চোখ জুড়ানো পোর্সেলিন
2024-04-14 14:45:48

এপ্রিল ১৪, সিএমজি বাংলা ডেস্ক:  চীনের কারুশিল্পের এক অনন্য নিদর্শন পোর্সেলিন শিল্প। শতাব্দি প্রাচীন এই রাজকীয় দৃষ্টিনন্দন শিল্প সামগ্রীর এক মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনী সম্প্রতি চিয়াংসি প্রদেশের নানছাং সিটির জাদুঘরে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

চিয়াংসি প্রদেশ রাজকীয় পোর্সেলিন শিল্পের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত। তাই এই প্রদর্শনীকে মনে করা হচ্ছে যেন জন্মভূমিতে এই শিল্পের ফিরে আসা। চিয়াংসি প্রাদেশিক জাদুঘরের একজন কর্মী লিউ ওয়েই। তিনি বলেন, ‘ প্রথমবারের মতো রাজকীয় পোর্সেলিন সামগ্রী তাদের জন্মভূমিতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ফিরেছে। নিদর্শনের গুণগত মান ও সংখ্যা দুই দিক থেকেই ঐতিহাসিক রেকর্ড ভেঙেছে। এই নিদর্শনগুলো ধারাবাহিকভাবে রাজকীয় পোর্সেলিনের সাংস্কৃতিক দিকগুলো তুলে ধরছে এবং রয়াল পোর্সেলিনের মাধ্যমে চীনা সভ্যতার বৈশিষ্ট্য তুলে ধরছে।’

ছয়শ বছর ধরে চিয়াংসি প্রদেশে রয়েল পোর্সেলিন তৈরির জন্য বিখ্যাত। মিং ও ছিং রাজবংশের মানুষ এগুলো ব্যবহার করতেন। বেইজিংয়ের বিখ্যাত রয়েল প্যালেস মিউজিয়াম থেকে এই নিদর্শনগুলো নানছাং জাদুঘরে প্রদর্শনীর জন্য আনা হয়েছে। চিয়াংসি প্রাদেশিক মিউজিয়ামে ১৮০টির বেশি নিদর্শন প্রদর্শিত হচ্ছে যেগুলো মিং ও ছিং রাজবংশের সময়কার। এগুলোর আশি শতাংশ বিরল সাংস্কৃতিক সম্পদ হিসেবে বিবেচিত এর মধ্যে ১২২টি রয়েল প্যালেস মিউজিয়াম থেকে আনা হয়েছে। এগুলোর মান নিয়ন্ত্রণ ছিল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। এই প্রদর্শনীতে কয়েকটি ভেঙে ফেলা নিদর্শনও রাখা হয়েছে।

চিয়াংসি প্রাদেশিক জাদুঘরের আরেকজন কর্মী লি শুয়েলেই। তিনি বলেন, ‘ এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি রঙিন পোর্সেলিনের পেয়ালা যেগুলো মিং রাজবংশের ছ্যংহুয়া সময়ের অর্থাৎ ১৪৬৫ থেকে ১৪৮৭ সালের মধ্যে, যখন এটি সম্পূর্ণতায় পৌছায়। এটির কোন ত্রুটি দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু চাইনিজ শব্দ ছ্যং এ একটি বিন্দু দিতে ভুল হওয়ায় এটিকে ভেঙে ফেলা হয়। হয়তো অসমান মসৃণতা বা অন্যরকম আকারের কারণে এগুলোকে ভাঙা হয়েছিল।’

মিং রাজবংশের ইয়ংলে এবং সুয়ানডে আমলে তৈরি বিখ্যাত নীল ও সাদা পোর্সেলিনের সামগ্রী দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। চীনের ঐতিহ্যবাহী নকশা এসব পোর্সেলিন সামগ্রীকে কারুশিল্পের শীর্ষে পৌঁছে দেয়।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিদেশি মোটিফও দেখা গেছে যা সেসময় বিদেশের সঙ্গে চীনের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের পরিচয় বহন করছে। 

  লিউ ওয়েই বলেন,      ‘এই পোর্সেলিন সামগ্রীতে মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার স্টাইলের মিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়। মিং রাজবংশের সময় ১৫শ শতাব্দিতে নাবিক চেং হ্যর অভিযানকালীন  শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত সামগ্রী থেকে চিংদাচেন পোর্সেলিন বৈশ্বিক পণ্যে পরিণত হয়। চাইনিজ পোর্সেলিন দৈনন্দিন প্রয়োজনকে ছাড়িয়ে শিল্পকর্মে পরিণত হয়। এটা সভ্যতার মধ্যে একটা সংলাপের সেতু গড়ে তোলে। এই শিল্পকর্ম বিশ্বকে চীনা জাতির উন্মুক্ততার চেতনা, অন্তভুর্ক্তিকরণ, শান্তি ও বন্ধুত্বের বার্তা পৌঁছে দেয় এবং অভিন্ন সৌন্দর্যকে তুলে ধরে।’ 

দর্শকরা আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাচীন চীনের এই শিল্পকর্মগুলো আরও ভালোভাবে দেখতে পেরেছেন।থ্রিডি প্রযুক্তির মাধ্যমে  তারা যেন এগুলোকে স্পর্শ করার অনুভূতি পেয়েছেন।

শান্তা/রহমান