‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৫৮
2024-02-20 19:31:48

  


এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে   

১। আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র লংম্যান গ্রোটোস 

২। ঘুরে আসুন ইউয়ানথোং টেম্পল থেকে  

৩। চীনের বসন্ত উত্সবে পর্যটকের সংখ্যা ৪৭ দশমিক ৪ কোটি


বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’  

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"। 

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।    

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৫৮তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।        

১। আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র লংম্যান গ্রোটোস 

মধ্য চীনের হ্যনান প্রদেশের অন্যতম একটি পর্যটন আকর্ষণের নাম লংম্যান শিখু বা লংম্যান গ্রোটোস। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যা লংম্যান গ্রোটোস নামেও পরিচিত। চীনের হ্যনান প্রদেশের লুইয়াং শহরে গেলে দেখা যাবে এটি। 

 

দেড় হাজার বছর আগে শাক্যমুনিদের বিশাল সব মূর্তি বানানো হয় গুহার ভেতর। এতদিনেও সেই স্থাপনাগুলো আছে অক্ষত। তবে দিন দিন বাড়ছে পর্যটক, বাড়ছে লংম্যান শিখুকে দেখার আগ্রহও। আর তাই এ অতিকায় মূর্তি ও এর পরিবেশটাকে আরও  বেশি মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে তৈরি করা হয়েছে রেপ্লিকা। আর এই রেপ্লিকাগুলো বানানো হয়েছে আসল স্থাপনার আকারেই। 

রেপ্লিকা তৈরিতে একদিকে যোগ করা হচ্ছে অতিকায় ডিজিটাল ডিসপ্লে। অন্যদিকে থ্রিডি প্রিন্টারে বানানো হচ্ছে ভাস্কর্য। যার ফলে পর্যটকরা সরাসরি লুইয়াংয়ে না গিয়েও জানতে ও উপভোগ করতে পারবেন হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য।

 

চীনের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক ছাত্র জানালেন, ‘লুইয়াং-এর একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে। এখানকার মূর্তিগুলি দীর্ঘ দিনের বাতাস ও বৃষ্টির হাত থেকে টিকে আছে। আমি মনে করি আধুনিক সময়ে আমার মতো মানুষও যে এগুলোর দেখা পাবে, এই ব্যাপারটা বেশ অর্থবহ।’  

সাধারণ ছোট আকারের ভাস্কর্য বা চিত্রকর্মেরই রেপ্লিকা বানানো হয়। কিন্তু লংম্যান গ্রোটোসের বেলায় চীনের পর্যটন কর্তৃপক্ষ আরও একধাপ এগিয়ে। ত্রিডি প্রিন্টার দিয়ে বিশালাকার মূর্তিগুলোর আকারেই তৈরি হয়েছে রেপ্লিকা, সেই সঙ্গে গোটা গুহাটিও তৈরি করা হচ্ছে প্রিন্টারে।

  

লংমেন গ্রোটোস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য কেন্দ্রের পরিচালক কাও চুনপিং। তিনি বললেন, ‘আমরা ডিজিটাল সংস্কার এবং থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি ব্যবহার করছি যাতে হারিয়ে যাওয়া সাংস্কৃতিক নিদর্শনগুলোকে হুবহু তাদের তাদের আসল চেহারায় সবাই দেখতে পায়। যে মূর্তিগুলোর দেহাবশেষ বা মাথা ছিল না, সেগুলোকে পুনরায় সংযুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। শেনচেন, শাংহাই ইউনিভার্সিটি ও ন্যাশনাল মিউজিয়ামের মতো জাদুঘরেও এগুলো রাখা যাবে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ও থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের সাহায্যে প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে একটি আস্ত গুহার প্রতিলিপিও তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।’ 

 

এখন লংম্যান গ্রোটোসের রেপ্লিকা দেখতেও পর্যটকদের ভিড় লেগে আছে। রেপ্লিকা তৈরি ও সেগুলোর ডিজিটাল প্রদর্শনী দেখেও তারা মুগ্ধ। 

কানাডা থেকে আসা এক পর্যটক বললেন,  ‘এটি এককথায় অসাধারণ। এ রেপ্লিকাগুলোর তৈরির সমস্ত কাজ দেখেছি। এগুলো বেশ আকর্ষণীয়।’

চীনে এবারের চান্দ্র নববর্ষের ছুটিতেই লংম্যান গ্রোটোস দেখতে গিয়েছিলেন ৯৬ হাজারেরও বেশি পর্যটক। যা গতবছরের দ্বিগুণেরও বেশি। এতে করে বোঝা যায় যে চীনের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি স্থানীয় ও বিদেশিদের আগ্রহও বাড়ছে হু হু করে। লংম্যান গ্রোটসের পর্যটন কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এ বছর অতিকায় এ মূর্তি ও সেগুলোর অনবদ্য ডিজিটাল রেপ্লিকা দেখতে আসবেন অন্তত ৫ লাখ পর্যটক।

প্রতিবেদন- ফয়সল আবদুল্লাহ 

সম্পাদনা- আফরিন মিম 


২। ঘুরে আসুন ইউয়ান থোং টেম্পল থেকে  

কুনমিং শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি বিখ্যাত পর্যটনস্থান ইউয়ান থোং সি। বা ইউয়ান থোং টেম্পল। এটি থাং রাজবংশের সময়কার একটি বিখ্যাত বৌদ্ধ মন্দির। দক্ষিণ চীনের সবচেয়ে প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির এই ইউয়ান থোং সি।   

