‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৩৮
2023-10-03 18:33:30

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে   

১। যেভাবে চীন মরুভূমিকে সবুজ করেছে, এনেছে পাহাড়ি ঝর্ণার পানি

২। চীনের জনপ্রিয় কিছু  খাবার 

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।  

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৩৮তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।    

১। যেভাবে চীন মরুভূমিকে সবুজ করেছে, এনেছে পাহাড়ি ঝর্ণার পানি

তাকলামাকান। সারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং চীনের সবচেয়ে বড় মরুভূমি এটি। পামির মালভূমিকে পশ্চিমে রেখে উত্তরে তিয়ানশান পর্বতের কোল ঘেষে ৩ লাখ ৩৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এই মরুভূমি।

উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের এই মরুভূমির আবহাওয়া বৈশিষ্ট্যে নাতিশীতোষ্ণ হলেও পাল্টায় খুব দ্রুত। হঠাৎ বিরূপ হয়ে ওঠা প্রকৃতির কারণে স্থানীয়রা একে বলে ‘সি অফ ডেথ’ বা মৃত্যু সাগর। উইগুর ভাষায় একটি কথা প্রচলিত আছে, ‘তাকলামাকানে একবার গেলে আর কেউ ফিরে আসে না!’

এমনই দুর্গম মরু এলাকায় এখন মিলবে শত সহস্র গাছের সারি, বাগান আর স্বচ্ছ পানির লেক। মিলবে সুশীতল ছায়া আর মিটবে প্রাণ ভরে সবুজ দেখার স্বাদ। কী করে সম্ভব হলো? 

সিনচিয়াংয়ের তিয়ানশান পর্বত মূলত এই এলাকাটিকে দুটি অংশে ভাগ করেছে। এরই এক পাশে পড়েছে দক্ষিণ সিনচিয়াং এর শহর আকসু।

‘আক’ শব্দের অর্থ সাদা বা স্বচ্ছ। আর ‘সু’ মানে পানি। কাজেই আকসু’র অর্থ দাঁড়ায় স্বচ্ছ পানি। শুধু নামে নয়, এখানে দেখা পাওয়া যায় পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলের স্রোতধারা।

১৯৬০ সালে ‘কেকেয়া প্রকল্প’ নামের এই বনায়ন কর্মসূচি শুরু করে চীন। ১৯৮৮ সালে শুরু হয় কেকেয়া ক্যানেল খননের কাজ। কয়েক লাখ লোক এই খাল খনন করে প্রায় ৩০ বছরের দীর্ঘ সময় ধরে। স্থানীয় কেকেয়া মেমোরিয়াল হলে দেখানো হয় বৃক্ষরোপন ও বনায়ন কর্মসূচির শুরুর দিকের প্রাণান্ত প্রচেষ্টা আর কঠোর সংগ্রামের নানা চিত্র। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে আকসু মিউনিসিপ্যাল সরকার এই প্রকল্প দেখভাল করে।

মূলত হ্যাভেনলি মাউন্টেইন থেকে আসা পানির স্রোতধারা নেমে এসেছে সেটিই কাজে লাগানো হয়েছে আকসুর বনায়ন কর্মসূচিতে। খাল খনন করে সেই পানি বয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়।

২০০৬ সালে শুরু হয় ৩য় পর্যায়ের বনায়ন কাজ। এখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব কম। আবার মাটিতে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত পাওয়া যায় লবণ ও অন্যান্য খনিজের উপস্থিতি। ফলে বিশেষ প্রজাতির পাই ইয়াং গাছ যার ইংরেজি নাম অ্যাসপেন ট্রি (Aspen Tree), রোপন করা হয় এখানে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী পানি দিয়ে গাছের গোড়া ভিজিয়ে দেওয়া হয়। ফলে গাছগুলো বড় হয় খুব দ্রুত। বর্তমানে মরুভূমির ভেতর দিয়ে নির্মাণ করা ৫২২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রথম মহাসড়কসহ অন্য আরও দুটি মহাসড়ক ও ছোট ছোট সড়কের পাশেও দেখা মিলবে গাছের সারি।

‘হাফ সিটি, হাফ পার্ক’ স্লোগান নিয়ে গড়ে তোলা এই কেকেয়া প্রকল্পের লক্ষ্যই ছিলো প্রকৃতিতে স্পর্শ করা। ফলে ২০১৫ সালে মরুভূমিতে শুরু হওয়া শহর তৈরির কাজ এখন দৃশ্যমান।

বর্তমানে সবুজে ঘেরা এই আকসু সিটিতে বসবাস করে উইগুর, মঙ্গোলিয়ান, কিরগিজ, কাজাখ ও হানসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। অন্যদিকে, আকসুর এই বনায়ন কর্মসূচি এরইমধ্যে স্বীকৃতি পেয়েছে মরুভূমির ভেতরে তৈরি করা বিশ্বের সবচেয়ে বড় গার্ডেন বা বাগান হিসেবে।

প্রতিবেদন- সাজিদ রাজু

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

২। চীনের জনপ্রিয় কিছু  খাবার 

চীনের খাবারের  কয়েক হাজার বছরের সুদীর্ঘ ঐতিহ্য। বিশ্বব্যপী খ্যাতিও আছে চীনা খাবারের। বিশেষ করে চীনা খাবারে বিশেষ কিছু মশলা ব্যবহার করা হয় যা অত্যন্ত সুস্বাদু।

 

চীনের বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন রকম কুইজিন রয়েছে। এরমধ্যে বাংলাদেশের মানুষের টেস্টের সঙ্গে যায় সিংচিয়ান ও সিচুয়ান প্রদেশের খাবার। ফ্রাইড রাইসও পাওয়া যায় প্রতিটি রেস্টুরেন্টে। ছাও ফান মানে ফ্রাইড রাইস। এটা অর্ডার করলে অবশ্যই খেতে পারবেন ভাত। বিভিন্ন রকম ছাও ফান আছে। যেমন ডিমের, মাংসের ইত্যাদি। ডিমের (চিতান) ছাও ফান বেশ সুস্বাদু।

চীনের সুস্বাদু খাবারের মধ্যে বিখ্যাত হলো রোস্টডাক ও হটপট। রোস্ট ডাকের চীনা নাম ‘খাও ইয়া। চীনজুড়ে পাওয়া যায় কয়েক ধরনের রোস্টডাক। খেতেও খুব সুস্বাদু এই রোস্টডাক।

চীনের আরেকটি সুস্বাদু খাবার হলো হটপট বা হুয়োকুয়ো। হটপট পরিবেশনেরও বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। বড় রেস্টুরেন্টে হটপটের টেবিল আলাদা। সেখানে টেবিলের মধ্যে বসানো থাকে চারকোনা বা গোল দুইটি ডিশ। টেবিলের নিচে বসানো থাকে চুলা। ডিশে রয়েছে ফুটন্ত পানি। সেখানেও থাকে মসলা দেওয়া। পাতলা ফালি করে কাটা মাংস, সবজি, নুডলস ইত্যাদি থাকে টেবিলে। ছোট ছোট রেস্টুরেন্টে হটপট পরিবেশনের জন্য ছোট ছোট পাত্র রয়েছে। এই পাত্রের নিচেই আগুন জ্বলতে থাকে। পদ্ধতি একই।

চীনে গিয়ে অনেকেই খুজেন হালাল খাবার। চীনের প্রতিটি শহরের প্রতিটি রেস্টুরেন্ট পাড়ায় হালাল খাবারের দোকান আছে, রেস্টুরেন্ট আছে। চীনে দশটি রেস্টুরেন্ট পাশাপাশি থাকলে তার মধ্যে একটি মুসলিম রেস্টুরেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। মুসলিম রেস্টুরেন্টের সাইনবোর্ডে আরবিতে বিসমিল্লাহ অথবা হালাল শব্দটি লেখা থাকে। মুসলিম রেস্টুরেন্টে নিশ্চিন্ত মনে খাওয়া যাবে।

ইয়াংরো ছুয়ান মানে ছাগলের মাংসের কাবাব। দারুণ সুস্বাদু, সঙ্গে মসলা দেওয়া নান রুটি। আরও পাওয়া যায় ডিপ ফ্রাইড বিন বা বরবটি ভাজা। চিংড়িমাছ ব্রেড ক্র্যাম্প দিয়ে বা এমনি ভেজে দেওয়া হয়। এটি খুবই সুস্বাদু খাবার। মাছের অনেক রকম ডিশ পাওয়া যায়। ব্রাউন সসে ডোবানো একধরনের ডিশের নাম হোং শাও ইয়্যু। সবজির কাবাব খুব মজার ডিশ। এগুলো বারবিকিউ পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। নাম হলো শাও খাও। এগুলো মাংসেরও হতে পারে।

চীনে রাস্তার ধারে দেদারসে বিক্রি হয় মিষ্টি আলু পোড়া এবং ভুট্টা সেদ্ধ। এগুলোও দামে বেশ সস্তা। আরও পাওয়া যায় ডিম পরোটা। তোওফু ভাজা বেশ মজার। আলু ভেজে উপরে মসলা ছিটিয়ে দেয়া হয়। সেগুলোও খুব  মজার।

চীনজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয় নুডুলস। এখানে পাওয়া যায় বিভিন্ন রকম। ছাও মিয়েন ফ্রাইড নুডুলস। ইউননান রাইস নুডুলসও খুব বিখ্যাত। চীনে আসল মজা হলো ফল খেয়ে। নানা রকমের ফল যে পাওয়া যায় এখানে।

 

চীনের সবচেয়ে বিখ্যাত পানীয় হলো চা। চীনের সেরা ১০টি বিখ্যাত চায়ের একটি লংচিং চা বা ড্রাগন ওয়েল চা। এই চায়ের জনপ্রিয়তা শুধু চীনে না, বিশ্বজুড়েই খ্যাত।

চীনে চিয়াওৎজি বা ডাম্পলিং বিখ্যাত। এগুলো নানা স্বাদের হয়। খেতে হয় সেদ্ধ রসুন দিয়ে বা কোনো সস দিয়ে। চীনের বিভিন্ন শহরে আছে ফুডস্ট্রিট। প্রতিটি শপিংমলে ফুড কোর্ট আছে।  চীনের খাবার কিন্তু বেশ স্বাস্থ্যকর। আর ভেজাল একেবারেই নেই।

 

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

 

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী