Web bengali.cri.cn   
শেনশি প্রদেশের আপেলশিল্প
  2012-09-14 20:20:37  cri

 বন্ধুরা, প্রতি বছরের জুলাই ও আগস্ট হচ্ছে আপেলের মৌসুম। এ-সময় উত্তর-পশ্চিম চীনের শেনশি প্রদেশের আপেল বন দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। ইয়ান আনের লোওছুয়ান ও ফু জেলা, সিয়ানইয়াংয়ের লিছুয়ান ও সুনঈ, ওয়েইনানের পাইসুই ও ফুচেন হচ্ছে আপেল উত্পাদনের ঘাঁটি। ফল পাকার মৌসুমে এখানে যেন লাল আপেলের সমুদ্র সৃষ্টি হয়। শেনশি প্রদেশে উত্পাদিত ৩০ শতাংশ আপেল ৫০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হয়। সারা বিশ্বের ১০ শতাংশ আপেল শেনশি থেকে আসে। সুপরিচিত কোকা-কোলা, পেপসি, নেসলেসহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো শেনশির আপেলের ঘনীভূত রস ব্যবহার করে।

আপেলের মৌসুমে সবচে সুখী মানুষ হচ্ছেন আপেলচাষী। গাছের শাখায় ঝুলে থাকা একেকটি লাল আপেল তাদের আয়ের প্রধান উত্স। গত কয়েক বছরে লোওছুয়ানের কৃষক লি ওয়েই চুন আপেল চাষ করে স্বচ্ছল হয়েছেন। তিনি দু'তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন এবং মোটরগাড়িও কিনেছেন। এ-প্রসঙ্গে লি ওয়েই চুন বললেন, "আমার বাড়িতে এক হেক্টর ফলবাগান আছে। প্রতি বছর ফল বিক্রি করে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার ইউয়ান আয় হয়। গ্রামে থাকলে এ-আয়ে অনায়াসে চলে যায়। লোওছুয়ানে ভালো মানের ফলবাগান থাকলে টাকার অভাব হয় না।"

শেনশি প্রদেশের পাইসুই জেলার ফলচাষী হো শু ছাং এ-সংবাদদাতাকে বললেন, "চলতি বছর বসন্ত উত্সবের সময় এ-এলাকার সব হিমাগার ফলব্যবসায়ীরা ভাড়া করে নিয়েছিলেন। অতীতে এমনটি কখনোই দেখা যায়নি। এখন ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেশি, আপেল কম। আপেলের দাম বেড়েছে। বর্তমানে এক কেজি ফুজি আপেলের দাম ৬ ইউয়ান। অনুমান করছি, এ-বছর আমার ৮০ থেকে ৯০ হাজার ইউয়ান আয় হবে।"

বন্ধুরা, আপনারা হয়তো জানেন না, দশ বছর আগে কিন্তু শেনশির আপেলের তেমন খ্যাতি ছিল না। এমনকি, বিপুল পরিমাণ আপেল অবিক্রিত থাকতো বলে, অনেক কৃষক ব্যাপকহারে আপেল গাছ কেটেও ফেলতেন। শেনশিতে আপেল চাষ হচ্ছে প্রাচীনকালের হান রাজবংশ আমল থেকে। নয়াচীন প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে শেনশিতে ফলবাগানের আয়তন ছিল মাত্র ৪০০০ হেক্টর এবং বার্ষিক ফল উত্পাদনের পরিমাণ মাত্র ৮২ হাজার টন। শেনশি প্রদেশে উত্পাদিত কৃষিপণ্যের মধ্যে ফলের অংশ ছিল অনেক কম। গত শতাব্দীর ৩০ ও ৪০'র দশক থেকে শেনশি ছিনলিং পাহাড়ের উত্তরাংশে পরীক্ষামূলকভাবে আপেল চাষ শুরু হয়। গত শতাব্দীর ৭০'র দশক থেকে শেনশির আপেল চাষ ওয়েইপেই মালভূমিতে স্থানান্তরিত হয়।

শেনশি প্রদেশের ফলশিল্প প্রশাসন ব্যুরোর উপপ্রধান লিউ লিং সংবাদদাতাকে বলেন, "গত শতাব্দীর ৭০'র দশক থেকে আমরা শেনশির ওয়েইপেই মালভূমিতে ব্যাপকভাবে আপেল চাষ শুরু করি। এ অঞ্চলের প্রকৃতি আপেল চাষের উপযোগী এবং এখানে উত্পাদিত আপেলের গুণগত মানও ভোক্তা ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের কাছে স্বীকৃতি পেয়েছে। এভাবেই ওয়েইপেই মালভূমি আপেল, বরই, পিচ ও খুবানিসহ উত্তর চীনের ফল উত্পাদনের সেরা জায়গার মর্যাদা অর্জন করেছে।"

কিন্তু একসাথে ব্যাপক অঞ্চলজুড়ে আপেল চাষের খারাপ দিকও আছে। ১৯৯৫ সালে শেনশিতে উত্পাদিত অসংখ্য আপেল পচে যায়। তখন অনেক কৃষকে চোখের জল ফেলতে এবং আপেল গাছ কেটে ফেলতে দেখা যায়। সে-সময় এ প্রদেশের আপেলবনের আয়তন ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৬০০ হেক্টর থেকে কমে ৪ লাখ ২০০ হেক্টরে নেমে আসে। এ পরিসংখ্যানের পেছনে লুকিয়ে আছে অসংখ্য ফলচাষীর দুঃখ ও বেদনা। তবে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর আপেল গাছ কেটে ফেলাই উচিত। পুরনো গাছ কেটে ফেলরা মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। বস্তুত, শেনশির আপেলচাষ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেছে।

এরপর কয়েক বছর শেনশি প্রদেশের কৃষিবিশেষজ্ঞরা গ্রামাঞ্চলে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কৃষকদের প্রযুক্তিগত সেবা প্রদান করেন এবং ফলচাষীদের ফলচাষের চারটি প্রধান প্রযুক্তির বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন। তখন থেকে ওয়েইপেই মালভূমিতে দশ বছর স্থায়ী উদ্যানপালন বিপ্লব শুরু হয়। এভাবে শেনশিতে আপেল চাষের প্রকৃতি সম্পূর্ণ বদলে যায়। প্রযুক্তির অদক্ষতার স্থান দখল করে নেয় দক্ষতা। ২০০০ সালে লোওছুয়ান জেলার ফল চাষের প্রবৃদ্ধির হার যেখানে ছিল ৩০ শতাংশ ( অনুকূল ফলের হার ৩০ শতাংশেরও কম। ), সেখানে বর্তমানে তা ৮৫ শতাংশেরও বেশি।

1 2
মন্তব্য
লিঙ্ক