দেহঘড়ি পর্ব-৬৫
2024-04-07 19:08:21

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং ভেষজের গুণ নিয়ে আলোচনা ‘হারবাল হিলিং’।

 

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির ভালো সম্পূরক চিকিৎসাব্যবস্থা টিসিএম

ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি স্নায়ুর এক ধরনের ক্ষতি, যা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে ঘটে। রক্তে উচ্চমাত্রায় গ্লুকোজ সারা শরীরের স্নায়ুকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি সাধারণত পায়ের স্নায়ুগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে পা ও হাতে ব্যথা এবং অসাড়তা। এটি পাচনতন্ত্র, মূত্রনালীর, রক্তনালী ও হৃৎপিণ্ডেও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কারও কারও মধ্যে এ রোগের হালকা লক্ষণ দেখা দেয় আবার কারও কারও জন্য এটি বেশ বেদনাদায়ক এবং শারীরিক সক্ষমতা সংহারী হয়ে ওঠে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষেরই ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি হয়ে থাকে।

ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির চিকিৎসায় প্রচলিত চিকিৎসা চিকিৎসাব্যবস্থায় উপসর্গ ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসাব্যবস্থা বা টিসিএম শুধু উপসর্গই নয়, রোগের একটি সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা প্রদান করে। টিসিএমে মনে করা হয়, অন্যান্য রোগের মতো ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি ঘটে শরীরের মূলশক্তি ‘ছি’য়ের ভারসাম্যহীনতার কারণে। টিসিএম তত্ত্বমতে, ডায়াবেটিস ‘ছি’ প্রবাহকে ব্যাহত করে, যার ফলে মেরিডিয়ান ও অঙ্গগুলোতে স্থবিরতা ও ঘাটতি সৃষ্টি হয় এবং স্নায়ুর ক্ষতি হয়।

জানিয়ে দিচ্ছি ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির টিসিএম চিকিৎসার উপায়গুলো সম্পর্কে:

আকুপাংচার: আকুপাংচার টিসিএম চিকিৎসার একটি অন্যতম উপাদান। ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মেরিডিয়ান পয়েন্টগুলোতে আকুপাংচার প্রয়োগ করা হয়, যার লক্ষ্য থাকে ‘ছি’ প্রবাহকে উদ্দীপিত করা এবং নিরাময়কে বেগবান করা। আকুপাংচার রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে এবং স্নায়ুর কার্যকারিতা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।

ভেষজ ওষুধ: ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির কারণ ঘটায় এমন অন্তর্নিহিত ভারসাম্যহীনতা মোকাবেলার জন্য টিসিএম ভেষজসূত্রগুলো খুব সতর্কতার সঙ্গে নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে এমন ভেষজ ব্যবহার করা হয়, যেগুলো নিউরোপ্রোটেক্টিভ, প্রদাহবিরোধী এবং রক্ত-শর্করা-নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। এগুলোর মধ্যে সাধারণত থাকে অ্যাস্ট্রাগালাস (হুয়াং ছি), চীনা মিষ্টি আলু (শান ইয়াও) এবং শিসান্দ্রা বেরি (উ ওয়েই চি)।

মক্সিবাস্টন: ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মক্সিবাস্টনও বেশ উপকারী। এটা রক্ত সঞ্চালনকে উদ্দীপিত করে, মেরিডিয়ানগুলোকে উষ্ণ করে এবং ব্যথা উপশম করে।

ডায়েট: টিসিএম পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার উপর জোর দেয়, যাতে শরীরের স্বাভাবিক নিরাময় প্রক্রিয়া শক্তিশালী হয় এবং ভারসাম্য বাড়ে। ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য টিসিএমে যেসব খাদ্য সুপারিশ করা হয়, সেগুলো হলো গোটা শস্য, শিম, শাকসবজি ও চর্বিহীন প্রোটিন। এগুলো ‘ছি’কে পুষ্ট করে, প্লীহা ও কিডনির মেরিডিয়ানকে শক্তিশালী করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি ব্যবস্থাপনায় একটি উত্তম ব্যবস্থা টিসিএম। তা সত্ত্বেও সর্বোত্তম ফলের জন্য চিকিৎসকরা সাধারণত প্রচলিত চিকিৎসার পাশাপাশি টিসিএম চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দেন।

 

#চিকিৎসার_খোঁজ

চীনের অগ্রসর হৃদরোগ হাসপাতাল ইয়ুননান ফুওয়াই কার্ডিওভাসকুলার হসপিটাল

চিকিৎসা ক্ষেত্রে উৎকর্ষে ইয়ুননান ফুওয়াই কার্ডিওভাসকুলার হসপিটালের মতো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুব বেশি নয়। দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ইয়ুননান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, এই বিখ্যাত সরকারি হাসপাতালটি হৃদরোগের চিকিৎসায় নিজের জন্য একটি বিশেষ স্থান তৈরি করেছে। এটি একটি ট্রিপল-এ ক্যাটেগরির প্রথম শ্রেণির হৃদরোগ হাসপাতাল, যেখানে রয়েছে হৃদরোগ-সম্পর্কিত ২৭টি বিভাগ। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই হাসপাতাল অত্যাধুনিক চিকিৎসা, আন্তরিক পরিচর্যা এবং কার্ডিওভাসকুলার মেডিসিনে যুগান্তকারী গবেষণা ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে।

ইয়ুননান প্রাদেশিক সরকার এবং চীনের বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির যৌথ উদ্যোগে এবং জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের নেতৃত্বে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইয়ুননান ফুওয়াই কার্ডিওভাসকুলার হসপিটাল, যার লক্ষ্য ইয়ুননান প্রদেশ এবং এর বাইরের মানুষদেরকে বিশ্বমানের হৃদরোগ চিকিৎসা প্রদান করা। শুরু থেকেই হাসপাতালটি তার প্রধান মূল্যবোধ - শ্রেষ্ঠত্ব, সততা এবং রোগী-কেন্দ্রিক পরিচর্যার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে।

এ হাসপাতালটির সাফল্যের মূল কারণগুলোর একটি হলো অত্যন্ত দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদল। প্রখ্যাত কার্ডিওলজিস্ট ও কার্ডিয়াক সার্জন থেকে শুরু করে নার্স, প্রযুক্তিবিদ ও সহায়ক কর্মী পর্যন্ত, এ হাসপাতালের প্রত্যেক সদস্যই রোগীদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ক্রমাগত প্রশিক্ষণ, উদ্ভাবন ও সহযোগিতার মাধ্যমে হাসপাতালের কর্মীরা কার্ডিওভাসকুলার মেডিসিনে অগ্রগতির শীর্ষে রয়েছে এবং হৃদরোগের বিস্তৃত ক্ষেত্রে চিকিৎসাসেবা প্রদান করে চলেছে।

ইয়ুননান ফুওয়াই কার্ডিওভাসকুলার হসপিটাল অত্যাধুনিক ক্যাথেটারাইজেশন ল্যাব, উন্নত ইমেজিং সরঞ্জাম এবং সার্জিক্যাল কক্ষসহ প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি দিয়ে সজ্জিত, যার কারণে জটিল হৃদরোগ নির্ণয় করতে এবং নির্ভুল চিকিৎসা সক্ষম এ চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান। এ হাসপাতালের বিশেষ দক্ষতাগুলোর মধ্যে রয়েছে করোনারি ধমনী বাইপাস সার্জারি, এনজিওপ্লাস্টি, ভালভ মেরামত এবং হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন।

ক্লিনিকাল সেবার পাশাপাশি, ইয়ুননান ফুওয়াই হসপিটাল হৃদরোগ গবেষণা এবং শিক্ষার সাথে জড়িত সক্রিয়ভাবে। হাসপাতালের গবেষণা বিভাগ হৃদরোগ বোঝা এবং চিকিৎসার অগ্রগতির লক্ষ্যে যুগান্তকারী গবেষণা পরিচালনা করে। এর শিক্ষাকার্যক্রমগুলো পরবর্তী প্রজন্মের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করে। নেতৃস্থানীয় একাডেমিক প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে, ইয়ুননান ফুওয়াই হসপিটাল কার্ডিওভাসকুলার মেডিসিনে জ্ঞানের বিশ্বে এবং ভবিষ্যতের হৃদরোগের চিকিৎসার দিক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

ক্লিনিকাল ও একাডেমিক কার্যক্রমের বাইরে ইয়ুননান ফুওয়াই কার্ডিওভাসকুলার হসপিটাল কমিউনিটি আউটরিচ এবং জনস্বাস্থ্য উদ্যোগের প্রতি গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। হৃদরোগ প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হাসপাতালটি নিয়মিত বিনামূল্যে স্ক্রীনিং, স্বাস্থ্য মেলা এবং শিক্ষামূলক সেমিনার আয়োজন করে। এ হাসপাতাল চায় মানুষের মধ্যে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সমাজে কার্ডিওভাসকুলার রোগের বোঝা কমাতে এবং সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে।

নিজের শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ইয়ুননান ফুওয়াই কার্ডিওভাসকুলার হসপিটাল অসংখ্য স্বীকৃতি পেয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে জয়েন্ট কমিশন ইন্টারন্যাশনালের (জেসিআই) মতো অনেকগুলো মর্যাদাপূর্ণ সংস্থার স্বীকৃতি।

 

#হারবাল_হিলিং

ফিভারফিউয়ের নানা গুণ

ফিভারফিউ ডেইজি পরিবারের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ, যা প্রাচীনকাল থেকে ঐতিহ্যবাহী ওষুধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পাশাপাশি মাথাব্যথা ও অন্যান্য অসুস্থতার চিকিৎসায় একটি সম্পূরক ডায়েট হিসাবে এবং সাময়িক ত্বকের যত্নে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে এটি ব্যবহৃত হয়। ট্যানাসেটাম পার্থেনিয়াম নামেও পরিচিতি এ ভেষজ। জানিয়ে দিচ্ছি ফিভারফিউয়ের বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত উপকারিতা সম্পর্কে:

মাইগ্রেন উপশম করে: মাইগ্রেনের উপসর্গ দূর করার ক্ষেত্রে কার্যকর ফিভারফিউ। ১৭০ জনের উপর পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা ফিভারফিউ গ্রহণ করেন তারা অন্যদের তুলনায় কম মাইগ্রেন অনুভব করেন। এ গবেষণার ভিত্তিতে ফিভারফিউকে মাইগ্রেনের বিরুদ্ধে কার্যকর বলে মনে করা হয়।

ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ করে: টেস্ট-টিউব গবেষণা দেখা গেছে, ফিভারফিউতে থাকা যৌগগুলো নির্দিষ্ট ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে৷

ব্যথা উপশম করে: ফিভারফিউয়ের প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে।

মেজাজ ভালো রাখে: ইঁদুরের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, ফিভারফিউ উদ্বেগ ও বিষণ্নতার লক্ষণগুলো কমাতে সাহায্য করে৷

রোজেসিয়া সারায়: ফিভারফিউ নির্যাসসমৃদ্ধ ক্রিম প্রদাহ কমিয়ে ব্রণ রোজেসিয়ার চিকিৎসায় সহায়তা করে৷

 

 ‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।