‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ১২
2023-04-04 19:35:25

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে  

১। বেইজিংয়ের নিও চিয়ে মসজিদ

২। বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম হোটেল চীনের ‘জে হোটেল’

৩। হংকান: চীনের প্রাচীন গ্রাম

 

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’  

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ১২তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।   

১। বেইজিংয়ের নিও চিয়ে মসজিদ

বেইজিংয়ের সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীন মসজিদ হলো নিও চিয়ে । মসজিদটির স্থাপত্য শৈলী ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের জন্য এটি একটি পর্যটন স্থানও।

৯৯৬ সালে লিয়াও রাজবংশের সময় প্রথম নির্মিত হয় এই মসজিদ। সে সময় এই এলাকায় যে স্থানীয় মুসলমানরা ছিলেন তারা নিজেদের উদ্যোগে এটি তৈরি করেন। ঐতিহ্যবাহী চীনা স্থাপত্যরীতিতে এর বাইরের অংশ নির্মিত হয় আর ভিতরে আরবি রীতিতে ক্যালিগ্রাফির ব্যবহার করা হয়। এর নকশা করেছিলেন নাজারুদ্দিন নামে এক মুসলমান স্থপতি। তিনি ছিলেন মসজিদের ইমামের ছেলে।

 

চেঙ্গিস খানের সেনাবাহিনী ১২১৫ সালে চীন আক্রমণের সময় এই মসজিদ ধ্বংস করে ফেলে। পরে অবশ্য এখানে আবার মসজিদ নির্মাণ হয়। পরবর্তীতে মিং রাজবংশের সময় ১৪৪৩ সালে মসজিদটি পুনর্নিমিত হয়।

ছিং রাজবংশের সম্রাট খাংশির সময় (১৬৬১-১৭২২ খ্রিস্টাব্দ) এর অনেক অংশ পুনর্নিমিত হয় এবং অনেক অংশ বাড়ানো হয়। চীনের কমিউনিস্ট সরকারের আমলেও মসজিদের অনেক অংশ নির্মাণ হয়েছে। বর্তমান সরকারও মসজিদটির পরিসর আরও বাড়িয়েছে। একহাজার বছরের বেশি সময় ধরে এলাকাটি মুসলমানদের আবাসস্থল। বর্তমানে এই এলাকার আশপাশে প্রায় দশহাজার মুসলিম বসবাস করেন।

মসজিদটি বিশাল। এর অনেকগুলো অংশ। প্রায় দশ হাজার বর্গ মিটার এলাকা নিয়ে মসজিদ। মধ্যএশীয় এবং হান চৈনিক স্থাপত্যরীতির মিশ্রণ ঘটেছে এখানে। মূল প্রার্থনা ঘরটি ৬০০ বর্গমিটার আকৃতির। এখানে একহাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন।এই মসজিদে রয়েছে পাথরের কোরান শরীফ। রয়েছে আরও অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ফলে নিওচিয়ে মসজিদ বেইজিংয়ের একটি পর্যটন স্থানও বটে। তবে নামাজের সময় এখানে অমুসলিমরা প্রবেশ করতে পারে না।

এখানে ঈদের জামাত অনেক বড় হয়। ঈদের সময় মসজিদের চারপাশের রাস্তায় ঈদের মেলা বসে। বেশ বড় মেলা। এখানে মূলত খাদ্য সামগ্রী বিক্রি হয়।

মসজিদের কাছেই রয়েছে একটি বড় সুপার মার্কেট। এই সুপার মার্কেটটি মুসলিমদের মালিকানায়, তাদের দ্বারা পরিচালিত। এখানে বিক্রি হয় বিভিন্ন রকম হালাল মাংস এবং অন্যান্য সামগ্রী।

এই এলাকায় অনেক মুসলিম রেস্টুরেন্ট রয়েছে যেখানে নানা রকম সুস্বাদু খাদ্য বিক্রি হয়। ঐতিহ্যবাহী উইগুর ও হুই জাতির খাবারের স্বাদ নিতে অনেক পর্যটক ভিড় করেন এখানে।

প্রতিবেদন-শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা-আফরিন মিম

২। বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম হোটেল চীনের ‘জে হোটেল’

বিলাসবহুল হোটেলের জন্য বিখ্যাত চীনের সাংহাই মিউনিসিপালটি। গেল দুই বছর আগে এই শহরেই নিমিত হয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম জে হোটেল ।

 

চীনের উচ্চতম অট্টালিকা সাংহাই টাওয়ার। সাংহাই এর একেবারে অন্য মাথা থেকেও দেখা যায় সুউচ্চ সাংহাই টাওয়ার। ৬৩২ মিটার উঁচু ভবনটির টপ ফ্লোরেই রয়েছে জে হোটেল।

 

 

 

বিলাসবহুল হোটেলটিতে রয়েছে ৩৪টি স্যুটসহ মোট ১৬৫টি রুম। এ ছাড়াও, এতে রয়েছে সার্বক্ষণিক ব্যক্তিগত বাটলার সেবা, একটি ইনডোর সুইমিং পুল, দুটি প্রখ্যাত ফরাসি প্রসাধনী প্রতিষ্ঠান এরমেস ও ডিপটিকের টয়লেট্রিজ, ম্যাগনোলিয়া ফুলের পাপড়ির মতো আকৃতির বাথটাব ও রেইকি ম্যাসাজ সুবিধাযুক্ত একটি সুদৃশ্য স্পা। নিজের রুমে বসে আরাম করে চা খাওয়ার জন্যে রয়েছে চীনা চায়ের সেট। হোটেলটিতে রয়েছে আরাম-আয়েশের সব ধরনের আয়োজন। হোটেলটিতে চার ধরনের স্যুট আছে।

সবচেয়ে বিলাসবহুল স্যুটটির আয়তন ৩৮০ বর্গমিটার এবং এর নাম ‘সাংহাই স্যুট’। এই স্যুটে শোবার ঘরের পাশাপাশি একটি পার্লার, স্টাডি, রান্নাঘর, ফিজিওথেরাপি নেওয়ার জায়গা এবং শুধুমাত্র পোশাক বদলানোর জন্য একটি আলাদা রুম রয়েছে।

সবচেয়ে সস্তা রুমগুলোর ভাড়া প্রতি রাতের জন্যে ৫৫৭ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৭ হাজার ২০০ টাকা। অপরদিকে, সাংহাই স্যুটের চেয়ে বেশ খানিকটা কম বিলাসবহুল ‘জে স্যুটের’ ভাড়া প্রতি রাতে ১০ হাজার ৪৬৭ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় আট লাখ ৮৭ হাজার টাকা।

হোটেলটিতে সাতটি ভিন্ন স্বাদের রেস্তোরাঁ রয়েছে। হোটেলের সবচেয়ে উঁচুতে, ১২০ তলায় অবস্থিত হেভেনলি চিন রেস্তোরাঁয় ক্যান্টনিজ খাবার পাওয়া যায়। এ ছাড়াও, জাপানিজ, ইতালীয় খাবার, কফি ও পেস্ট্রি এবং বৈকালিক চায়ের জন্যে আলাদা আলাদা রেস্তোরাঁ আছে।

জে হোটেলের মালিক চীনের অন্যতম প্রধান সরকারি হোটেল ও পর্যটন প্রতিষ্ঠান চিন চিয়াং ইন্টারন্যাশনাল। এছাড়াও এটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অ্যাসেট সুপারভিশন অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কমিশনের অংশ।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

৩। হংকান: চীনের প্রাচীন গ্রাম

 

চীনের ৯০০ বছরের পুরনো গ্রাম হংকান। আনহুই স্থাপত্যশৈলীর সেরা উদাহরণ এই প্রাচীন গ্রাম। চীনের আনহুই প্রদেশের হুয়াংশান শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এই গ্রাম।

 

 

২ হাজার সালে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে তালিকাভুক্ত হয় এই গ্রামটি। বিখ্যাত অস্কার চলচ্চিত্র ক্রাউচিং টাইগার, হিডেন ড্রাগনে এই ৯০০ বছরের পুরনো গ্রামের বেশ কয়েকটি দৃশ্য ধারণ করেছিল। চীনের পর্যটকরা সুযোগ পেলে ছুটে আসেন এখানে।

 

প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে গ্রামীণ পরিবেশ উপভোগ করা যায় এখান থেকে। এছাড়া কোয়ার্টজাইটের সরু লেন দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাওয়া যায় কৃষকের মাঠে।

 

 

যুগ যুগ ধরে এখানকার মুন লেক আর গোটা দৃশ্যপট চিত্রশিল্পীদের ক্যানভাসের অন্যতম মডেল হয়ে রয়েছে।

 

প্রতিবেদন-আফরিন মিম

সম্পাদনা –শান্তা মারিয়া

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা ও অডিও সম্পাদনা- আফরিন মিম

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী