সিনচিয়াংয়ের ইতিহাস
2023-05-05 10:59:32

এ অনুষ্ঠানে আমরা পালাক্রমে সিনচিয়াং ও তিব্বতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আশা করি, এর মাধ্যমে শ্রোতারা চীনের সুন্দর সিনচিয়াং ও সুন্দর তিব্বত সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাচ্ছেন। তাহলে দেরি না করে শুরু করি আমাদের আজকের অনুষ্ঠান। আজকে আমরা সিনচিয়াং নিয়ে কথা বলব।

 

প্রাচীন ‘সি ইয়ু’ তথা পশ্চিম সীমান্ত এলাকা থেকে আধুনিক সিনচিয়াং

সিনচিয়াংয়ের প্রাচীন নাম ‘সি ইয়ু’, যার অর্থ পশ্চিম সীমান্ত এলাকা। প্রাচীনকাল থেকে এটি চীনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। খৃষ্টপূর্ব ৬০ সালে, পশ্চিম হান রাজবংশের কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় ‘সি ইয়ু’ প্রটেক্টরেট প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ‘সি ইয়ুর’ সামস্টিক ব্যাপার নিয়ন্ত্রণ করতো। ১৮৮৪ সালে ছিং রাজবংশ আমলের সরকার সিনচিয়াংয়ে প্রদেশ স্থাপন করে। ১৯৪৯ সালে সিনচিয়াং শান্তিপূর্ণভাবে মুক্ত হয়। ১৯৫৫ সালের পয়লা অক্টোবর সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

** প্রাচীন সিনচিয়াং

পশ্চিম হান রাজবংশ আমলে সিনচিয়াংকে ‘সি ইয়ু’ বলা হতো। ভৌগোলিক দিক দিয়ে, ‘সি ইয়ু’-র সাধারণীকৃত ও সংকীর্ণ অর্থ রয়েছে। সাধারণীকৃত অর্থে সি ইয়ু হচ্ছে ‘তুন হুয়াং’-এর উত্তর দিকের ‘থিয়ান শান’-এ উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল এবং পামির মালভূমির পশ্চিমাঞ্চলের ব্যাপক মধ্য-এশিয়ার অঞ্চল, এমনকি, আরও বেশি দূর-দূরান্তের এলাকা। সংকীর্ণ অর্থে ‘সি ইয়ু’ হচ্ছে ‘ইয়ু মেন কুয়ান’  ও ‘ইয়াং কুয়ান’-এর পশ্চিম দিক থেকে ‘ছুং লিং’ পর্যন্ত এলাকা।

খৃষ্টপূর্ব ১৩৮ সালে, ‘হান উ’ সম্রাট ‘চাং ছিয়ানকে’ সি ইয়ু পরিদর্শনের নির্দেশ দেন। এর উদ্দেশ্য ছিল, ‘ইয়্যু শি’-এর সঙ্গে সহযোগিতা করে ‘সিউং নুর’ প্রতিরোধ করা। তবে সেটি ব্যর্থ হয়। খৃষ্টপূর্ব ১২১ সালে, হান রাজবংশের বাহিনী ‘হ্য সি করিডোর’ দখল করে ‘উ ওয়েই’, ‘চাং ইয়ে’, ‘চিউ ছুয়ান’ ও ‘তুন হুয়াং’—এই চারটি কাউন্টি প্রতিষ্ঠা করে। সেই সঙ্গে, ‘হুন হুয়াং’ কাউন্টিতে ‘ইয়ু মেন কুয়াং’ ও ‘ইয়াং কুয়ান’ প্রতিষ্ঠিত হয় বলে হান রাজবংশের ভূমির সাথে সরাসরি ‘সি ইয়ু’ সংযুক্ত হয়। খৃষ্টপূর্ব ১১৯ সালে, চাং ছিয়ান পুনরায় ‘সি ইয়ু’ পরিদর্শন করেন। এরপর হান রাজবংশের আর্মির জেনারেল লি কুয়াং লি দু’বার ‘তা ওয়ান’ আক্রমণ করেন, যা ব্যাপকভাবে ‘সি ইয়ুর’ বিভিন্ন রাজ্যকে প্রভাবিত করে। তারা সবাই হান রাজবংশের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়। খৃষ্টপূর্ব ৪৮ সালে, ‘হান ইয়ুন’ সম্রাটের রাজ্যের আয়তন বেড়ে ‘থিয়ান শানের’ উত্তর দিকের উ সুন এবং ‘ছুং লিং’-এর পশ্চিমাঞ্চলের তা ওয়ান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এভাবেই ‘সি ইয়ুর’ ৪৮টি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে হান রাজবংশ। আবার ‘হান এ’ সম্রাট এবং ‘হান পিং’ সম্রাটের অধীনে আসে ‘সি ইয়ু’-র ৫০টি রাষ্ট্র। এ থেকে সিনচিয়াংয়ের অধিকাংশ এলাকা আনুষ্ঠানিকভাবে ‘হান রাজবংশের’ এলাকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।

‘তুং হান’ প্রতিষ্ঠার পর, ‘সি ইয়ুর’ বিভিন্ন রাষ্ট্র ‘তুং হান’ সরকারকে অভিভাবক পাঠানোর জন্য অনুরোধ করে। ‘নান পেই ছাও’ সময়পর্বে ‘সি ইয়ু’ ‘রৌ রানের’ নিয়ন্ত্রণে ছিল। ৬ষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় ‘থু চুয়ে হান’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। সিন চিয়াংয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা  ‘থু চুয়ে হান’ রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ৬০৩ সালে, ‘থু চুয়ে’ বিচ্ছিন্ন হয়ে দুটি রাষ্ট্র—পূর্ব ও পশ্চিম হান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

৬৩০ সালে, থাং রাজবংশ ‘পূর্ব থু চুয়ে হান’ রাষ্ট্র দখল করে। ‘সি ইয়ু’ এলাকায় প্রশাসনিক এলাকা স্থাপন করে। ৬৪০ সালে ‘কাও ছাং’ দখল করে থাং রাজবংশ, আর এভাবেই ‘সি ইয়ু’-র ঐক্যের সূচনা হয়। ৬৪৮ সালে, ‘পশ্চিম থু চুয়ে হান’ রাষ্ট্র দখল করে থাং রাজবংশ। ৬৫৮ সালে ‘পশ্চিম থু চুয়ে হান’ রাষ্ট্র সবই  থাং রাজবংশের নিয়ন্ত্রণে আসে। ‘আন শি বিদ্রোহের’ পর থাং রাজবংশের পরিবর্তে ‘থু ফান’ সি ইয়ু’র প্রশাসক হয়। ৮৪০ সালে ‘হুই হু’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ‘থু ফানের’ পরিবর্তে সি ইয়ুর প্রশাসক হয় হুই হু রাষ্ট্র। ১৩ শতাব্দীর শুরুর দিকে, মঙ্গোলিয়া সিইয়ু ঐক্যবদ্ধ করে। ১২৫১ সালে থিয়ান শানের উত্তরাঞ্চলে ‘শি পা লি সিং শাং শু’ প্রদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। ‘ইউয়ান’ রাজবংশের প্রভাব দিন দিন হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি, সি ইয়ুর সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা ‘পূর্ব ছা হ্য থাই’ হানের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

১৫১৪ সালে ‘ইয়ে আর ছিয়াং’ হান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। থিয়ান শানের দক্ষিণ ও উত্তর দিক সবই এর নিয়ন্ত্রণে আসে। ১৬৮০ সালে ‘ইয়ে আর ছিয়াং’ হান রাষ্ট্রকে দখল করে ‘চুন ক্য আর’ হান রাষ্ট্র। ছিং রাজবংশ প্রতিষ্ঠার পর, ‘চুন ক্য আর’ ছিং রাজবংশের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। এই প্রক্রিয়ায় ছিং রাজবংশ ও ‘চুন ক্য আর’-এর মধ্যে এক শতাধিক বছরের যুদ্ধ চলে। ১৭৫৫ সালে ‘চুন ক্য আর’ হান রাষ্ট্রকে দখল করে ছিং রাজবংশ। ফলে সিনচিয়াংয়ের থিয়ান শানের উত্তর দিকের প্রশাসনিক অধিকার পায়  ছিং রাজবংশ। ১৭৫৯ সালে থিয়ান শানের দক্ষিণ ও উত্তর দিক ছিং রাজবংশের নিয়ন্ত্রণে আসে। ১৭৬২ সালে ছিং রাজবংশের ‘ই লি জেনারেলভবন’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর দায়িত্ব ছিল থিয়ান শানের দক্ষিণ ও উত্তর দিকের ওপর সামরিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)

 

প্রিয় শ্রোতা, আমাদের হাতে আর সময় নেই। আজকে এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। আজকের ‘সিনচিয়াং থেকে তিব্বত’ এ পর্যন্তই। তবে, আগামী সপ্তাহে আমরা আবার আপনাদের সামনে হাজির হবো সিনচিয়াং ও তিব্বতের কোনো গল্প বা তথ্যভান্ডার নিয়ে। আপনারা আমাদের লিখুন। আমাদের ইমেইল ঠিকানা ben@cri.com.cn  আমাদের ওয়েবসাইটেও আপনারা অনুষ্ঠান শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা:  https://bengali.cri.cn/  সবাই ভাল থাকুন, সুন্দর থাকুন।