‘চলতি বাণিজ্য’
2024-02-02 17:33:15

 

চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান

‘চলতি বাণিজ্য’

চলতি বাণিজ্যের ৫৫তম পর্বে থাকছে:

১.  চীন-ফ্রান্স ৬০ বছরের সম্পর্কে বেড়েই চলেছে বাণিজ্য

২.  জাপানকে টপকে বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০০ ব্রান্ডের তালিকায় ৪৮ চীনা কম্পানি

৩. থাইল্যান্ডের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবে চীন

চীন-ফ্রান্স ৬০ বছরের সম্পর্কে বেড়েই চলেছে বাণিজ্য

১৯৬৪ সালে তৎকালীন প্রধান পশ্চিমা শক্তি হিসেবে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে ফ্রান্স। বিগত ছয় দশকে চীন-ফ্রান্স অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হয়েছে। ক্রমাগত বেড়েছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ এবং পারস্পরিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ। বর্তমানে ফ্রান্স ইউরোপীয় ইউনিয়নে চীনের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার, তৃতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগ উৎসদেশ এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রযুক্তি রপ্তানিকারক দেশ। এদিকে, চীন এশিয়ায় ফ্রান্সের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালে দুই দেশের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৫৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে চীন ফ্রান্স থেকে পণ্য আমদানি করেছে ২৭ দশমিক ১ এবং চীন থেকে ২৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ফ্রান্সে রপ্তানি হয়েছে। ২০২৩ সালে দুই দেশের মোট দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ বেড়ে ৭৮ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

চীনে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগকারী ইউরোপীয় দেশ ফ্রান্স। দেশটির ৩ লাখের বেশি কর্মচারী এবং ২ হাজারেরও বেশি বিনিয়োগ কোম্পানি রয়েছে চীনে রয়েছে।

সম্প্রতি কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৬০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং বলেন, “৬০ বছর আগে চীন ও ফ্রান্সের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ছিল, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাসে একটি বড় ঘটনা। বিগত ৬০ বছরে, চীন-ফ্রান্স সম্পর্ক সর্বদা পশ্চিমা দেশগুলির মধ্যে অগ্রভাগে রয়েছে। যা উভয় দেশের জনগণের জন্য সুবিধাজনক এবং বিশ্বশান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে অবদান রেখেছে। ২০২৪ সালের চীন-ফ্রান্স সংস্কৃতি ও পর্যটন বর্ষ এবং প্যারিস অলিম্পিককে ও মানবিক সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রসারিত করতে হবে। পাশাপাশি মানুষের মধ্যে বন্ধনকে উন্নীত করাকে সুযোগ হিসেবে নিতে হবে।”

চীনে ফ্রান্সের প্রধান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে ফ্যাশন, জ্বালানি অবকাঠামো ও কৃষিপণ্য। ফ্রান্সে চীনের রফতানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে নির্মাণ যন্ত্রাংশ, শিল্পোৎপাদন সামগ্রী, ইস্পাত, ইলেকট্রনিকস, বস্ত্র ও পোশাক এবং গৃহস্থালি পণ্য। সাম্প্রতিক সময়ে দুইদেশ যাত্রীবাহী গাড়ি ও উড়োজাহাজ, পানি ব্যবস্থাপনা, রাসায়নিক ও ওষুধ পণ্যসহ বিভিন্ন খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করেছে।

চীনের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারীর আগে এশিয়ান পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি মানুষ চীন থেকে ফ্রান্সে গিয়েছে। চীনা পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ ফ্রান্স। ২০১৯ সালে ২ মিলিয়নেরও বেশি চীনা পর্যটক ফ্রান্স ভ্রমণ করেছিলেন।

এ ধারা পুনরায় শুরু করতে সম্প্রতি দুই দেশ পরীক্ষামূলকভাবে ভিসা-মুক্ত নীতি গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি চীন ও ফ্রান্সের ২২২টি শহর এবং প্রদেশের মধ্যেও সহযোগিতা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

।। প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

।। সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

কোম্পানি প্রোফাইল:

জাপানকে টপকে বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০০ ব্রান্ডের তালিকায় ৪৮ চীনা কম্পানি

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজারে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে চীনা ব্র্যান্ডের বিভিন্ন পণ্য। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গাড়ি থেকে শুরু করে মোবাইল ফোন প্রায় সব ক্ষেত্রেই আধিপত্য চীনা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০০টি ব্রান্ডের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ৪৮টি চীনা ব্রান্ড।

প্রথমবারের মতো জাপানকে ছাড়িয়ে বিশ্বের শীর্ষ ৫০০টি প্রভাবশালী ব্র্যান্ডের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ৪৮টি চীনা কম্পানি। পাশাপাশি চীনের কম্পানিগুলো সম্মিলিতভাবে বিশ্বব্যাপী তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে।

২০২৩ সালের বিশ্বব্যাপী ৫০০টি প্রভাবশালী ব্র্যান্ডের ২০তম সংস্করণে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বিশ্ব বাজারে ব্রান্ডের প্রভাব, বাজার বিকাশ এবং লাভের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে এ তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে।

সর্বশেষ প্রকাশিত এ তালিকায় শীর্ষ তিন স্থান মাইক্রোসফ্ট, অ্যাপল এবং অ্যামাজনের দখলে রয়েছে।

গত মাসে নিউইয়র্কে প্রকাশিত তালিকায় বলা হয়েছে, তালিকার শীর্ষ ৫০০ কম্পানির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৩টি ব্র্যান্ড রয়েছে। চীনের কম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে স্টেট গ্রিড কর্পোরেশন, টেনসেন্ট, হায়ার, হুয়াওয়ে, চায়না রিসোর্সেস, চায়না লাইফ, মাউতাই, উলিয়াংয়ে, চায়না সাউদার্ন পাওয়ার গ্রিড, সিংতাও ব্রুয়ারি, সিনোচেম এবং হেংলি।

ব্র্যান্ডের প্রভাবের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়কে প্রধান সূচক হিসেবে ধরা হয়েছে। এগুলো হলো- বাজারের শেয়ার, ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং বিশ্ব নেতৃত্ব। বিশ্ব ব্র্যান্ড ল্যাব প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের শীর্ষ ৫০০টি প্রভাবশালী ব্র্যান্ডের তালিকার তৈরিতে বিশ্বজুড়ে ৮ হাজারেরও বেশি প্রথম সারির কম্পানির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছে। ২০২৩ সালের এ তালিকায় ২০২৩ সালে ৩২টি দেশ এবং অঞ্চলের বিভিন্ন কম্পানির নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এ তালিকায় চীনের নতুন প্রতিষ্ঠান পলি, টিকটক, চায়না হুয়াডিয়ান, টংওয়েই সোলার, চায়না ন্যাশনাল এভিয়েশন ফুয়েল এবং বোসিডেংসহ বিভিন্ন দেশের মোট ২৫টি নতুন প্রতিষ্ঠান স্থান করে নিয়েছে।

৪৮টি চীনা ব্র্যান্ডের মধ্যে, মাউতাই, উলিয়াংয়ে, সিংতাও এবং ব্যাংক অব চায়না একশ বছরের বেশি সময় ধরে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের ইমেরিটাস অধ্যাপক জন ডেইটন। তিনি চীনের হংকংয়ে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড এক্সিকিউটিভ সামিট এবং বিশ্বের ৫০০টি প্রভাবশালী ব্র্যান্ডের তালিকা প্রকাশ অনুষ্ঠানে জানান, ব্র্যান্ডগুলোকে আরও কার্যকর এবং ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রসারের জন্য নির্মাতা এবং প্রভাবশালীদের ব্যবহার করা উচিত।

এ সময় তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় পণ্য বিপণনে চীনের সৃজনশীলতার প্রশংসা করেন। তার মতে চীনের নেতৃত্বের কারণে পণ্যের ব্র্যান্ডিং পদ্ধতি সম্ভবত এশিয়ানদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। 

।। প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

।। সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

ভিনদেশে চীন:

থাইল্যান্ডের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবে চীন

চীন ও থাইল্যান্ডের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে পরবর্তী বছরগুলোতে বেড়েছে দুই দেশের বাণিজ্য। ২০২৩ সালের প্রথম দশ মাসে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১০৫ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। চীন টানা ১১ বছর ধরে থাইল্যান্ডের বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার এবং থাইল্যান্ডের বৃহত্তম কৃষি বাজার। থাইল্যান্ডের ৯০ শতাংশ ফল চীনে রপ্তানি করা হয়। এর মধ্যে শুধুমাত্র গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল রপ্তানির পরিমাণ ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে থাইল্যান্ডে বাণিজ্যিক সহযোগিতা এবং বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধি করতে আগ্রহী চীন। দেশটির এমন আগ্রহের কথা জানিয়েছেন হুনান নরমাল ইউনিভার্সিটির ডিপ্লোম্যাসি স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক থেং চিয়ানছুন।

তিনি জানান, চীন ও থাইল্যান্ড বাণিজ্য অনেক ক্ষেত্রে পরিপূরক এবং এক্ষেত্রে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। চীনের পণ্যগুলো থাইল্যান্ডের নাগরিকরা স্বাগত জানাবে এবং থাইল্যান্ডের কৃষি পণ্যগুলো চীনারা স্বাগত জানাবে। সুতরাং এটি দুই দেশের জন্য খুবই ভাল। দুই পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য, শুধু পণ্যের আদান-প্রদান নয়, দেশটিকে আর্থিক খাতেও সহযোগিতা দেবে চীন।

২০২৩ সালের প্রথম নয় মাসে, চীনের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাইল্যান্ডে ২৬৪টি প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১৯৬ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। এসব বিনিয়োগের মোট অর্থমূল্য ৯৭ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন বাথ। থাইল্যান্ডে বিদেশী বিনিয়োগের বৃহত্তম উৎস দেশ হিসেবে চীন তার অবস্থান বজায় রেখেছে।

তিনি আরও জানান, থাইল্যান্ডে চীন অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে থাকবে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ থাইল্যান্ড।

এদিকে থাইল্যান্ডে চীনা বিনিয়েোগে নির্মাণ করা হচ্ছে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্ক। এটি থাইল্যান্ডের প্রথম স্ট্যান্ডার্ড-গেজ হাই-স্পিড রেলওয়ে। দক্ষিণ চীন সাগড়পারের তিনটি দেশ চীন, লাওস ও থাইল্যান্ডকে যোগাযোগের এক সুতোয় গেথেছে এই রেলপথ।

এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ব্যাংকক থেকে সীমান্ত শহর নং খাই পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে। একটি সেতু চীন-লাওস রেলওয়েকে যুক্ত করবে। ফলে ব্যাংকক থেকে লাওস হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইয়ুননান প্রদেশের কুনমিং পর্যন্ত ট্রেনে ভ্রমণ করা সম্ভব হবে। ফলে এ অঞ্চলের অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নে যোগাযোগের এই প্রকল্প বিশাল ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করে চীন। বিশেষ করে চীনের বিশ্বাস, এই সংযোগ তিন দেশের মধ্যে পণ্য ও মালামাল এবং সাধারণ মানুষের যোগাযোগ বৃদ্ধিতে নজিরবিহীন ভূমিকা পালন করবে।

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী