সিএমজি সম্পাদকীয়: ‘অতিরিক্ত উত্পাদন ক্ষমতা’ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যত ভুল
2024-04-25 16:25:55

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গতকাল (বুধবার) চীনে সফর শুরু করেন। চীনে আসার আগে ওয়াশিংটন জানায়, সফরকালে ব্লিঙ্কেন চীনের ‘অতিরিক্ত উত্পাদন ক্ষমতা’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করবেন। মৌলিক অর্থনীতির সাধারণ জ্ঞান রাখেন এমন যে কেউ এ কথা বিশ্বাস করবেন না। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ‘অতিরিক্ত উত্পাদন ক্ষমতা’ নিয়ে বারবার আওয়াজ তুলেছে এবং এটিকে চীনের বিরুদ্ধে ‘অর্থনৈতিক জ্ঞানের যুদ্ধের’ সর্বশেষ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ‘অতিরিক্ত উত্পাদন ক্ষমতা’ নিয়ে কিছু ব্যাখ্যা প্রয়োজন।

যুক্তরাষ্ট্র উত্পাদন ক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে এক করে ফেলে এবং মনে করে বেশি পণ্য রপ্তানি মানে অতিরিক্ত উত্পাদন ক্ষমতা। এটা অর্থনীতির সাধারণ জ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। শ্রমের উচ্চ মাত্রার বিভাজনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উত্পাদন ও চাহিদাকে কোনও নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যায় না। বিভিন্ন দেশের বাস্তব অবস্থা থেকে দেখা যায়, কোনও শিল্পের উত্পাদন ক্ষমতা অভ্যন্তরীণ চাহিদার চেয়ে বেশি হলে বিদেশে রপ্তানি খুব স্বাভাবিক। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে উত্পাদিত চিপ, জার্মানিতে উত্পাদিত গাড়ির ৮০ শতাংশ পণ্য রপ্তানি করা হয়, বোয়িং ও এয়ারবাসের অনেক বিমানও রপ্তানি করা হয়। যদি যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি গ্রহণ করতে হয়, তাহলে মানুষ জিজ্ঞেস করবে: এশিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলোর পণ্য রপ্তানি কি অতিরিক্ত উত্পাদন ক্ষমতার প্রতিফলন? যদি একটি দেশ শুধু নিজের জন্য উত্পাদন করে, তাহলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কীভাবে চলবে?

যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি ধারণা হলো চীনের নতুন জ্বালানি শিল্পের উত্পাদন ক্ষমতা বিশ্বের চাহিদাকে ছাড়িয়ে গেছে। এটি কি সত্যি? আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার অনুমান অনুসারে, কার্বন নিরপেক্ষতার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ২০৩০ সাল নাগাদ নতুন জ্বালানির যানবাহনের বৈশ্বিক চাহিদা ৪ কোটি ৫০ লাখে নিতে হবে, নতুন ফটোভোলটাইকের চাহিদা ৮২০ গিগাওয়াটে উন্নীত করতে হবে, যা ২০২২ সালের তুলনায় যথাক্রমে ৪ দশমিক ৫ ও ৪ গুণ। এর অর্থ হলে বর্তমান উত্পাদন ক্ষমতা বাজারের চাহিদা মেটানো থেকে অনেক দূরে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর নতুন-জ্বালানি পণ্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাজার ও সরঞ্জাম উৎপাদক দেশ হিসেবে চীনের উচ্চমানের উত্পাদন ক্ষমতা অতিরিক্ত নয়, বরং বিশ্বের চাহিদা পূরণের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু।

একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের হৈচৈ তার বিশ্বাস করা পশ্চিমা অর্থনীতির তুলনামূলক সুবিধা তত্ত্বকে লঙ্ঘন করেছে। এই তত্ত্ব অনুসারে, যদি একটি দেশ কম খরচে একটি পণ্য উত্পাদন করতে পারে, তাহলে অন্য দেশগুলোর শুল্ক বাধা সৃষ্টি করা উচিত নয়, বরং এই পণ্য আমদানি করা এবং তাদের তুলনামূলক সুবিধার পণ্য রপ্তানি করা উচিত। চীনের নতুন-জ্বালানি পণ্য যে কারণে তুলনামূলক সুবিধা তৈরি করতে পারে, তা সরকারি ভর্তুকির উপর নির্ভর করে না, বরং নির্ভর করে কোম্পানিগুলোর স্বাধীন উদ্ভাবন, সম্পূর্ণ শিল্প ও সরবরাহ চেইন, অতি-বৃহৎ বাজার এবং প্রচুর মানব সম্পদের উপর।

এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু মানুষ অভিযোগ করেছে, চীনের নতুন-জ্বালানি শিল্প মার্কিন কোম্পানি ও মানুষের কর্মসংস্থানকে প্রভাবিত করছে। ব্লুমবার্গ ওয়েবসাইট সম্প্রতি গ্লোবাল উইন্ড এনার্জি কাউন্সিলের এক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতিটি জটিল বায়ু শক্তির উপাদানের স্থানীয় সরবরাহ চেইন সমস্যা রয়েছে; ইউরোপে উপাদানের অভাবও আরও গুরুতর হচ্ছে। কেবল চীন সরবরাহ চেইন স্থিতিশীল বজায় রাখে, যাতে বায়ু শক্তি সুষ্ঠুভাবে উন্নয়ন করতে পারে। এই উদাহরণ দেখায় যে, নতুন-জ্বালানি শিল্পের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নিজস্ব সমস্যা রয়েছে। আর গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি শিল্পের কর্মী ধর্মঘটের কারণে চীন যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ি রপ্তানি বাড়িয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র জারি করা ‘মূল্যস্ফীতি হ্রাস আইন’ ঐতিহ্যবাহী গাড়ি উত্পাদনকারী শ্রমিকদের বেকারত্বের চাপের মুখে ফেলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এটা বোঝা উচিত, চীনের নতুন-জ্বালানি পণ্য মার্কিন বাজারে প্রবেশে বাধা দিলে তা ভোক্তাদের স্বার্থের ক্ষতি করবে এবং বিশ্বব্যাপী সবুজ রূপান্তর ও উদীয়মান শিল্পের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে। মিথ্যা আখ্যান তৈরি করার পরিবর্তে, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত নিজের প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা উন্নত করা।

(তুহিনা/রহমান)