‘এক অঞ্চল, এক পথ’: প্রত্নতাত্ত্বিক খননে ইতিহাস বিনির্মাণের সাধনা
2023-10-10 14:41:41

ব্রাশে পরিষ্কারের পর, মৃৎপাত্রের টুকরোগুলো ধীরে ধীরে তাদের আসল চেহারা প্রকাশ করে। তিং ইয়ান এই মৃৎপাত্রের টুকরোগুলো পর্যবেক্ষণ এবং তুলনা করতে থাকেন, যা হাজার হাজার বছর ধরে মাটির নিচে চাপা পড়েছিল। ভিন্ন ভাষা, বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং জীবনযাপনের অবস্থা সত্ত্বেও, মাটির পাত্রের টুকরোগুলোতে অনন্য মাটির গন্ধ তিং ইয়ানকে এ অনুভূতি দেয় যে সবকিছুই ‘পরিচিত’।

এটি কাজাখস্তানের রাহাত সাইট। এই সাইটটি থিয়েনশান পর্বতমালার উত্তর পাদদেশে প্রাচীন সিল্ক রোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। আগামী তিন মাস শায়ানসি প্রাদেশিক প্রত্নতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের গবেষক তিং ইয়ান এখানে কাজ করবেন। তিনি সিনহুয়া বার্তা সংস্থাকে বলেছেন:

“এ বছর এখানে খনন কাজ চালানোর লক্ষ্য হলো, ইলি নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলের আদি লৌহযুগের প্রত্নতাত্ত্বিক সংস্কৃতির বিন্যাস এবং পরিবর্তনগুলো যৌথভাবে বোঝার জন্য কাজাখস্তানের সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করা”।

রাহাত সাইট থেকে প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার দূরে শায়ানসি প্রদেশের সি’আন শহরে, আরেকজন পণ্ডিত ওয়াং জিয়ানসিন, যিনি দীর্ঘদিন ধরে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের অধীনে যৌথ প্রত্নতাত্ত্বিক কাজে নিযুক্ত আছেন, তিনি একটি আন্তর্জাতিক একাডেমিক সম্মেলনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত রয়েছেন। ওয়াং জিয়ানসিন সিল্ক রোড প্রত্নতাত্ত্বিক সমবায় গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বিজ্ঞানী। যদিও তার বয়স ৭০ বছরের বেশি, তবুও তার একটি সম্পূর্ণ সময়সূচি রয়েছে। এই আন্তর্জাতিক একাডেমিক সম্মেলনের পর, ওয়াং জিয়ানসিন উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান ও কিরগিজস্তানের প্রত্নতাত্ত্বিকদের সঙ্গে যৌথ পরিদর্শন এবং একাডেমিক বিনিময় কার্যক্রমে অংশ নিতে উজবেকিস্তানে যাবেন।

সি’আন, প্রাচীনকালে ছাংআন নামে পরিচিত, চীনা সভ্যতা ও চীনা জাতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জন্মস্থান এবং এটি প্রাচীন সিল্ক রোডের পূর্ব দিকের সূচনা বিন্দু। ২১০০ বছরেরও বেশি আগে, হান রাজবংশের চীনা দূত জাং ছিয়ান, ছাংআন থেকে পশ্চিম অঞ্চলে যাত্রার মাধ্যমে চীন ও মধ্য এশিয়ার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদানের দ্বার উন্মোচন করেছিলেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, অনেক চীনা পণ্ডিত সি’আন থেকে প্রাচীন সিল্ক রোডের সাংস্কৃতিক নিদর্শনগুলি অন্বেষণ করতে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ বরাবর দেশগুলোর পণ্ডিতদের সঙ্গে যৌথভাবে সিল্ক রোড বিনিময়ে একটি নতুন অধ্যায় রচনা করেছেন।

২০ শতকের শেষের দিকে, ওয়াং জিয়ানসিন প্রাচীন সিল্ক রোডে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার কাজ শুরু করেছিলেন। চীনের সিল্ক রোডে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণায় ১০ বছর জড়িত থাকার পর, তিনি বিদেশী প্রত্নতত্ত্ব অনুসন্ধান করার জরুরি প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন। "এক’শ বছরেরও বেশি আগে, পশ্চিমা পণ্ডিতরা 'সিল্ক রোড' ধারণাটি প্রস্তাব করেছিলেন, এবং তারা আধুনিক সময়ে এই ক্ষেত্রে অনেক কিছু করেছেন। কাজটি সিল্ক রোড প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার আন্তর্জাতিক কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে। শুধুমাত্র আরও ব্যাপক প্রাথমিক তথ্য আয়ত্ত করার মাধ্যমে চীনা পণ্ডিতরা আন্তর্জাতিক প্রত্নতাত্ত্বিক সম্প্রদায়ের মধ্যে 'চীনা কণ্ঠস্বর' কার্যকরভাবে প্রকাশ করতে পারেন।"

পশ্চিম অঞ্চলে জাং ছিয়ানের যাত্রার লক্ষ্য ছিল Darouzhi অথবা Great Yueh-Chi খুঁজে বের করা যারা Hsiung-Nu দ্বারা পরাজিত হয়ে পশ্চিম দিকে মধ্য এশিয়ায় চলে গিয়েছিল। জাং ছিয়ানের পশ্চিমমুখী যাত্রার পদাঙ্ক অনুসরণ করে, ২০০৯ সাল থেকে ওয়াং জিয়ানসিন সিল্ক রোডে যৌথ প্রত্নতাত্ত্বিক কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য নর্থওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির মধ্য এশীয় প্রত্নতাত্ত্বিক দলকে উজবেকিস্তানে নেতৃত্ব দেন।

দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে, ওয়াং জিয়ানসিনের প্রত্নতাত্ত্বিক দল মধ্য এশিয়ায় অনুশীলন ও অন্বেষণ অব্যাহত রেখেছে, উজবেকিস্তানের প্রত্নতাত্ত্বিক পেশাদারদের সঙ্গে একটি চীন-উজবেক যৌথ প্রত্নতাত্ত্বিক দল গঠন করেছে এবং ‘বড় আকারের পদ্ধতিগত আঞ্চলিক সমীক্ষার সাথে ছোট আকারের বৈজ্ঞানিক ও সুনির্দিষ্ট খনন একত্রিত করার একটি কার্যকরী মডেল’ তৈরি করেছে, গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারের একটি সিরিজ তৈরি করেছে: প্রাচীন যাযাবর সংস্কৃতি এবং কৃষি সংস্কৃতির বেশ কয়েকটি বসতি স্থান পশ্চিম থিয়ানশান অঞ্চলে নতুনভাবে আবিষ্কৃত হয়েছে। মধ্য এশিয়ার প্রাচীন Darouzhi, Sogdia এবং প্রাথমিক কুশান (Kushan) সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য ও বিন্যাস নিশ্চিত করা হয়। "শি জি(ঐতিহাসিক রেকর্ড)", "হানশু" এবং অন্যান্য নথি ও প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষের প্রাসঙ্গিক রেকর্ডগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা হয়।

রাহাত সাইটে, চীনা এবং কাজাখস্তানের পণ্ডিতদের দ্বারা সম্পাদিত যৌথ প্রত্নতাত্ত্বিক কাজও ফলপ্রসূ হয়েছিল। ২০১৭ থেকে শুরু করে, শায়ানসি প্রাদেশিক প্রত্নতত্ত্ব ইনস্টিটিউট এবং কাজাখস্তানের ইসিক-কুল ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার রাহাত সাইট এবং আশেপাশের সাইটগুলোতে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও খনন কাজ চালানোর জন্য একটি যৌথ প্রত্নতাত্ত্বিক দল গঠন করে।

চীন এবং কাজাখস্তানের প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রথমে রাহাত সাইটে জরিপ ও পরীক্ষামূলক খননকার্য পরিচালনা করেন এবং তারপর সমাধি, ছাইয়ের গর্ত, খাদ এবং অন্যান্য স্থানে খনন করেন এবং প্রচুর পরিমাণে লোহার সরঞ্জাম, তামার অলঙ্কার, পাথরের হাতিয়ার, মৃৎপাত্রের টুকরো ইত্যাদি বের করেন।

যৌথ প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণকারী ইসিক-কাজাখস্তান ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচারের পরিচালক গুলিমিলা প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে কাজ করেন। তিনি বলেন, "এ সব সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ থেকে, আমরা প্রাচীন সিল্ক রোড বরাবর মানুষের জীবনের চিহ্নগুলো পর্যবেক্ষণ করতে পারি, যা আমাদের রাহাত সাইটটি গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে সাহায্য করবে এবং এ এলাকার ঐতিহাসিক গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে" । তিনি আরও বলেন, “শুধু চীনা পণ্ডিতরাই রাহাত সাইটে আসেননি, ৮ জন কাজাখ পণ্ডিতও প্রত্নতাত্ত্বিক খনন এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ে অংশ নিতে চীনে গিয়েছিলেন।"

চীন এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। যৌথ প্রত্নতাত্ত্বিক কাজের জোরালো বিকাশের সাথে, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ বরাবরর দেশগুলোর মধ্যে মানব এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতার ভবিষ্যত উজ্জ্বল।

চলতি বছরের এপ্রিলে প্রথম এশিয়ান কালচারাল হেরিটেজ প্রোটেকশন অ্যালায়েন্স কনফারেন্স সি’আনে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রকাশিত ‘এশিয়ান কালচারাল হেরিটেজ প্রোটেকশন অ্যালায়েন্সের সি’আন ঘোষণা’ অনুসারে, জোটের সকল দল ‘মানব অন্বেষণ’, ‘সভ্যতার উৎপত্তি’ এবং ‘সিল্ক রোডে’র থিমগুলো বাস্তবায়নের জন্য মনোনিবেশ করবে।

এ ছাড়াও সি’আনে, এ বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত চীন-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে, চীন এবং মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশ যৌথ প্রত্নতত্ত্ব, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সুরক্ষা ও পুনরুদ্ধার, জাদুঘর বিনিময় ও সহযোগিতা এবং হারিয়ে যাওয়া সাংস্কৃতিক নিদর্শন পুনরুদ্ধার ও প্রত্যাবর্তনসহ একাধিক সহযোগিতার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে।

যৌথ সহযোগিতা শুধুমাত্র প্রত্নতাত্ত্বিকভাবেই ফলপ্রসূ হয়েছে তা নয়, চীনা প্রত্নতাত্ত্বিকরাও স্থানীয় এলাকায় সদিচ্ছা ও উদ্দীপনা অনুভব করেছেন। ওয়াং জিয়ানসিন বলেছেন যে, স্থানীয় লোকেরা চীনা ভাষায় ‘হাও’ সম্ভাষণ ও হাসি দিয়ে তাদের বন্ধুত্ব প্রকাশ করে এবং সরকারী কর্মকর্তারাও চীনের প্রত্নতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞদের উৎসাহ দেন। তিং ইয়ানের মনে পড়ে যে কয়েক বছর আগে, রাহাত সাইটে কাজ করার সময়, খনন সাইটের কাছে বসবাসকারী একজন কাজাখ রাখাল বিশেষভাবে চীনা দলকে স্বাগত উপহার হিসাবে একটি ভেড়া পাঠিয়েছিলো।

 

ভেনিজুয়েলার মেয়ে ইরেদা: আমি চীনকে মন দিয়ে বুঝবো

"আমার নাম লিবারতাদ আরন্ডা হিগুয়েরা ভিস্কায়া, আমার চাইনিজ নাম ইরেদা, আমি ভেনিজুয়েলা থেকে এসেছি, এবং আমি (বর্তমানে) তালিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির স্কুল অফ মেডিসিনে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছি।"

গত বছরের ডিসেম্বরে, ইরেদা উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর ছাংছুন প্রদেশের চিলিন শহরে আসেন, কলেজের প্রস্তুতিমূলক কোর্সের জন্য অধ্যয়ন করতে। এর মাধ্যমে তার চীনে বসবাসের শুরু। পড়াশোনার জন্য কেন তিনি চীনকে  বেছে নিয়েছেন, তা জানালেন সাংবাদিকদের।

"আমার চীনে আসার দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। একটি কারণ আমি চিকিৎসা ক্ষেত্রের সেরা ব্যক্তিদের কাছ থেকে শিখতে চাই। উদাহরণস্বরূপ, ভেনিজুয়েলায়, আপনি যদি কোভিড আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যান তবে আপনি দেখতে পাবেন যে অনেক ওষুধ ও মেশিন চীন থেকে এসেছে। দ্বিতীয়ত, চীন আমাকে সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা করার সুযোগ দিয়েছে।"

ভেনিজুয়েলা উত্তরে ক্যারিবিয়ান সাগর এবং পশ্চিমে কলম্বিয়ার সীমানা। এটি একটি সাভানা জলবায়ু অঞ্চলে উষ্ণ নিম্নভূমির সাথে অবস্থিত, যেখানে সারা বছর গড় তাপমাত্রা প্রায় ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। প্রথম চীনে আসার অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে, ইরেদা জানান যে ছাংছুনের জলবায়ু এবং প্রকৃতি ভেনিজুয়েলার থেকে অনেক আলাদা।

তিনি যখন ছাংছুনে প্রথম এসেছিলেন তখন শীতকাল। এখানেই তিনি প্রথম তুষার দেখেছিলেন। বরফের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাচীন দালানকোঠা এবং আকাশচুম্বী দালানগুলো একই সঙ্গে তার সামনে হাজির হয়েছিল। এই প্রথম তিনি সত্যি সত্যি চীনের সৌন্দর্য অনুভব করেন, এর রয়েছে বিশাল ভূমি, প্রচুর সম্পদ এবং সুদীর্ঘ সভ্যতা। তিনি বলেন,

"আমি যখন চীনে আসি, আমি আধুনিক এবং প্রাচীন যুগের সংমিশ্রণ দেখে অবাক হয়েছিলাম। রাস্তায়, আপনি ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা লোকদের দেখতে পাবেন এবং সর্বত্র অনেক চীনা উপাদান রয়েছে। চীনের প্রতিটি স্থান খুবই অনন্য, এবং চীনা ৫৬টি জাতিগোষ্ঠী সত্যিই আকর্ষণীয়। আর ভেনিজুয়েলায় আমরা সবাই একই খাবার খাই, একই পোশাক পরি এবং আমাদের রয়েছে একই সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যগত উপাদান।"

ছাংছুনে প্রস্তুতিমূলক অধ্যয়ন শেষ করার পর, তিনি তার অধ্যয়ন চালিয়ে যাওয়ার জন্য তালিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজিতে প্রবেশ করেন। তার দৃষ্টিতে, তালিয়ান শহরটি ছাংছুন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, ভিন্ন জলবায়ু, ভিন্ন উচ্চারণ এবং ভিন্ন খাদ্যাভ্যাস। অবশ্যই, এ অনুভূতিগুলো ছাড়াও, ইরেদা বলেন যে চীনা জনগণের "বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত" জীবনধারাও তার উপর গভীর ছাপ ফেলেছে। তিনি বলেন,

“ভেনিজুয়েলা চীন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। আমাদের দেশে, আমাদের কাছে শুধুমাত্র অর্থ লেনদেনের ব্যাঙ্ক কার্ড রয়েছে এবং এত বেশি কিউআর কোড নেই। চীনে আসার পরে, আমি দেখেছি যে সর্বত্র কিউআর কোড রয়েছে। আপনি যদি খাবার কিনতে চান, অর্থ প্রদানের জন্য আপনি শুধু কিউআর কোড স্ক্যান করতে পারেন।”

শুধু কিউআর কোডই নয়, চীনে "ফেস রিকগনিশন" প্রযুক্তিও উন্নত। আপনি যদি চীনে একটি শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করতে চান তাহল দরজা খুলতে আপনার মুখ দেখালেই চলবে।

ইরেদার জন্য সবচেয়ে অবিস্মরণীয় বিষয় হল যে যখন তিনি প্রথম চীনে এসেছিলেন, তখন তিনি একটি চীনা শিশুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন, এবং যা তাদের অনুবাদ ও যোগাযোগ করতে সাহায্য করেছিল তা হল শিশুটির হাতে থাকা খেলনা রোবট কুকুর। ইরেদা বলেছেন:

“আমি এমন পরিস্থিতি কখনও দেখিনি, আমি মনে করি এটি খুব ভাল। এই ছোট জিনিসটির মাধ্যমে চীনের প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বোঝা যায়।”

নতুন সেমিস্টার শুরুর সঙ্গে লিনিয়ার বীজগণিত, উচ্চতর গণিত এবং অন্যান্য কোর্সগুলি একের পর এক শুরু হয় এবং ইরেদাও তার পড়াশোনায় খুব মনোযোগী হয়েছেন। যে বিষয়টি ইরেদাকে বিশেষভাবে খুশি করে তা হল যে ৭ সেপ্টেম্বর, তিনি নতুন আন্তর্জাতিক ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন সেমিস্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। ইরেদা তার বক্তৃতায় বলেছিলেন যে চীনা সংস্কৃতি আকর্ষণীয় এবং চীনা জনগণের বন্ধুত্বে তিনি গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছেন। তিনি মন দিয়ে চীনকে বুঝবেন ও শিখবেন এবং চীনে যে জ্ঞান অর্জন করেছেন ভবিষ্যতে ভেনিজুয়েলায় ফিরে তা প্রয়োগ করবেন।

"আমি প্রায় এক বছর ধরে চীনে আছি। পেশাগত জ্ঞানার্জন অবশ্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি চীনা সংস্কৃতি, চীনা ইতিহাস, চীনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইত্যাদি সম্পর্কে আরও জানতে চাই। এটি একটি দিক। অন্যদিকে, আমি আশা করি ভবিষ্যতে চীনের উন্নয়ন অভিজ্ঞতা আমার নিজের দেশে ফিরে কাজে লাগাতে পারবো।"

ইরেদা বলেন, তিনি চীনের আরও স্থানে বেড়ানোর ও দেখার সুযোগের প্রত্যাশা করেন, তার মনের দিগন্ত প্রসারিত করতে এবং চীনের উন্নয়ন প্রতক্ষ্য করতে চান। ভেনিজুয়েলা ও চীনের মধ্যে বিনিময়ে কিছু অবদান রাখতে চান ইরেদা।

 

মস্কোতে চীনা চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘সিল্ক রোড লাভ’-সম্প্রচার শুরু

চায়না মিডিয়া গ্রুপ- সিএমজির ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ বরাবর দেশগুলোতে প্রচারিত চীনা চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘সিল্ক রোড লাভ’ সম্প্রচার স্থানীয় সময় ৩০ সেপ্টেম্বর মস্কোতে শুরু হয়েছে।

সিএমজির এশিয়া ও ইউরোপ কেন্দ্র এবং চলচ্চিত্র ও অনুবাদ কেন্দ্র, ৫৪৮টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন মিডিয়া এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করে।

রাশিয়ায় চীনা দূতাবাসের মিনিস্টার-কাউন্সিলর, ইভেন্টের আয়োজক এবং রাশিয়ার গ্রেট এশিয়া টেলিভিশনের দায়িত্বে থাকা ফেং লিথাও এর উদ্বোধন করেন। তারা বলেন যে, চীন ও রাশিয়া উভয়ই গভীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বড় দেশ এবং জনগণের কাছে -দুই দেশের মধ্যে মানব ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। দুই দেশের জনগণ সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে একে অপরের কাছ থেকে বোঝাপড়া বাড়িয়েছে এবং শিখেছে।

মস্কোর সর্বস্তরের প্রায় ৯০০ ব্যক্তি, চীনা ও রাশিয়ান মিডিয়ার প্রতিনিধি, চীনা ও রাশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা এই প্রচার অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করতে সমবেত হন।

 

 

 

(জিনিয়া/হাশিম/শুয়েই)