অষ্টম শতাব্দির শেষ দিকে এবং নবম শতকের শুরুতে নির্মাণ করা হয় এই মন্দির । থাং রাজবংশের সময়ে এই এলাকায় ছিল নানচাও রাজ্য। পরবর্তীতে অনেকবার সংস্কার হয় এই মন্দির। 

ছিং রাজ বংশের সম্রাট খাংসির সময়ে মন্দির কমপ্লেক্সের বর্তমান আকার স্থির হয়। এই পুরো কমপ্লেক্স জুড়ে  রয়েছে বড় মন্দির, জলাশয়, সেতু, অষ্টকৌণিক প্যাভিলিয়ন, তামার বুদ্ধ কক্ষ, ইউয়ান থোং কক্ষ, কাঠের কোরিডর এবং অন্যান্য নানা স্থাপনা।  

 

অন্যান্য বৌদ্ধ মন্দিরের সঙ্গে এই মন্দিরের একটা বড় পার্থক্য হলো, সাধারণত চীনের বৌদ্ধ মন্দিরগুলো নিচ জায়গা থেকে শুরু হয় ধীরে ধীরে উঁচুতে ওঠে। কিন্তু এখানে উঁচু জায়গা থেকে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে নামতে হয়। 

প্রধান মন্দিরের পিছনের পাহাড়ে রয়েছে দুটি গুহা। বলা হয়ে থাকে এই গুহায় এখনও লুকিয়ে আছে ড্রাগন। অষ্টম শতকের দিকে এখানে নাকি এক সন্ন্্যাসী বাস করতেন। যিনি ড্রাগনের সঙ্গে জাদুর খেলা দেখাতেন। সেই ড্রাগনরাই এখনও বাস করছে গুহার ভিতর। তবে জাদুর কারণে তারা বাইরে আসতে পারে না। 

 

মন্দির কমপ্লেক্সের প্রতিটি স্থাপনার কারুকার্য অসাধারণ। এখানে যে কাঠের করিডোর এবং জলাশয় ও পাথরের সেতু রয়েছে তা অপূর্ব সুন্দর। তাইতো এসব স্থাপনা মুগ্ধ কোঁরে পর্যটকদের।

ইউয়ান থোং সির কাছেই রয়েছে রেস্টুরেন্ট পাড়া এবং শপিং এলাকা। সুস্বাদু এসব খাবার খুবই জনপ্রিয় পর্যটকদের কাছে। তাছাড়া সব বয়সীদের বাহারি পোশাক, চীনা ঐতিহ্যবাহী আনুষঙ্গিক নানা তৈজসপত্র পাওয়া যায়  এখানে। 

 

কুনমিংয়ের সাবওয়ে লাইন দুই এর ছুয়ানসিনকুলোও স্টেশনে নেমে পশ্চিম দিকে মিনিট পনেরো হাঁটলেই ইউয়ানথোং টেম্পলে পৌছানো যায়। এটি ইউননান বিশ্ববিদ্যালয়ের শহরের ক্যাম্পাস থেকেও খুব কাছে। ৮৫, ১০০, ২৩৫ ১১৯ নম্বর বাসে চড়ে এখানে পৌছানো যায়। মন্দিরের সঙ্গেই রয়েছে ইয়ানথোং পাহাড়। এই পাহাড়ের ঢালেই মন্দির। মন্দিরে প্রবেশ করতে ছয় ইউয়ান দিয়ে টিকেট কাটতে হয়। 

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া 

সম্পাদনা- আফরিন মিম 


৩। টুকরো খবর- 

চীনের বসন্ত উৎসবে পর্যটকের সংখ্যা ৪৭ দশমিক ৪ কোটি 

চীনের বসন্ত উৎসবের ছুটিতে জনগণ ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করছেন। শুধু যে দূরপাল্লার ভ্রমণ করছেন তা নয়, কাছাকাছি পর্যটন স্থান, জাদুঘর, পার্ক, ঐতিহাসিক স্থান ও প্রাকৃতিক দৃশ্যের স্থানগুলোতেও বেড়াচ্ছেন তারা।

চলতি বছরের বসন্ত উৎসবের আট দিনের ছুটিতে দেশব্যাপী ৪৭ দশমিক ৪ কোটি অভ্যন্তরীণ পর্যটন ভ্রমণ হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। চীনের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

 

মন্ত্রণালয় ‘আনন্দের সাথে বসন্ত উত্সব উদযাপন’ থিমভিত্তিক কার্যক্রম আয়োজন করে, উৎপাদন নিরাপত্তা এবং ছুটির বাজারের কাজ সমন্বিত করে একটি স্থিতিশীল এবং সুশৃঙ্খল সাংস্কৃতিক ও পর্যটন বাজার পরিবেশ নিশ্চিত করে।

এছাড়া এবারের বসন্ত উত্সবের ছুটির সময় ১৩ দশমিক ৫১৭ মিলিয়ন মানুষ চীনে প্রবেশ এবং প্রস্থান করেছে, যা গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৮ গুণ বেশি। চীনের জাতীয় জাতীয় ইমিগ্রেশন প্রশাসন এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম 

সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ



ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম 

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী