আকাশ ছুঁতে চাই ৮
2023-03-09 17:05:09

১. নারী দিবসের শুভকামনায় প্রেসিডেন্ট সি

২.নারীদের কথা তুলে ধরছেন ইয়াং লিয়ানিং

৩. নতুন প্রজন্মের সিনচিয়াং

 

নারী দিবসের শুভকামনায় প্রেসিডেন্ট সি

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারীর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

৮ মার্চ ছিল বিশ্ব নারী দিবস। নারী দিবস উপলক্ষে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং বিশেষ শুভেচ্ছাবাণী প্রদান করেন। চলুন শোনা যাক আমার তৈরি একটি প্রতিবেদনে।

                                             

চীনে বিশ্ব নারী দিবস পালিত হয় উৎসবমুখর পরিবেশে। নারী দিবস উপলক্ষে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং অভিনন্দন বার্তা জানান দেশটির সকল নাররি প্রতি। সকল জাতিগোষ্ঠীর এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে কর্মরত নারীদের তিনি ৮ মার্চের বিশ্ব নারী দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

তিনি বলেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে আমি দুই অধিবেশনের সব নারী ডেপুটি, কমিটির নারী সদস্য, এবং স্টাফ সদস্যদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। চীনের সকল জাতিগোষ্ঠীর নারী, বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকং ও ম্যাকাওর নারী, তাইওয়ানের নারী এবং বিদেশে অবস্থানরত চীনা নারীদের শুভেচ্ছা জানাই।

চীনে নারী দিবস উপলক্ষে ফুল ও উপহার বিনিময় হয় সারাদেশে। পরিবার, কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব নারীদের শুভেচ্ছা জানান তাদের বন্ধু ও স্বজনরা।

 

নারীদের কথা তুলে ধরছেন ইয়াং লিয়ানিং

 

বিয়াল্লিশ বছর বয়সী একজন নারী ডাক্তার ইয়াং লিয়ানিং। যিনি এবার দেশটির শীর্ষ আইনসভা ১৪ তম জাতীয় গণ কংগ্রেসের ডেপুটি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।  এই দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে গ্রামে গ্রামে ছুটছেন তিনি। চলতি বছরের দুই অধিবেশনে জাতীয় আইনসভার বার্ষিক সমাবেশ এবং শীর্ষ রাজনৈতিক উপদেষ্টাদের কাছে গ্রামবাসীদের পরামর্শ পৌছে দিতে প্রতিটা ঘরে ঘরে উপস্থিত হচ্ছেন এই নারী। চলুন শ্রোতা বিস্তারিত শুনে আসি প্রতিবেদনে।

নোটবুক হাতে গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে যাচ্ছেন বিয়াল্লিশ বছর বয়সী ইয়াং লিয়ানিং। গ্রামের মানুষদের কাছ থেকে চীনে চলমান জাতীয় আইনসভার বার্ষিক সমাবেশ এবং শীর্ষ রাজনৈতিক উপদেষ্টাদের কাছে  গ্রামবাসীদের পরামর্শ লিখে নিতেই তার এ ছুটে চলা।

বর্তমানে ডাক্তার ইয়াং দেশটির শীর্ষ আইনসভার ১৪তম জাতীয় গণ কংগ্রেসের ডেপুটি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে ২০০৪ সালে ইউনান প্রদেশের হংহে হানি এবং ই স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচারের হেনান গ্রামে একমাত্র ডাক্তার হোন তিনি।

গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতির পাশাপাশি হাসপাতাল নির্মাণের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি মনে করেন তাদের নিজেদের প্রয়োজনের কথা তাদের মুখে শোনাই সবচেয়ে ভালো।

ইয়াং বলেন "গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্য রক্ষা করার পাশাপাশি, তাদের কণ্ঠস্বর শোনানো আমার দায়িত্ব,"

এই হেনান গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় দুই হাজার। যেহেতু পুরো গ্রামজুড়ে সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে তাই প্রতিটি পরিবারের কথা শুনতে প্রতিটি ঘরে ঘরে যাচ্ছেন তিনি। 

ইয়াং বলেন, বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ ডাক্তাররা ভারী কাজের চাপ, কম বেতন এবং বার্ধক্যজনিত সমস্যার মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। তরুণরা গ্রামে কাজ করতে চায় না, এবং অনেক গ্রামীণ ডাক্তার অবসরের বয়সে পৌঁছেছেন,তাই এসব গ্রামে ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন”।

যেহেতু ডাক্তাররা গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে তাই তরুণ চিকিত্সকদের গ্রামে সেবা দিতে উৎসাহিত করতে  নীতিগত সহায়তার আহ্বান জানান ইয়াং।

সম্প্রতি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি এবং রাজ্য পরিষদের সাধারণ কার্যালয় থেকে প্রকাশিত একটি নথিতে বলা হয়েছে,  ২০২৫  সালের মধ্যে গ্রামীণ চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সংস্কার ও উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করা হবে।

এনপিসি স্ট্যান্ডিং কমিটি থেকে জানা যায়, ইয়াং-এর মতো তৃণমূল সেক্টর থেকে ২ হাজার ৯৭৭ জনকে ১৪তম এনপিসি-তে ডেপুটি  হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ মানুষের কথা নীতি নির্ধারক পর্যায়ে যাতে পৌছায় তাই তাদেরকে নিয়োগ দিয়েছেন স্ট্যান্ডিও কমিটি।

 

 

নতুন প্রজন্মের সিনচিয়াং

চীনের উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ে নতুন প্রজন্মের শিশুরা কিন্ডার গার্টেনে যাচ্ছে। তারা আনন্দময় জীবন কাটাচ্ছে। সিনচিয়াংয়ের নারীরাই চাকরি নিচ্ছেন কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষিকা হিসেবে। শিশুদের নিয়ে তারা গড়ে তুলছেন আনন্দময় এক বর্ণিল ভুবন। চলুন ঘুরে আসি এমন এক বর্ণিল ভুবন থেকে ।

 

 

চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের ছাংচি প্রিফেকচারের জিমুসার কাউন্টি। এখানকার স্থানীয় বাসিন্দা নারী হেইরিগুল। তিনি আট বছর ধরে কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করছেন। শিশুদের এই জগত তার খুব পছন্দের। শিশুদের নিয়ে তিনি নানা রকম খেলার আয়োজন করেন। ওরা ব্লক দিয়ে বাড়ি বানানো, ছবি আাঁকা, নাচ গান ইত্যাদির মাধ্যমে বন্ধুত্ব করতে শেখে, সবশিশু একসঙ্গে মিলে চলতে শেখে।

হেইরিগুল বলেন  ‘এভাবেই ওরা সামাজিকতার প্রথম পাঠ রপ্ত করে। আমার ক্লাসে একটি ছোট শিশু দিলায়া আদির। ছোট ছেলেটি প্রথম দিকে ছিল একটু চড়া মেজাজের ছিল। অল্পতেই রেগে যেত। এখন কিন্তু ও অন্যদের সঙ্গে মিলে চলতে পারছে। কিন্ডার গার্টেন ওর খুব পছন্দ।’

বাবা মা ভাইবোনকে নিয়ে আদিরের সুখী জীবন। সে বাড়িতে ফিরে ছোটবোনের সঙ্গে খেলা করে, সিনচিয়াংয়ের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র দুতার বাজায়, তার বাজনার তালে নাচে ছোট বোন।

শিক্ষিকা হেইরি গুল শিশুদের খুব ভালোবাসেন। চিমুসার কাউন্টির দ্বিতীয় কিন্ডার গার্টেনের ৮ নম্বর ক্লাসের দায়িত্বে আছেন তিনি। শিশুদের সৃজনশীলতা বিকাশের জন্য যেমন তিনি নানা রকম খেলার আয়োজন করেন তেমনি তারা যেন পরষ্পরকে সহযোগিতা করে এবং মানসিক ও শারিরীকভাবে বিকশিত হয় সেদিকটাও দেখেন। সিনচিয়াংয়ের প্রিস্কুলগুলো চীনের অনান্য প্রদেশ ও অঞ্চলের প্রিস্কুলের মতোই শিশুদের আনন্দময় পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করছে।

সিনচিয়াংয়ের তরুণ প্রজন্মের নারী  হেইরিগুল শিশুদের জন্য গড়ে তুলছেন আনন্দময় শিক্ষার জগত। পাশাপাশি তার নিজের কর্মজীবনও এগিয়ে চলছে স্বচ্ছন্দ গতিতে।

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। বিশ্ব নারী দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

নারীদের কথা তুলে ধরছেন ইয়াং লিয়ানিং, প্রতিবেদন: আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল