চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব
2024-01-01 17:31:58

৫১তম পর্বে যা থাকছে:

 

* ডাইনোসরের আস্ত ডিম খুঁজে পেলেন চীনা বিজ্ঞানীরা

* মেরু ভালুকের পশমের আদলে কাপড় তৈরি করলেন চীনা বিজ্ঞানরা

* থ্রিডি প্রিন্টিংয়ে সফলতা

 

ডাইনোসরের আস্ত ডিম খুঁজে পেলেন চীনা বিজ্ঞানীরা

মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশে কামানের গোলা আকারের ডাইনোসরের ৩১টি ডিমের জীবাশ্ম বা ফসিল আবিষ্কার করেছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে তিনটি ডিমের মধ্যে ভেতরের খনিজগুলো ক্রিস্টাল অবস্থায় পেয়েছেন তারা। এসব ক্রিস্টাল ডিম নিয়ে গবেষণা করে ডাইনোসরের ডিম পাড়ার প্রক্রিয়া এবং প্যালিও এনভায়রনমেন্ট সম্পর্কে জানা সম্ভব হবে। দেশটির স্থানীয় প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে।

চীনে শি ইয়ান শহরের ছিংলং পর্বতে ডাইনোসরের একটি বাসায় ৩১টি ডিমের জীবাশ্ম পাওয়া যায়। হুবেই প্রদেশে এই প্রথম ডাইনোসরের ক্রিস্টালাইজড ডিমের ফসিল পাওয়া গেল। প্রথমে দেখলে চট করে বোঝা যায় না এগুলো আসলে কী; মনে হয় পাথর। কিন্তু ভালো করে খুঁটিয়ে দেখলে জীবাশ্ম হয়ে যাওয়া ডিমের গঠন বোঝা যায়।

৪ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা এবং প্রায় ১২ সেন্টিমিটার চওড়া চ্যাপ্টা আকৃতির ডিমগুলোর খোসা ১ দশমিক ৩১ থেকে ২ দশমিক ৪ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পুরু। তিনটি ডিমের ফসিলে ডিমের খোসা ও এর অভ্যন্তরীণ ক্রিস্টালাইন খনিজ পদার্থগুলো ভালভাবে সংরক্ষিত আছে।

হুবেই ইনস্টিটিউট অব জিওসায়েন্সেসের বিশেষজ্ঞ চাও বি জানান, তিনটি ডিম ফাটল ছাড়া ছিল। কোনও প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বে এই স্ফটিককৃত ডাইনোসরের ডিমের জীবাশ্মগুলোর গঠনের ব্যাখ্যা নেই।

গবেষকরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন ডিমের জীবাশ্মগুলোর অভ্যন্তরীণ স্ফটিক খনিজ ক্যালসাইট কণার আকার শূন্য দশমিক ২ থেকে শূন্য দশমিক ৪ সেন্টিমিটার।

স্ফটিককৃত ডাইনোসরের ডিমের জীবাশ্ম বিশ্বে বিরল। এর প্রধান কারণ ডিমের ভেতরের খনিজের গঠন ও বিরূপ পরিবেশেও ভালো থাকা।

তিনটি ডিমের জীবাশ্ম মাটির নিচে থাকার পরও অক্ষত কেন রয়েছে - এমন প্রশ্নের উত্তরে চাও জানান, ডিমগুলো মাটির নিচে থাকায় সময় প্রচুর পরিমাণে সুপারস্যাচুরেটেড ক্যালসিয়াম কার্বনেট দ্রবণ ডিমের ছিদ্রগুলো দিয়ে প্রবেশ করে, এরপর খনিজগুলোকে স্ফটিকে পরিণত করে দেয়।

ডাইনোসরের ডিমের জীবাশ্মগুলো কার্বন ডেটিং করে জানা গেছে এগুলো প্রায় ৬০ থেকে ৮০ মিলিয়ন বছর আগের। অর্থাৎ মধ্য ক্রিটেসিয়াস যুগের। ছিংলং পর্বতে ১৯৯৫ সালে প্রথমবারের মতো ডাইনোসরের ডিমের ফসিল আবিষ্কৃত হয়েছিল। গবেষকরা এ পর্বতে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার স্থানে খোঁজ চালিয়েছেন।

এদিকে বিশ্বের প্রাচীনতম দন্তহীন উড়ন্ত সরীসৃপ টেরোসরের নতুন এক প্রজাতির ফসিলের সন্ধান পেয়েছেন আরেক দল চীনা বিজ্ঞানী।

তারা নতুন এই প্রজাতির টেরোসরের নাম দিয়েছেন ‘ছাওইয়াংঅপটেরিড’। এটি ক্রিটেসিয়াস যুগে অর্থাৎ ১২৫ মিলিয়ন থেকে ১১৩ মিলিয়ন বছর আগে চীনা ভূখণ্ডে বাস করতো।

ক্রিটেসিয়াস যুগে ঘুরে বেড়ানো এ প্রাণীটির ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকত ডাইনোসর ও অন্যান্য প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী। সাধারণত এদের ঘাড় হতো অসম্ভব লম্বা। সবচেয়ে বড় প্রজাতির ক্ষেত্রে ঘাড়ের দৈর্ঘ্য ছিল আড়াই মিটার।

বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের বিস্ময়, এই প্রাণীটি কীভাবে বিশালাকার শরীর নিয়ে আকাশে উড়তে পারতো। বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ এখন বলছেন, এটি সম্ভবত উড়তে পারতোনা। তবে একথা ঠিক, বারো মিটার প্রশস্ত ডানা এবং দুইশ' কিলোগ্রাম পর্যন্ত ভারী শরীর নিয়ে আকাশে উড়ে বেড়ানোটা রীতিমতো একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

মেরু ভালুকের পশমের আদলে কাপড় তৈরি করলেন চীনা বিজ্ঞানরা

মেরু ভালুকের পশমের গঠন অনুকরণ করে একটি অতি-উষ্ণ, হালকা ওজনের এবং টেকসই   ফাইবার তৈরি করেছেন পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশের গবেষকরা। এই ফাইবার উচ্চতর তাপনিরোধক। গুরুত্বপূর্ণ এ গবেষণাটি করেছেন চেচিয়াং ইউনিভার্সিটির কলেজ অব কেমিক্যাল অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং পলিমার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিজ্ঞানীরা। গবেষণাটি সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

পোলার বিয়ারের পশমের বিশেষ গঠনের কারণে এই প্রাণীটি তার শরীরকে মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও উষ্ণ ও শুষ্ক রাখতে পারে।

রাসায়নিক ও জীব প্রকৌশলের একজন শীর্ষস্থানীয় অধ্যাপক বাই হাও জানান, ভালুকের পশম ‍দুটি অংশ নিয়ে গঠিত। এর ভেতরের অংশ পোরাস কোর এবং বাহিরের অংশ ডেন্স শেল বা খোলস নামে পরিচিত। পোলার বিয়ারের পশমের এই ডেন্স শেল ও পোরাস কোরের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ২০ মাইক্রোমিটার, যা প্রাণিটির পশমের ব্যাসের প্রায় এক-চতুর্থাংশ।

বিজ্ঞানীরা পশমের গঠন অনুসরণ করে এ অ্যারোজেল ফাইবারটি তৈরি করেছেন। এ ফাইবারটি প্রসারণযোগ্য। এ তন্তু দিয়ে তৈরি কাপড় অত্যন্ত টেকসই হয়; সেগুলো ধোয়া ও শুকানো এবং সেগুলোতে বিভিন্ন রং দেওয়া যায়।

অন্যান্য অ্যারোজেল তন্তু ব্যবহারের ফলে পুরুত্ব কমে যায় এবং স্যাঁতসেঁতে অবস্থায় নিরোধক দক্ষতাও কমে যায় কিন্তু এই ফাইবার দিয়ে তৈরি কাপড়ের ক্ষেত্রে এমনটি দেখা যায় না। পাশাপাশি এটি পানি-প্রতিরোধী।

নতুন উদ্ভাবিত এ ফাইবারের শক্তি ও নমনীয়তা ব্যাপকভাবে উন্নত করা হয়েছে এবং এটা পরিধানযোগ্য ফেব্রিকের মতো বুনন করা যাবে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, এ তন্তু দিয়ে বোনা একটি সোয়েটার ডাউন জ্যাকেটের তুলনায় মোটামুটি এক-তৃতীয়াংশ থেকে এক-পঞ্চমাংশ পাতলা হওয়ার পরও একই রকম উষ্ণতা প্রদান করেছে।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

থ্রিডি প্রিন্টিংয়ে সফলতা

চীনে অত্যন্ত মূল্যবান গবেষণাগুলোর একটি হলো ন্যানো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। দেশটিতে এ গবেষণা দিন দিন আরও বিকশিত হচ্ছে। সম্প্রতি চীনা বিজ্ঞানীরা মাইক্রো-ন্যানো থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্ষুদ্র ও জটিল আকারের কয়েকটি বস্তু ও প্রাণীর মডেল তৈরি করেছেন।

শাংহাইয়ের একটি প্রধান জাতীয় গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের গবেষকরা এ গবেষণায় সফলতা পেয়েছেন। তারা কিছু মাইক্রো-ন্যানো থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা বেশ কিছু নমুনা দেখিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি স্টেশন – চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশনে।

মাইক্রো-ন্যানো থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন মডেল তৈরি কর্মসূচির গবেষক লিউ সিয়াওহাং জানান, তারা এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে চীনের জাতীয় স্টেডিয়াম ‘বার্ডস নেস্ট’, রেড বোট, উহানের আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র ইয়েলো ক্রেন টাওয়ার তৈরি করেছেন। ড্রাগনটি নমনীয়, গতিশীল এবং এটি শুধুমাত্র মুদ্রণের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্ভুলভাবে তৈরি করা যায়, তাই এটির মাথা ও পা উজ্জ্বল এবং ড্রাগনের কাঠেমো স্পষ্টভাবে দেখা যায়।

এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে জটিল কাঠামোগুলোর প্রিন্ট করা যায় খুব সহজ। এর জন্য গবেষকদের কেবল কম্পিউটারে আইটেমটির ডিজাইন করতে হবে এবং প্রিন্টের জন্য মাউসে একটি ক্লিক করলেই হবে।

গবেষকদের মতে, এটি একটি ছবি প্রিন্ট করার মতো, যা একেবারেই নির্ভুল।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

নতুন আরও তথ্যবহুল ও অজানা বিষয় নিয়ে প্রতি সপ্তাহের সোমবার হাজির হবো আপনাদের সামনে। আগামী সপ্তাহে আবারো কথা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।

 

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার

 

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- শিয়াবুর রহমান

 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী