িয়ে চোখ বড় বড় করে চিত্কার করে বললো, "এ পুচকে ইঁদুর, তুই আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিস। কিন্তু তোর কথা তুই রাখিস নি। তুই ইচ্ছা করে আমাকে নির্বাচন থেক দূরে সরিয়ে রেখেছিস। আমি তোকে ছাড়বো না।"

ইঁদুর কিন্তু বিড়ালের কথা পাত্তাই দিল না। বরং সে বলল, "হ্যাঁ, আমি তখন রাজি হয়েছি, কারণ আমরা এক সাথে থাকি, আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব আছে। কিন্তু তোমাকে ডেকে তুলতেই হবে, এমন দায়িত্ব আমার নেই। আমি সেটা কেন করবো?"

বিড়াল একথায় ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে যায়, হঠাত্ সে ইঁদুরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হিংস্র কণ্ঠে বললো, "তাহলে তুই হবি আজকের দিনের আমার প্রথম খাবার।" বিড়ালের শক্তি অনেক, ইঁদুর পালাতে পারে না, এমনকি ক্ষমা চাওয়ার সুযোগও ছিল না। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে বিড়ালের থাবার নিচে পড়ে প্রাণ হারায়। সেই থেকে ইঁদুর আর বিড়ালের মধ্যে বংশপরম্পরায় শত্রুতার সম্পর্ক এখনো চলছে।

1 2 3 4 5
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক