চলতি বাণিজ্যের ১৬ম পর্বে থাকছে:
১. মে দিবসের ছুটি: চীনে দেড় কোটি পর্যটকের ভ্রমণ, চাঙ্গা অর্থনীতি
২. পানামায় বিদ্যুৎচালিত গাড়ির বাজার দখলে নিচ্ছে চীনা কোম্পানিগুলো
৩. বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাল্প প্রস্তুতকারী কোম্পানির গবেষণা কেন্দ্র হচ্ছে সাংহাইতে
মে দিবসের ছুটি: চীনে দেড় কোটি পর্যটকের ভ্রমণ, চাঙ্গা অর্থনীতি
সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনের পাহাড়, সমুদ্র বা যে কোন পর্যটন আকর্ষণীয় স্থান কানায় কানায় পূর্ণ হয় ছুটির উপলক্ষ পেলে। চলতি বছরের আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের ছুটিতেও পর্যটকদের ঢল নামে এসব জায়গায়। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের ৩ দিনের ছুটিতে পর্যটন স্থানগুলো যেন আবারো প্রাণ ফিরে পায়। আর এর ফলে চাঙ্গা হয়ে ওঠে চীনের অর্থনীতি। চীনের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় বলছে, ৩ দিনের ছুটিতে জল, স্থল ও আকাশ পথ মিলিয়ে ভ্রমণ করেছে মোট ১কোটি ৬০ লাখ মানুষ।
উত্তর-পশ্চিম চীনের কানসু প্রদেশের বিশাল পর্বতমালা। দক্ষিণের কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল কিংবা উত্তর চীনের শাংসি’র সমুদ্র তীরবর্তী বিশাল এলাকা। এসবই যেন অপার সৌন্দর্যের আধার।
তাইতো ছুটির ফুরসত পেলেই নাগরিকদের ঢল নামে এসব সৌন্দর্য উপভোগ করতে। যে কোন ছুটি মানেই যেন উৎসবে পরিণত হয় পুরো চীন। ব্যতিক্রম হয়নি এবারের শ্রমিক দিবসের ছুটিতেও। মোট ৫ দিনের ছুটি উপভোগ করতে ঘরের বাইরে আসেন ভ্রমণ পিপাসু চীনারা।
চীনের রাজধানী বেইজিং, বাণিজ্যিক শহর সাংহাইসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ ছুটে বেড়িয়েছেন দেশজুড়ে। কেউ দেখতে এসেছেন পাহাড়, কেউবা সমুদ্র। আবার কারো পছন্দে খামার বাড়ির নানা কার্যক্রম কাছ থেকে দেখা। এক্ষেত্রে পর্যটকদের পছন্দের জায়গা ছিলো দক্ষিণ চীনের কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের পেইহাই এলাকা। পর্যটকদের নজর কাড়ে ইনার মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের আন্ডার ওয়াটার ডাইভিংও।
রাত নামলেই আলোঝলমলে হয়ে ওঠে চীনের নগরীগুলো। বিশেষ করে পুরনো শহরগুলো যেন ইতিহাসের পাতায় পাতায় ছড়ানো গল্পগুলো জীবন্ত করে তোলে পর্যটকদের কাছে। তাইতো কেউ ঐতিহ্য খুঁজতে আবার কেউবা ছোটবেলার খেলার সাথীদের নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠতেই আসে এসব শহরে।
হুয়াং শেন, পর্যটক
“আমার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতেই এই পুরনো শহরে এসেছি। পাশাপাশি প্রকৃতি দেখবো, ছবি তুলবো। আমার মতে পুরনো শহরগুলোই এখন বেড়ানোর জন্য বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে, জনপ্রিয় হচ্ছে।“
সড়কে, খোলা জায়গায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পর্যটকদের দেয়া এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। পাশাপাশি শহরের জাদুঘরগুলো হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। এখান থেকে প্রাচীন ইতিহাসের অলিগলি চিনিয়ে নেওয়া যায় পরিবারের নবীন সদস্যদের।
চিয়াং ছেংফিং, পর্যটক
“পুরনো দিনে মানুষ কতোটা পরিশ্রম করতো, কতোটা সংগ্রাম করতো সেটা দেখানোর জন্যই আমার ছেলেকে এই জাদুঘরে নিয়ে এসেছি। চীনা জাতির উৎপত্তি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানাতে নিয়ে এসেছি যেন আমাদের জাতীয় গৌরব ধারন করে ও বড় হতে পারে।“
এতো মানুষের আনাগোনা মানেই সব কিছু আবারো চাঙ্গা হয়ে ওঠা। কী বাজার, কী যানবাহন কিংবা হোটেল-মোটেল-রেস্টুরেন্ট। তাইতো ঘুরে বেড়ানোর অনুসঙ্গ মানেই জেগে ওঠে চীনের অর্থনীতি। হাজারো কাজের ভিড়ে চিড়ে-চ্যাপ্টা জীবন থেকে একটু ছুটি নিয়ে আনন্দ সময় কাটানোর প্রস্তুতিও থাকে নাগরিকদের। সেই হিসেব মিললো চীনের বিভিন্ন সংস্থা ও সরকারি দফতরের প্রতিবেদনেও।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মে দিবসের ছুটির প্রথম তিন দিন পরিবহন খাতে রেজিস্ট্রশন করেছেন ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। এতো বিপুল সংখ্যক মানুষের বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তরই বলে দেয় মানুষ কতোটা উৎসবে মাতে। এই পরিসংখ্যানে দেখা মিলছে, গেল বছরের চেয়ে চলতি বছর অন্তত ১৬০ শতাংশ বেশি মানুষ ছুটি কাটানোর জন্য কর্মস্থল ত্যাগ করেছে।
চীনের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশ করা তথ্যে দেখা যায় রেল স্টেশন, বিমানবন্দর ও সমুদ্র বা নদী বন্দরগুলোতে মানুষের চলাচল ছিলো উল্লেখ করার মতো। সেখানে দেখা যায় এই ৩ মাধ্যমে ১৬০ মিলিয়ন ট্রিপ সম্পন্ন করেছেন যাত্রীরা।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য দেখা যায়, রেলকে গণ পরিবহনের অন্যতম প্রধান বাহন হিসেবে বেছে নেয় বেশিরভাগ মানুষ। পরিসংখ্যান বলছে, ৩ দিনের ছুটিতে ৫৩ মিলিয়ন ট্রিপ সম্পন্ন হয়েছে রেলপথে। এ সংখ্যা গেল বছরের তুলনায় ৪৬০ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে আকাশ পথে সাড়ে ৫ মিলিয়ন ট্রিপ সম্পন্ন করেছেন যাত্রীরা। এ সংখ্যা গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৪৬ শতাংশ বেশি। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় বলছে, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের ছুটিতে সব মিলিয়ে মোট ১৬৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন ট্রিপ সম্পন্ন হয়েছে পুরো দেশজুড়ে।
ভিনদেশে চীন:
পানামায় বিদ্যুৎচালিত গাড়ির বাজার দখলে নিচ্ছে চীনা কোম্পানিগুলো
সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: মধ্য আমেরিকার দেশ পানামায় পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎচালিত গাড়ির প্রচলন ঘটাতে কাজ করছে চীনের গাড়ি প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারকরা। এমনকি চীনের মোটরবাইক, বাইসাইকেল ও স্কুটার প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারকরাও পানামার বাজার ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে।
চলতি বছর পানামার রাজধানী পানামা সিটিতে অনুষ্ঠিত ‘পানামা মবিলিটি এক্সপো’তে চীনের বিপুল সংখ্যক কোম্পানি অংশ নেয়।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পানামা সিটিতে অনুষ্ঠিত এই এক্সপোতে চীনা কোম্পানির পাশাপাশি যোগ দেয় জার্মানি, কম্বোডিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন. দক্ষিণ কোরিয়া ও পানামার গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোও।
পরিসংখ্যান বলছে, মধ্য আমেরিকার এই দেশটিতে সম্প্রতি গাড়ির চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়েছে। আবার সামনের দিনগুলোতে পানামায় বিদ্যুৎচালিত গাড়ির চাহিদা হু হু করে বাড়বে। এই ক্রমবর্ধমান বাজার ধরতে অন্যান্য দেশের প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দৌঁড়ে পিছিয়ে নেই চীনের কোম্পানিগুলোও। এদিকে পানামায় জীবাশ্ম জ্বালানীচালিত গাড়ির পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব ইলেক্ট্রিক গাড়ির আমদানি উৎসাহিত করতে আইনে পরিবর্তন এনেছে দেশটির প্রেসিডেন্ট লরেন্টিনো করটিজো। এরইমধ্যে আইনটি পানামায় কার্যকর হয়েছে।
চীনের বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ব্র্যান্ড বিওয়াইডি’র বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক জার্মান মেন্দেজ বলেন, পানামার বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা পরিবেশবান্ধব গাড়ির ব্যবহার উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক। এর ফলে ধারণা করা যায় আগামীতে এখানে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বাড়বে।“
তিনি বলেন, পানামায় এরইমধ্যে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির জন্য ২শ’রও বেশ চার্জিং স্টেশন আছে। কোম্পানিটি বলছে, চলতি বছর পানামার গাড়ি শিল্পের বাজারের অন্তত ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ শেয়ার দখলের চেষ্টা করছে চীনা কোম্পানি বিওয়াইডি।
কোম্পানি প্রোফাইল:
বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাল্প প্রস্তুতকারী কোম্পানির গবেষণা কেন্দ্র হচ্ছে সাংহাইতে
সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেপার ও পাল্প প্রস্তুতকারী কোম্পানি সুজানো। ব্রাজিলের এই কোম্পানিটির কার্যক্রম আছে সারা বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে।
সম্প্রতি চীনের বাণিজ্যিক নগরী সাংহাইতে স্থাপন করেছে এশিয়ার সর্বপ্রথম গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র। সম্প্রতি এই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানটির তৈরি করা গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এদিকে সুজানোর উদ্ভাবনী কার্যক্রমের কারণে কোম্পানিটিকে দেওয়া হয় ‘গ্রুপ ওপেন ইনোভেশন’ অ্যাওয়ার্ড। চীনের পিপলস গভার্নমেন্ট অব সাংহাই পুতোং নিউ এরিয়ার পক্ষ থেকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। একইসঙ্গে সুজানোর সঙ্গে জৈববস্তু বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অংশীদারিত্বভিত্তিক কার্যক্রমের চুক্তি সম্পাদন করা হয়।
অন্যদিকে চীনের আরও বেশি কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প বিষয়ক চুক্তি সই করেছে সুজানো। চায়না নিউজ ডটকম জানায়, এসব গবেষণার মাধ্যমে স্থানীয় ক্রেতা ও সরবরাহকারীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে কোম্পানিটি।
এখানেই শেষ নয়, চীনের স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশেও বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ নিয়েছে সুজানো। এরমধ্যে আছে চীনা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহযোগিতা ও বিভিন্ন রকম সম্পদের যোগান। এর মাধ্যমে চীনের জৈব অর্থনীতির উন্নয়নে বড় ধরনের অবদান রাখতে চায় এই কোম্পানিটি।