সামুদ্রিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কীভাবে সফল হলো চেচিয়াং
2024-04-26 22:08:32

এপ্রিল ২৬, সিএমজি বাংলা ডেস্ক:  বিশ্বব্যাপী পরিবেশের জন্য একটি বড় সমস্যা হলো প্লাস্টিক বর্জ্য। সমুদ্রে প্লাস্টিক বর্জ্য সমস্যার সমাধানে একটি টেকসই কার্যকর পদ্ধতি গ্রহণ করেছে চীনের চেচিয়াং প্রদেশ। 

চেচিয়াং প্রদেশের উপকূলীয় শহর লিনহাই। সমুদ্রে ভাসছে নৌযান। সামুদ্রিক প্লাস্টিক বর্জ্য বাছাই চলছে। সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ বিশ্বজুড়ে একটা বড় সমস্যা চেচিয়াং প্রদেশ সাফল্যের সঙ্গে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করছে।এর ফলে পরিবেশ রক্ষায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হয়েছে দেশ। ব্লু সার্কেল নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পে ডিজিটাল প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। মেরিন প্লাস্টিক বর্জ্য বেছে রিসাইকেল ও পুনরায় উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে অংশগ্রহণকারী  মৎস্যজীবীরা যেমন উপকৃত হয়েছেন তেমনি উপকূলীয় জলের দূষণ কমেছে। 

চেচিয়াং ভিশন ব্লু টেকনোলজি কো.লিমিটেডের অপারেশনস সুপারভাইজার মাও নিংথাও বলেন, "মাছ ধরার মৌসুম শেষ হওয়ার সাথে সাথে, কিছু মাছ ধরার নৌকা বন্দরে ফিরে আসে। পৌঁছানোর পরে, তারা তাদের জরাজীর্ণ এবং ফেলে দেওয়া মাছ ধরার জাল এবং তাদের মাছধরার সময় উদ্ধারকরা জালগুলো জমা দেয়।  পরবর্তীকালে, আমরা এই জালগুলো উদ্ধার করি। সাধারণত , জেলেদের ব্যবহৃত মাছ ধরার জালের আয়ুষ্কাল প্রায় এক বছর। গত বছর, আমরা ২০০০ টন বাতিল মাছ ধরার জাল সংগ্রহ করতে পেরেছি।”

এই প্রকল্পে যুক্ত আছে ৬০ হাজার ব্যক্তি, ২৩৭টি কম্পানি, এবং ১০ হাজার জলযান। বহুমুখী ব্লু সাইকেল কোলবরেশন প্রকল্প গত অক্টোবরে ২৫০০ নমিনেশনের মধ্য থেকে প্রতিযোগিতা করে ২০২৩ সালে আর্থ অ্যাওয়ার্ড জয় করেছে। এটি জাতিসংঘের সবচেয়ে সম্মানজনক পরিবেশ বিষয়ক সম্মাননা। সামুদ্রিক দূষণরোধে সৃজনশীল পরিকল্পনার জন্য এই পুরস্কার জেতে উদ্যোগটি। 

এই প্রক্রিয়ায় মৎস্যজীবীরা জাল ফেলে মাছের পাশাপাশি বর্জ্য সংগ্রহ করেন। সেগুলো পরে বাছাই করা হয়। 

এখন পর্যন্ত, প্রায় ২হাজার ২৫৪ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, যার ফলে প্রায় ২হাজার ৯৩০ টন কার্বন নির্গমন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

এছাড়া প্রকল্পে উৎপন্ন পণ্যের অর্থনৈতিক মূল্য ৫০ মিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার) এর কাছাকাছি পৌঁছেছে, যার একটি অংশ প্রান্তিক  জেলে এবং স্যানিটেশন কর্মীদের সহায়তার জন্য পুনঃবিনিয়োগ করা হয়েছে, যা তাদের গড় মাসিক আয় ৮০০ ইউয়ান বৃদ্ধি করেছে। 

শুধু মাছধরা জাল নয়, প্লাস্টিক বোতল, ফোমের বোর্ডসহ অন্যান্য বর্জ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।


চাও মিয়াওসিং একজন  সামুদ্রিক প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রাহক। তিনি বলেন, ‘ আমি এই এলাকা প্রায় প্রতিদিন ভিজিট করি, যাতে নিশ্চিত হতে পারি যে পুরোপুরি পরিষ্কার করা হয়েছে। আমি প্রতি টুকরো ময়লা পরিষ্কার করি, কিছুই ফেলে রাখি না। আজকে রাতে জোয়ারের সঙ্গে আরও কিছু ময়লা আসবে। আগামিকাল সেগুলোও তুলে ফেলবো। এটা একটা চলমান চক্র।’

সতর্কভাবে সব বর্জ্য বাছাই করা হয়। যেসব প্লাস্টিক রিসাইকেল করা সম্ভব সেগুলো প্লাস্টিক গ্র্যানুলেশন কারখানায় পাঠানো হয়। সেখানে এগুলো থেকে বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক তৈরি হয়। যেমন পলিপ্রোপাইলিন, পলিইথিলিন এবং পলিঅ্যামাইড। 

এই উপাদান দিয়ে নতুন মাছধরা জাল ও অন্যান্য সামগ্রী তৈরি হয়। 

মেরিন প্লাস্টিক থেকে রিসাইকেল করা পলিপ্রোপাইলিনের বাজার প্রতি টন ২৪ হাজার ইউয়ান। অন্যদিকে ভার্জিন ম্যাটেরিয়ালের দর প্রতি টন ৮ হাজার ইউয়ান।

চেচিয়াং ভিশন ব্লু টেকনোলজি কো.লিমিটেডের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন ম্যানেজার ফাং মিন বলেন, ‘আমাদের সংগ্রহ, পরিবহন এবং নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া জুড়ে, আমরা অত্যাধুনিক স্মার্ট যন্ত্রপাতি ব্যবহার করি যা পায়ের ছাপ রেকর্ড করে এবং ছবি ধারণ করে। ব্লকচেইন প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল ট্রেসিং ব্যবহার করে, আমরা ওবিপি (ওশান বাউন্ড প্লাস্টিক) সার্টিফিকেশন পাই। একবার প্রত্যায়িত হলে, শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক কম্পানিগুলি আমাদের সামুদ্রিক প্লাস্টিকের জন্য উচ্চ মূল্য দেয়।’

চীনের পূর্ব উপকূলরেখার মাঝখানে অবস্থিত চেচিয়াং প্রদেশের সমুদ্র এলাকা ২ লাখ ৬০ হাজারবর্গ কিমি। দ্বীপ পর্যটন এবং অফশোর অ্যাকুয়াকালচার হলো উপকূলীয় বাসিন্দাদের আয়ের অপরিহার্য উৎস। এদিকে সমুদ্রের কাছাকাছি উৎস থেকেও আবর্জনা বেড়েছে।

প্রথাগত সামুদ্রিক ধ্বংসাবশেষ ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণকারীদের অভাব, তহবিল এবং স্থায়িত্বের অসুবিধাগুলি কাটিয়ে উঠতে, ব্লু সার্কেল দূষণসমস্যার  একটি টেকসই সমাধান প্রদান করেছে এবং কার্যকরভাবে প্রদেশে উপকূলীয় দূষণ হ্রাস করেছে।

তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায় এই ব্লু সার্কেল প্রকল্প চালু করার পর চেচিয়াং এর উপকূলীয় অঞ্চলের জলের গুণগত মান গত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশর বেশি বেড়েছে। 

ব্লু সার্কেল এখন চীনের অন্যান্য স্থানেও চালু করা হচ্ছে। এই কার্যক্রমে ২ লাখের বেশি জাহাজ কয়েক হাজার উপকূলীয় বাসিন্দা এবং কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠান এই কাজে অংশ নিচ্ছে। আশা করা যায় দূষণ সমস্যার সমাধান এবং বাস্তুতান্ত্রিক পরিবেশ উন্নত হবে।

শান্তা /রহমান