Web bengali.cri.cn   
চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের বিশ্বমুখী উন্নয়ন পথ
  2012-12-07 20:24:54  cri

 সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর চীনের বেসামরিক বিমানচালনা শিল্পে নিরবিচ্ছিন্ন ও দ্রুত উন্নতি হয়েছে। এমনকি এর শিল্পের আকার, গুণগত মান আর মুনাফা সবই নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

চীনের তিনটি বৃহত্তম বিমান গ্রুপের অন্যতম হলো চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স। বর্তমানে চীনে এ বিমান কোম্পানিতে পরিবহন বিমানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, এর বিমানপথ সবচেয়ে উন্নত এবং বার্ষিক যাত্রী-পরিবহন সবচেয়ে বেশি।

এখন চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের ৪৮০টি যাত্রীবাহী ও মালবাহী বিমান আছে। গত বছর এ কোম্পানি মোট ৮ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার যাত্রী পরিবহন করে। এর মধ্য দিয়ে এ এয়ারলাইন যাত্রী পরিবহণে এশিয়ায় প্রথম এবং বিশ্বে তৃতীয় স্থান দখল করেছে। গত বছর টানা ১ কোটি ঘন্টা নিরাপদ উড্ডয়নের রেকর্ড সৃষ্টির মধ্য দিয়ে চায়না সাউদার্ন চীনের বেসামরিক বিমানচালনার প্রথম 'বিমান চলাচল নিরাপত্তা সংক্রান্ত হীরক তারকা পুরস্কার' পেয়েছে এবং চীনের সর্বোচ্চ নিরাপদ শ্রেণীর এয়ারলাইনে পরিণত হয়েছে।

২০০৫ সালে চায়না সাউদার্ন আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠার কৌশলগত রূপান্তর-লক্ষ্য উত্থাপন করে। চলতি বছর আগস্টে এ কোম্পানি আনুষ্ঠানিকভাবে 'কুয়াংতুং রুট' নামে ইউরোপ, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াকে সংযুক্তকারী আকাশ সেতু চালু করেছে। এটা হচ্ছে চায়না সাউদার্নের আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশগ্রহণের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স চীনের তিনটি বৃহত্তম কেন্দ্রীয় বিমানবন্দরের অন্যতম কুয়াংচৌ বাইইয়ুন বিমানবন্দরকে কেন্দ্র হিসেবে গ্রহণ করে অস্ট্রেলিয়ায় বাজার বিকশিত করেছে। যারা চীনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড যেতে চান, তারা প্রথমে কুয়াংচৌ বিমানবন্দরে এসে সেখান থেকে চায়না সাউদার্নের বিমান যোগে গন্তব্যে যান। শানতুংয়ের যাত্রী ওয়াং ইয়ুন ফেই বলেন, "আমার চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স পছন্দ করার প্রথম কারণ হচ্ছে টিকিটের দাম। আমি পর্যটন সংস্থার মাধ্যমে বিমান টিকিট কিনি। আমি তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন এয়ারলাইনের ফ্লাইটের টিকিটের দাম জেনে নিই, তারপর সবচেয়ে সস্তা ফ্লাইটটা বেছে নিই। চীন থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোর মধ্যে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের কিছুটা প্রাধান্য রয়েছে অন্যান্য কোম্পানির তুলনায়।"

চায়না সাউদার্ন অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড যাওয়ার রুট চালু করায় তাদের ইউরোপীয় যাত্রী-প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৬২০ শতাংশে। চায়না সাউদার্নের তথ্যপ্রচার বিভাগের মাদাম জো ইং পিং বলেন, "প্রতি বছর বিদেশি যাত্রীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এখন ইউরোপে যাওয়া আমাদের ফ্লাইটে অর্ধেকেরও বেশি যাত্রী হচ্ছেন বিদেশি। আগে প্রায় সবই চীনা যাত্রী ছিল।"

চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের অস্ট্রেলিয়া বাজার খোলার কৌশলে গত তিন বছর ধরে ফলপ্রসূ অগ্রগতি হয়েছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বাজারে এ এয়ারলাইন পরিবাহিত যাত্রীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৬ হাজার ৮০০। এ সংখ্যা এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড রুটে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের যাত্রীর সংখ্যা চীন থেকে ওই অঞলে যাওয়া মোট যাত্রীর ৪৫ শতাংশ। বিমানযোগে চীন থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার প্রথম সংযোগস্থল এখন পরিণত হয়েছে কুয়াংচৌ। ২০১০ সালে ১ লাখ ৪৮ হাজার যাত্রী কুয়াংচৌ থেকে অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডে যান। গত বছর এ সংখ্যা ৩ লাখ ৪৮ হাজারে দাঁড়ায়।

চায়না সাউদার্ন এয়ার‍লাইন্স পর্যায়ক্রমে কুয়াংচৌ থেকে সিডনি, মেলবোর্ন, অকল্যান্ড, ব্রিসবেন, পাজ, প্যারিস ও আমস্টারড্যামগামী রুট চালু করেছে। এ বছরের জুনে এ কোম্পানি আবার কুয়াংচৌ থেকে লন্ডনগামী রুট চালু করেছে। এমন একটি বড় আকারের রুট দিয়েই 'কুয়াংচৌ রুট' প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চলতি বছরের অক্টোবরে চায়না সাউদার্ন কুয়াংচৌ থেকে লন্ডনগামী রুটে বিশ্বের অন্যতম বিলাসবহুল যাত্রীবাহী বিমান - এ৩৮০ ব্যবহার শুরু করে। এটা 'কুয়াংচৌ রুটে' নতুন প্রাণশক্তি যুগিয়েছে।

আন্তর্জাতিক রুটের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল হিসেবে আরো বেশি বিদেশি যাত্রী আকর্ষণের উদ্দেশ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চায়না সাউদার্ন বিদেশে নিজের সম্প্রচার কাজের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। বিদেশে এ কোম্পানির ব্র্যান্ড সম্প্রচার বিষয়ক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা চাং রুই সিন বলেন, "চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের আন্তর্জাতিকীকরণ কৌশল চালু হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে। এখন এ ব্র্যান্ডের ভাবমূর্তি চীনের বেশিরভাগ এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এর পাশাপাশি আমরা বিদেশেও ফলাও করে ব্র্যান্ডের প্রচার কাজ করেছি। যেমন ২০১১ সালে আমরা দু'বার অস্ট্রেলিয়ার পর্যটন উন্নয়ন সভা অংশগ্রহণ করেছি। এ বছর আমরা প্যারিসের পর্যটন উত্সবে অংশগ্রহণ করেছি। নভেম্বরে আমরা লন্ডনের বিশ্ব পর্যটন মেলায় অংশগ্রহণ করেছি। এটা হচ্ছে বিশ্বের শীর্ষ পর্যটন মেলা। আমাদের অংশীদার কেবল অস্ট্রেলিয়ায় নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপেও আছে।"

চায়না সাউদার্ন সাফল্যের সঙ্গে আন্তর্জাতিকীকরণের পথে যেতে চাইলে তার ব্যবস্থাপনার মান আর সেবার গুণগত মান অনবরতভাবে উন্নত হওয়া উচিত। এ কোম্পানির বিক্রয় বিভাগের ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপক মাদাম চেন হুই লিন বলেন, "২০১২ সাল হচ্ছে আমাদের ব্র্যান্ড সেবাবর্ষ। যাত্রীরা টিকিট কেনা থেকে শুরু করে বিমানবন্দরে পৌঁছানো এবং বিমানে সেবা গ্রহণ পর্যন্ত আমাদের শ্রেষ্ঠ সেবা উপভোগ করতে পারেন। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আমরা প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলীয় কর্মী নিয়োগ করেছি। এর অনেক আগে থেকে আমাদের দক্ষিণ কোরিয়াগামী ফ্লাইটে দক্ষিণ কোরীয় কর্মী কাজ করেন। তাঁরা হচ্ছেন চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের একটি জানালা। তাঁরাও আশা করেন, চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের সংস্কৃতি এবং চীনের সংস্কৃতিকে তার আরো ভালো দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের যাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেবেন।" (ইয়ু/এসআর)

মন্তব্য
লিঙ্ক