শেকড়ের গল্প | পর্ব ৪১
2023-10-25 19:44:22

কৃষিকাজ করে জীবনযাত্রার পরিবর্তন | শেকড়ের গল্প | পর্ব ৪১

 

এবারের পর্বে রয়েছে

১. কৃষিকাজ করে প্রাইভেট কারের মালিক

২. গোলাপ চাষ করে কৃষকদের ভাগ্য বদল

৩. মানসম্মত তুলা উৎপাদন করছে সিনচিয়াং

 

 

বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।

কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।

 

 

কৃষিকাজ করে প্রাইভেট কারের মালিক

গ্রিনহাউজ প্রকল্পে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে বছরব্যাপী ফসল ফলাতে পারেন কৃষকরা। চীনের বিভিন্ন প্রদেশের কৃষকরা কৃষিকাজে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ফসল উৎপাদন করতে পারছেন। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন সময় বেঁচেছে কৃষকদের অন্যদিকে আয় বেড়েছে কয়েকগুণ।

                                               

সিনচিয়াংয়ের কাশগর এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিক কৃষি পার্ক যেখানে ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, যার বিশাল সুবিধা পাচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা। (সিদিকে নামের একজন নারী প্রযুক্তিবিদ জানিয়েছেন তার অভিজ্ঞতার কথা।

 

সিদিকে, স্থানীয় কৃষি পার্কের প্রযুক্তি কর্মকর্তা

"বর্তমানে আমরা আধুনিক সেচ ব্যবস্থা প্রয়োগ করেছি, যেটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে চলে। গ্রিন-হাউজের ভেতরে তাপমাত্রা আমরা বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। অনেক সময় অটোমেটেড পদ্ধতিতে তাপমাত্রা সেট করা হয়। আর এই সবকিছুই আমরা মোবাইলের মাধ্যমে পরিচালনা করতে পারি।"

 

আধুনিক এই প্রযুক্তির উপকারিতার কথা ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামবাসীদের মাঝে। তারাও চেষ্টা করছেন কষ্ট কমিয়ে বড় মুনাফা অর্জনের।

 

"আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগে কৃষির দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে। তাই অনেকেই এ ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। স্থানীয় গ্রামবাসীরা আমাদের কাছে আসেন এবং এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান। এখন অনেকেই নিজেদের জমিতে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের কথা ভাবছেন। আশা করছি শিগগিরই তারা সফল হবেন।"

ইউয়েচিয়া সিনমেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক প্রায় ৪০০ জনের স্থায়ী কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। এর পাশাপাশি প্রায় ৪ হাজার অস্থায়ী কাজের যোগান দিয়েছে এই পার্ক।

 

চিয়াশি কাউন্টিতে বসবাস করা মানুষের একটি বড় অংশ কৃষিকাজে ঝুঁকছেন। প্রায় ৬১ হাজার পরিবার কাজ করছেন পাঁচ লাখ একর জমিতে, যেখানে চাষ করা হচ্ছে দারুন স্বাদের প্লাম ফল।

 

তাং ইয়ু, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের পার্টি সেক্রেটারি

 

"হিমাগার সুবিধা থাকায় অনেক রকম খাদ্যপণ্য সংরক্ষণ করা যাচ্ছে এর ফলে বড় ব্যবসায়ীরা এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছেন। বিশেষ করে ড্রাই ফুডস এবং জ্যাম তৈরিতে বেশ কিছু কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে যার ফলে খাদ্য নষ্ট হওয়ার কোন ঝুঁকি থাকছে না।"

গেল ২০০৫ সাল থেকে, এ অঞ্চলের দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই এগ্রিকালচার পার্ক। কৃষি কাজ করে ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।

স্থানীয় একজন কৃষক বলেন, "আধুনিক ব্যবস্থাপনা থাকায় আমাদের উৎপাদন খরচ যেমন কমেছে তেমনি মান বেড়েছে খাদ্য পণ্যের। আগের চেয়ে বিক্রি বেড়েছে দ্বিগুণ আর মুনাফাও উল্লেখ করার মতো। দু'বছর আগেই কৃষিকাজ করে একটি প্রাইভেট কার কিনেছি এবং গেল বছর একটি বড় বাড়ির মালিক হয়েছি।"

স্থানীয় কৃষকদের মতে, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা আর কঠোর পরিশ্রম যে কাউকে সফল করতে পারে।

 

প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি

সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

 

গোলাপ চাষ করে কৃষকদের ভাগ্য বদল

বিশ্ববাসীর পছন্দের তালিকায় সব সময় এগিয়ে থাকে গোলাপ ফুল। আর পছন্দের এই ফুল চাষ করে করে ভাগ্য বদলে গেছে অনেক মানুষের। চীনের কানসু প্রদেশের লিনসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত এলাকায় তাজা ফুলের শিল্প গড়ে উঠেছে। এখানে গ্রিন হাউজে চাষ হচ্ছে গোলাপ ফুল। এরফলে সৃষ্টি হয়েছে হাজারো কর্মসংস্থানের সুযোগ।

চীনের কানসু প্রদেশের  লিনসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচার। এখানে গ্রিনহাউজে গোলাপ ফুল চাষের মাধ্যমে সারা বছরই ফুলের উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। এখানে গড়ে উঠছে তাজা ফুলের শিল্প। এর মাধ্যমে পাঁচ হাজার স্থানীয় চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এরমাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতির পুনর্জাগরণও সম্ভব হচ্ছে।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ মিটারের বেশি উঁচুতে অবস্থিত লিনসিয়া। এখানে সূর্যের আলো প্রচুর। আবহাওয়া শুকনো এবং মাটির গুণগত মানও গোলাপ চাষের উপযোগী। গত বছর এখানে বড় পরিসরে গোলাপ চাষ শুরু হয়। বর্তমানে পাঁচশর বেশি স্থানীয় শ্রমিক এখানে কাজ করছেন।  চারপাশের গ্রিনহাউজগুলো মিলিয়ে প্রতিদিন দুই লক্ষ গোলাপ উৎপাদন করার সক্ষমতা তৈরি হয়েছে।

বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে গোলাপের চাহিদা বাড়ে।  গ্রিনহাউজগুলোতে এমন সিস্টেম আছে যাতে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ৮০০০ আলোর ব্যবস্থা রয়েছে।

ফুলের এই খামারগুলোতে কর্মরত শ্রমিকদের বার্ষিক গড় মাথাপিছু আয় ৪৫ হাজার ইউয়ান।

চীনে বিভিন্ন এলাকার বৈশিষ্ট্য ও সুবিধাকে মাথায় রেখে ১৮০টি শিল্পগুচ্ছ স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ১০ মিলিয়ন গ্রামীণ পরিবার উপকৃত হচ্ছে।

গ্রামের অর্থনীতিকে চাঙা করার জন্য বড় ভূমিকা রাখছে কৃষি। ফুলের চাষের মাধ্যমে লিনসিয়ার গ্রামীণ অধিবাসীদের জীবনে এসেছে স্বাচ্ছন্দ্যের সুবাতাস।

 

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

 

মানসম্মত তুলা উৎপাদন করছে সিনচিয়াং

চীনের প্রধান তুলা উৎপাদনকারী এলাকা উত্তর-পশ্চিম চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াং। এখানকার তুলাই দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হয় বিশ্বজুড়ে। আর এখন চলছে সেই তুলা সংগ্রহের মৌসুম। কৃষিক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে চীনে শুধু তুলা উৎপাদনই বাড়ছে না একইসঙ্গে উন্নত হচ্ছে তুলার গুণগত মানও।

প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জায়গাজুড়ে চাষ করা হয়েছে এই তুলা। সিনচিয়াংয়ের চাংচি হুই স্বায়ত্তশাসিত এই প্রিফেকচারের মানস কাউন্টিতে প্রতিবছরই বিস্তৃত পরিসরে চাষ হয়ে আসছে তুলা। 

এখন তুলা সংগ্রহের মৌসুম। তাই কৃষকরা ব্যস্ত এই তুলা সংগ্রহে। তবে এখন তুলা সংগ্রহে সনাতন পদ্ধতি কিংবা কায়িক শ্রম করতে হয় না কৃষকের। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে অল্প সময়ে স্বল্প খরচে খুব সহজে মাঠ থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে তুলা।

কৃষিক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে শুধু উৎপাদনই বাড়ছে না একইসঙ্গে তুলার গুণগত মানও উন্নত হচ্ছে। অনেক সময় পাইতু নেভিগেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে মনিটরিং স্টেশন থেকে ভিডিও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা যায় মাটির আর্দ্রতা, কীটপতঙ্গ আক্রমণ করছে কিনা বা গাছে কোন রোগবালাই দেখা দিচ্ছে কিনা।

কৃষিপ্রযুক্তিবিদরা আশা করছেন এ বছর তুলার বাম্পার ফলন হবে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারেই এই সাফল্য ধরা দিচ্ছে কৃষকের হাতে। এ অঞ্চলটির কৃষি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ,সিনচিয়াংয়ের মোট তুলা উৎপাদন এ বছর ৫ মিলিয়ন টনেরও বেশি স্থিতিশীল থাকবে।

চীনের বৃহত্তম তুলা উৎপাদনকারী অঞ্চল উইগুর স্বায়ত্তশাসিত এই সিনচিয়াং। দেশটির ৯০শতাংশ তুলা উৎপাদন করা হয় এই অঞ্চলে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী তুলা চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ পূরণ করে এ অঞ্চলের তুলা।

প্রতিবেদন: আফরিন মিম

সম্পাদনা:  শিহাবুর রহমান

 

 

এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।

এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।

শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল 

সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী