চীনে একটি প্রবাদ আছে: 'চীনের আপেল দেখতে শেনশিতে আসেন, শেনশির আপেল দেখতে লোওছুয়ানে আসেন।' ১৯৪৭ সালে লোওছুয়ান জেলার দাতোং থানার আশি গ্রামের লি সিনআন নামের একটি ছেলে হোনান প্রদেশের লিংপাও থেকে গাধার পিঠে করে ২০০টি আপেলের চারাগাছ নিয়ে এসেছিল। এই ২০০টি চারাগাছ দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পর যখন লোওছুয়ানে পৌঁছাল, তখন দেখা গেল সেগুলো অনেক শুকিয়ে গেছে। তবে লোওছুয়ানের মাটিতে সেগুলো রোপণ করার পর দেখা গেল, চারাগাছগুলো সুন্দরভাবে বেড়ে উঠছে। তখন কিন্তু কেউ ভাবতেও পারেনি যে এই ২০০টি পাতলা আপেল গাছই একদিন লোওছুয়ানের মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, বলতে গেলে ওই ২০০টি আপেল গাছই লোওছুয়ানের হাজার হাজার অধিবাসীকে উন্নত মানের ঘরোয়া বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, ব্যক্তিগত মোটরগাড়ি ও নতুন বাড়িঘরের মালিক বানিয়েছে, তাদের দিয়েছে সুখী জীবন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, লোওছুয়ানের মাটি গভীর, সূর্যালোক পর্যাপ্ত, প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, দিন রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য বেশি, শিল্প দূষণমুক্ত এবং তুষারপাতের সময় তেমন দীর্ঘ নয়। এ-সব বৈশিষ্ট্য আপেল চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভালোমানের আপেল উত্পাদনের জন্য লোওছুয়ান পৃথিবীর সেরা জায়গা।
লোওছুয়ান জেলার আপেলশিল্প প্রশাসন ব্যুরোর কর্মকর্তা ওয়াং চিয়ান ফাং বললেন, "লোওছুয়ান জেলায় আপেল বাগানের আয়তন ৩৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর। এখানকার ফল উত্পাদনের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার ৮৮ শতাংশের বেশি (আমাদের অনুকূল ফল হার ৮৮ শতাংশেরও বেশি)। আপেলচাষ থেকে এখানকার কৃষকদের মাথাপিছু নিট আয় আনুমানিক ৯ হাজার ইউয়ান। গত চার বছর লোওছুয়ানের আপেল উত্পাদনের পরিমাণ একটানা বেড়েছে।"
বর্তমান শেনশি প্রদেশে আপেল বনের আয়তন ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৬০০ হেক্টরেরও বেশি। প্রধান উত্পাদন স্থান হচ্ছে শেনপেইয়ের ইয়ানআন, কুয়ানচোংয়ের থোংছুয়ান, পাওচি, সিয়ানইয়াং ও ওয়েইনান--এ পাঁচটি শহরের ২৫টি জেলা। এর মধ্যে সিয়ানইয়াং শহরের লিছুয়ান জেলায় আপেলবনের আয়তন সবচেয়ে বেশি। সেখানে ২৯ হাজার ৯১১ হেক্টর আপেলবন আছে। বার্ষিক উত্পাদনের পরিমাণ ৬ লাখ টন। চাষের আওতায় আসা জমির পরিমাণ বাড়ানোর সাথে সাথে শেনশি, আপেল চাষের প্রযুক্তি ও আপেল শিল্প চেইন উন্নয়নের ক্ষেত্রে টেকসই অর্থনৈতিক পদ্ধতি অবলম্বন করছে (এক আবর্তনশীল অর্থনীতি পথ অন্বেষণ করেছে)। বর্তমানে শেনশিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আসিয়ান ও উত্তর আমেরিকার প্রত্যয়িত ফল বাগান আছে ২২ হাজার ৬৭৮ হেক্টর; আছে ৪৮ হাজার ২৪ হেক্টর রপ্তানীকারক নিবন্ধিত ফলবাগান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বীকৃত জৈব ফল ঘাঁটি আচে ১০১৪ হেক্টর।
শেনশি প্রদেশের বনশিল্প প্রশাসন ব্যুরোর উপপ্রধান লিউ লিং বলেন, "বিশ্বের অন্যান্য আপেল উত্পাদনকারী দেশ ও চীনের অন্যান্য আপেল উত্পাদনকারী অঞ্চলের তুলনায় শেনশি অনন্য প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এখানকার অপেক্ষাকৃত বিশাল আপেল উত্পাদন এলাকা ও উত্পাদনের অপেক্ষাকৃত উন্নত প্রযুক্তির ফলে শেনশির আপেল আন্তর্জাতিক বাজারে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছে। শেনশির আপেল বিদেশে রপ্তানির জন্য আমরা ৪৮ হাজার হেক্টর রপ্তানিকারক নিবন্ধিত ফলবাগান সনাক্ত করেছি। এ-সব বাগান ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আসিয়ান বা দক্ষিণ আমেরিকা ও উত্তর আমেরিকার প্রযুক্তিগত মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত। তাই আমাদের আপেল আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা মেটাতে পারছে।"
বর্তমানে সারা বিশ্বের চাহিদার ১০ শতাংশ আপেল চীনের শেনশি প্রদেশ থেকে আমদানি করা হয়। শেনশি প্রদেশের ফল শিল্প প্রশাসন ব্যুরোর উপপ্রধান লিউ লিং আরো বলেন, "শেনশির উত্পাদিত আপেলের পরিমাণ চীনে উত্পাদিত মোট আপেলের ৩০ শতাংশ এবং বিশ্বে উত্পাদিত মোট আপেলের ১০ শতাংশ। শেনশির ফলশিল্প এ-প্রদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অর্জন করেছে।"
বস্তুত, শেনশির আপেল-- সৈন্য ও ঘোড়ার টেরাকোটার মতো—প্রদেশটির জন্য এক মনোরম পরিচয় বহন করে। আর শেনশি, তার ফলশিল্পের বিকাশের মাধ্যমে, চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। (ইয়ু/আলিম)
| ||||