চীন-মালদ্বীপ সহযোগিতার নতুন সূচনা-বিন্দু
2024-01-14 18:55:14

গত ৮-১২ জানুয়ারি, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু চীন সফর করেন, যাকে চীন-মালদ্বীপ সম্পর্কের একটি নতুন সূচনা-বিন্দু হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে৷

এ বছরটি চীন-মালদ্বীপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্যও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ কারণ, এটি ২০১৪ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের মালদ্বীপে ঐতিহাসিক রাষ্ট্রীয় সফরের ১০ম বার্ষিকীকে চিহ্নিত করে।

মুইজ্জুর চীন সফরের সময়, দুই রাষ্ট্রপ্রধান ঘোষণা করেন যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে একটি ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বে উন্নীত করা হবে, যা চীন-মালদ্বীপ সহযোগিতার একটি নতুন সূচনা-বিন্দু।

চীন-মালদ্বীপের বন্ধুত্ব সুদূর অতীতে শুরু হয়ে অনেক দূর এগিয়েছে। মিং রাজবংশের সময়কালে, চীনা নৌ অভিযাত্রী চেং হ্য, জাহাজের বহর নিয়ে, দুবার মালদ্বীপে গিয়েছিলেন। মালদ্বীপের রাজা ইউসুফও তিনটি ভিন্ন অনুষ্ঠানে চীনে দূত পাঠিয়েছেন।

দ্বীপ দেশটি প্রাচীন সামুদ্রিক সিল্ক রোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ যাত্রাপথ ছিল। মালদ্বীপে আবিষ্কৃত প্রাচীন চীনামাটির বাসন এবং মুদ্রা দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময়ের ঐতিহাসিক সাক্ষী।

চীন ও মালদ্বীপের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে বিগত ৫২ বছরে, দুই দেশ সর্বদা একে অপরকে সম্মান ও সমর্থন করেছে, পারস্পরিক সুবিধা এবং লাভের জন্য একে অপরের সাথে সমানভাবে আচরণ করছে, সার্বিকভাবে বড় এবং ছোট দেশের চমৎকার সম্পর্কের একটি মডেল স্থাপন করেছে।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে মালদ্বীপে প্রেসিডেন্ট সি’র রাষ্ট্রীয় সফরের সময়, উভয়পক্ষ একটি ভবিষ্যত-ভিত্তিক, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সম্মত হয়।

১০ জানুয়ারি বেইজিংয়ে মুইজ্জুর সঙ্গে বৈঠকেও প্রেসিডেন্ট সি তাঁর মালদ্বীপ সফরের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ২০১৪ সালে তাঁর মালদ্বীপ সফরের সময় দুপক্ষ একমত হয় যে, তারা ভবিষ্যতমুখী সার্বিক বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করবে। গেল ১০ বছরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এবং ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের আওতায় যৌথ নির্মাণসহ নানা ক্ষেত্রের আদান-প্রদান ফলপ্রসূ হয়েছে।

সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, চীন-মালদ্বীপ সম্পর্ককে সার্বিক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশিদারিত্বের সম্পর্কে উন্নীত করা দুদেশের উন্নয়নের প্রয়োজন এবং তাদের জনগণের প্রতাশ্যার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। মালদ্বীপের সঙ্গে নানা ক্ষেত্রে বিনিময় ও সহযোগিতা প্রসারিত করতে চীন-মালদ্বীপ অভিন্ন লক্ষ্যের সমাজ গড়ে তুলতে চীন ইচ্ছুক বলেও জানান তিনি।

প্রায় এক দশক পর মুইজ্জুর চীন সফর আবারও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে এসেছে। উভয়পক্ষ যৌথ ভবিষ্যতের সাথে চীন-মালদ্বীপ সম্প্রদায়কে যৌথভাবে গড়ে তোলার এই সুযোগটি গ্রহণ করবে।

দুই পক্ষই এখন ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক পারস্পরিক আস্থা উপভোগ করছে। মুইজ্জু আবার জোর দিয়েছেন যে, মালদ্বীপ সরকার দৃঢ়ভাবে এক-চীন নীতি মেনে চলে এবং তার সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় চীনা পক্ষকে সমর্থন করে। অন্যদিকে চীন তার জাতীয় উপযোগী উন্নয়ন পথ অন্বেষণে মালদ্বীপের প্রতি শ্রদ্ধা ও সমর্থন প্রকাশ করে।

গভীর বিশ্বাস বিকাশমান সহযোগিতাকে এগিয়ে নেয়। ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের (বিআরআই) আওতায় চীন-মালদ্বীপ মৈত্রী সেতু এবং চীনের হুলহুমলে আবাসন প্রকল্প এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, যা মালদ্বীপ এবং স্থানীয় জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

মুইজ্জুর চীন সফরের সময় দু’দেশ আরও সহযোগিতার নথি স্বাক্ষর করেছে, যা যৌথ বিআরআই সহযোগিতা, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, সুমদ্র অর্থনীতি, ডিজিটাল অর্থনীতি, সবুজ উন্নয়ন, অবকাঠামো এবং জীবিকা সহায়তার মতো ক্ষেত্রগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

চীন বহির্মুখী পর্যটন পুনরায় শুরু করায় মালদ্বীপে চীনা পর্যটকদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, যা মালদ্বীপের পর্যটন শিল্পের পুনরুদ্ধারকে ত্বরান্বিত করেছে। মালদ্বীপের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩ সালে, দেশটি প্রায় ১ লাখ ৮৭ হাজার চীনা পর্যটককে স্বাগত জানিয়েছে এবং ২০২৪ সালে, চীনা পর্যটকদের সংখ্যা তালিকার শীর্ষে ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পুনরুজ্জীবিত পর্যটন হল দুই দেশের মধ্যে মানুষ-মানুষে আদান-প্রদানের প্রতীক। ২০২৩ সালে, চীন-মালদ্বীপ পারস্পরিক ভিসা-ছাড় চুক্তি কার্যকর করে, যা দুই দেশের মধ্যে কর্মী বিনিময়কে আরও সহজতর করে।

মুইজ্জুর সফরের সময়, চীন জানায়, এটি দুই দেশের মধ্যে আরও সরাসরি ফ্লাইট যোগ করবে এবং চীনে অধ্যয়নের জন্য মালদ্বীপের আরও বেশি সংখ্যাক শিক্ষার্থীকে স্বাগত জানাবে। মালদ্বীপ পক্ষ জনগণের মধ্যে আদান-প্রদানের প্রচারের জন্য এই ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপকে স্বাগত জানায় এবং আশা করে যে আরও বেশি চীনা পর্যটক সে দেশে সফরে আসবে।

চীন ও মালদ্বীপের মধ্যে সম্পর্ক সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। বর্তমানে দু’দেশের সম্পর্ক যে ইতিবাচক অগ্রগিত হয়েছে, আগামী দিনগুলোতে তা আরও গভীর ও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে- এ কথা নিশ্চয় করে বলা যায়।

মাহমুদ হাশিম

ঢাকা ব্যুরো, সিএমজি বাংলা।