‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের দশ বছর ও প্রসঙ্গকথা
2023-10-10 15:43:03

অক্টোবর ৯: চলতি বছরের জুলাইয়ে যখন আমি বাংলাদেশের একটি সাংবাদিক প্রতিনিধিদলের সাথে সিনচিয়াংয়ে যাই, তখন আমি তাদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি যে কথাটি শুনেছি তা হলো: সিনচিয়াং আমার কল্পনার মতো প্রত্যন্ত মরুভূমি নয়। এখানকার মানুষ নিরাপদ, সমৃদ্ধ ও সুখী জীবন যাপন করছে। এখানের সংস্কৃতি বৈচিত্র্যময় ও বাণিজ্য সমৃদ্ধ। এটা সত্যিই আশ্চর্যজনক!

হ্যাঁ, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের সুযোগ কাজে লাগিয়ে, সিনচিয়াং এখন পশ্চিম সীমান্ত থেকে বিশ্বের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। সিনচিয়াং ইউরেশিয়া মহাদেশের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং প্রাচীন রেশমপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন।  মরুভূমির ধোঁয়া ও বালি আজ বাণিজ্যের পথে হারিয়েছে; প্রাচীন উটের জায়গা দখল করেছে চীন-ইউরোপ রেলপথে চলাচলকারী ট্রেন। এই হাজার বছরের প্রাচীন রেশমপথটি নতুন প্রাণশক্তিতে জ্বলজ্বল করছে।

সিনচিয়াংয়ের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত হরগোস বন্দর হল চীন-কাজাখস্তান সংযোগবিন্দু। হরগোস বন্দর হাইওয়ে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স স্থলে, আপনি দেখতে পাবেন হাজার হাজার ‘মেড ইন চায়না’ বৈদ্যুতিক গাড়ি কাস্টমস থেকে পশ্চিমমুখে যাত্রা করছে।

পশ্চিমে যাচ্ছে কেবল গাড়ি বা উইন্ড টারবাইন ব্লেড নয়, স্থানীয় কৃষকদের চাষ করা আপেলও যাচ্ছে। বাছাই করা থেকে শিপিং পর্যন্ত এই সব কৃষিপণ্য দ্রুত শুল্ক ছাড়পত্রের ‘সবুজ চ্যানেল’ দিয়ে মাত্র সাত বা আট ঘন্টার মধ্যে কাজাখস্তানের মানুষের খাবার টেবিলে পৌঁছাতে পারে।

এই মুহুর্তে, সিনচিয়াংয়ের ফল ও শাকসবজির মৌসুম। এখানে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার টন ফল ও শাকসবজি রপ্তানি করা হয়। এর মধ্যে ৬০% স্থানীয়ভাবে সিনচিয়াংয়ে উত্পাদিত হয়। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের সুবিধাভোগী হয়ে উঠছে আরও অসংখ্য মানুষ।

হরগোসে, চীন ও কাজাখস্তানের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত একটি বিশেষ আন্তঃসীমান্ত এলাকা রয়েছে। এটি হল চীন-কাজাখস্তান হরগোস আন্তর্জাতিক সীমান্ত সহযোগিতাকেন্দ্র। এখানে মানুষ দুটি দেশ অতিক্রম করতে পারে এবং অবাধে বাণিজ্য করতে পারে। এখানে দেশ-বিদেশের বিপুলসংখ্যক পর্যটক কেনাকাটা করতে আসেন।

সবেমাত্র শেষ হওয়া চীনের জাতীয় দিবসের ‘স্বর্ণ সপ্তাহ’ ছুটিতে সহযোগিতাকেন্দ্রে প্রবেশকারী লোকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন দেশের লোকেরা ব্যবসা বা সহযোগিতার জন্য এখানে আসেন। এখানে ভ্রমণ, কেনাকাটা এবং ব্যবসা করা খুবই সুবিধাজনক।

‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর বিশেষ পণ্য, যেমন চকোলেট, মধু, কৃষিপণ্য, সারা বিশ্বের পর্যটকদের প্রিয়। বিভিন্ন পণ্য উপভোগ করার সময়, লোকেরা বিভিন্ন সংস্কৃতিরও অভিজ্ঞতাও লাভ করছে এবং ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের সুফল ভোগ করছে।

হরগোসের দ্রুত বিকাশ গত দশ বছরে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের অবদানের একটি দিক। বর্তমানে, সিনচিয়াং ২৫টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে ২১টি সহযোগিতাচুক্তি স্বাক্ষর করেছে; ১৯০টি দেশ ও অঞ্চলের সাথে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে; এবং ৬০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের বিদেশী বিনিয়োগ রয়েছে।

যখন আমরা উরুমচিতে আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর এলাকা পরিদর্শন করি, তখন বাংলাদেশী সাংবাদিকরা বিস্মিত হয়েছিলেন। এতো বড় স্থলবন্দর এলাকা, পর্যাপ্ত বিদ্যুত ও অন্যান্য অবকাঠামোগত ব্যবস্থা! সিনচিয়াং এতো দ্রুত বিকশিত হয়েছে দেখে তাঁরা অবাক হয়েছেন।

‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ প্রস্তাবিত হওয়ার পর থেকে গত দশ বছরে, সিনচিয়াংয়ের প্রধান অবকাঠামো উন্নয়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়। ১১৮টি দ্বিপাক্ষিক আন্তর্জাতিক পরিবহন সড়ক এবং ১৯টি দেশের ২৩টি শহরের সাথে বিমান যোগাযোগ চালু হয়েছে এর। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত, ৬৫ হাজার চীন-ইউরোপ (মধ্য-এশিয়া) রেলগাড়ি যাতায়াত করেছে, যা সারা চীনের অর্ধেকেরও বেশি। ২০২২ সালে, সিনচিয়াং-এর মোট বৈদেশিক বাণিজ্যে আমদানি ও রপ্তানির মোট মূল্য ২৪০ বিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে,  যা গত বছরের তুলনায় ৫৭% বেশি এবং অবশ্যই একটি নতুন রেকর্ড।

চলতি বছরের শুরু থেকে, ৩৫টি বিদেশী প্রতিনিধিদল সিনচিয়াংয়ে এসেছে এবং অর্থনীতি, বাণিজ্য, কৃষি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা শুরু করেছে। ভবিষ্যতে, সিনচিয়াং উরুমচি আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর, কাশগর ও হরগোস অর্থনৈতিক উন্নয়ন অঞ্চল, পরিবহন বাণিজ্য ও সরবরাহসহ পাঁচটি প্রধান কেন্দ্র, এবং বন্দর অর্থনীতির সাথে আন্তর্জাতিক বিনিময় ও সহযোগিতা আরও প্রসারিত হবে।

যদিও সিনচিয়াং সমুদ্র থেকে অনেক দূরে, তবে সে পুরো বিশ্বকে সংযুক্ত করতে পারে। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের মাধ্যমে, সিনচিয়াং  উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত থেকে উন্মুক্ততার সীমানায় চলে গেছে। গত দশ বছরে, সিনচিয়াং সক্রিয়ভাবে তার আঞ্চলিক সুবিধাকে সারা দেশের সামগ্রিক বিন্যাসে অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং ‘সারা বিশ্বের অতিথিদের স্বাগত জানাতে’ একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্মুক্ত জানালা হয়ে উঠেছে। (ইয়াং/আলিম/ছাই)