চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘চলতি বাণিজ্য’
2023-03-03 17:28:02

চলতি বাণিজ্যের ৭ম পর্বে যা থাকছে:

১. চীনজুড়ে ডিজিটাল অবকাঠামো, প্রচলিত শিল্পের অভাবনীয় রূপান্তর

২. সিঙ্গাপুরে ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে শানতোং গ্রুপ

৩. সাংহাইয়ের সেরা স্মার্ট কারখানার মর্যাদা পেলো এটি অ্যান্ড এস

 

চীনজুড়ে ডিজিটাল অবকাঠামো, প্রচলিত শিল্পের অভাবনীয় রূপান্তর

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: অর্থনীতির গতিকে বেগবান করতে সম্পূর্ণ নতুন ধারার উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে চীন। দেশজুড়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ডিজিটাল অবকাঠামো। বিশেষ করে প্রচলিত শিল্পের ডিজিটাল রূপান্তরের লক্ষ্য সামনে রেখে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন যুগের উন্নয়ন গতির সঙ্গে সমন্বয় করে সর্বোচ্চ সুযোগ কাজে লাগাতেই এমন বিস্তর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে চীন।

পূর্ব চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের সিয়েমেন শহর। সড়কের মোড়ে কিংবা লোকালয়ের বিভিন্ন জায়গায় চোখে পড়বে ফাইভ-জি বেজস্টেশন। ২০২৩ সালের মধ্যে চীনজুড়ে যে ডিজিটাল অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার তারই অংশ হিসেবেই এসব ফাইভ-জি স্টেশন, কম্পিউটার সার্ভার। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ব্যাপকভাবে বাড়ানো হবে ডিজিটাল সেবার পরিধি।

কেবল শহুরে জনপদ নয়, বরং গড়ে তোলা হচ্ছে ডিজিটাল ভিলেজ। প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত পৌছে যাচ্ছে ডিজিটাল সেবা। (চায়না অ্যাকাডেমি অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনলজির পরিচালক জানান, এসবের ফলে মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে যাচ্ছে আধুনিক সেবা।)

 

ছ্যাং হাইই, পরিচালক, টেকনলজি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট, চায়না অ্যাকাডেমি অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনলজি

“ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশে সবচেয়ে বেশিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় ডুয়াল-গিগাবিট নেটওয়ার্ক। জাতীয় অর্থনীতির ৯৭টি বড় ধরনের খাতের মধ্যে ৪০টিতেই নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপ পুরো ডিজিটাল শিল্পকে আরেকধাপ উন্নত করবে। একইসঙ্গে প্রচলিত শিল্পগুলোর ডিজিটাল রূপান্তরের ভিত্তিমূল হিসেবে কাজ করবে।“

পূর্ব চীনের শানতোং প্রদেশের চিনান শহর। এখানেই গড়ে তোলা হয়েছে ন্যাশনাল সুপার কম্পিউটার সেন্টার। নির্মাণ করা হচ্ছে সুদৃশ্য ভবন ও সার্ভার রুম। গড়ে তোলা হচ্ছে অত্যাধুনিক ডুয়াল গিগাবিট নেটওয়ার্ক। ডুয়াল গিগাবিট নেটওয়ার্কসের আওতায় থাকবে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক, অপটিক্যাল ফাইবার সেবা। ফলে উচ্চ ব্যান্ডউইথের নেটওয়ার্ক সেবা পাওয়া যাবে সহজেই। শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ওয়াং চিয়ানওয়েই জানান, এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে শিল্প ইন্টারনেট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিল্প, স্মার্ট সিটি নির্মাণ, গ্রামীণ উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক পর্যটনখাতে চীনের উদ্ভাবন ও উন্নয়ন আরো গতি পাবে।

ওয়াং চিয়ানওয়েই, উপ-পরিচালক, শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়

“ডুয়াল গিগাবিট নেটওয়ার্কের পরিধি বাড়াতে আমরা ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছি। স্থানীয় ডেটা সেন্টারগুলোকে উচ্চ প্রযুক্তি, উচ্চ সক্ষমতা ও কার্বন নিঃসরণ কম হয় এমন উন্নয়ন বাস্তবায়নে সব ধরনের পরামর্শ দিতে এবং পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো তৈরি করার সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা রেখেছি। জাতীয় পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বিত বিগ-ডেটা সেন্টার ব্যবস্থা তৈরি করতেও আমরা কাজ করছি। বিশেষ করে চীনের ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশ বেগবান করতে জাতীয় ও আঞ্চলিক কিছু বিগডেটা হাব ও গুচ্ছ তৈরি করছি।“

সম্প্রতি চীনের শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় দ্বিতীয়ধারে আরো ৮১টি গিগাবিট সিটির নির্মাণের অনুমোদন দেয়। এসব সিটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে চীনে গিগাবিট মোবাইল ও কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কযুক্ত এমন শহরের সংখ্যা দাঁড়াবে ১১০টি। ফেংছেং ল্যাবরেটরি জানান, বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক কম্পিউটিং সেন্টার কার্যকর হলে এখনকার উদ্যোগগুলোর কম্পিউটিং ব্যয় কমপক্ষে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে।

ফেংছেং ল্যাবরেটরির পরিচালক ওয়াং সিয়াওকুও বলেন, কার্যক্রম শুরু হলে এই কেন্দ্রগুলো জাতীয় সমন্বিত কম্পিউটিং নেটওয়ার্ক ও শেয়ার কম্পিউটিং পাওয়ারের সঙ্গে যুক্ত হবে। তখন আঞ্চলিক ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো চীনের জাতীয় ডিজিটাল অর্থনীতিতে একযোগে অবদান রাখতে পারবে। পাশাপাশি পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত কম্পিউটিং রিসোর্স চ্যানেলিং কৌশল বাস্তবায়নও সহজ হবে।

চীনা কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশজুড়ে এমন ডিজিটাল বিপ্লব ঘটানোর মাধ্যমে কর্মসংস্থান, পণ্যের উৎপাদন ও গুণগত মান বৃদ্ধিসহ অর্থনীতিতে আরো বড় রকমের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হবে।

 

ভিনদেশে চীন: সিঙ্গাপুরে ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে শানতোং গ্রুপ

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া প্রথম চীনা কোম্পানি চীনের শানতোং পোর্ট গ্রুপ। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বাণিজ্য বাড়াতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে চীন সরকার।

বন্দর ব্যবস্থাপনা ও কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষ কোম্পানি চীনের শানতোং পোর্ট গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে এই প্রথম আঞ্চলিক কার্যক্রম শুরু করে এটি।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে সমন্বয় করে শিপিং কার্যক্রম পরিচালনা করাই এর লক্ষ্য। পাশাপাশি বিশ্বের সেরা শিপিং কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈশ্বিক সহযোগিতা জোরদার করবে এটি। বাড়াবে বাণিজ্যের পরিধি।

সিঙ্গাপুরে গঠন করা এই কোম্পানিটি শানতোং পোর্ট গ্রুপের বৈদেশিক নেটওয়ার্কিং, ক্রস বর্ডার লজিস্টিক ও ই-কমার্স খাতের সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। পাশাপাশি আরো বিনিয়োগ আকর্ষণ করা, সাংস্কৃতি ও পর্যটনখাতের বিনিময়েও ভূমিকা পালন করবে এটি।

অন্যদিকে বন্দর ব্যবস্থাপনা, লজিস্টিকস, আর্থিক ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনা এবং পরিবহন সম্পদের দেখভাল করবে কোম্পানিটি। ধারণা করা হচ্ছে শানতোং বন্দরের কার্যক্রমকে প্রচলিত ব্যবস্থাপনার বাইরে একটি আধুনিক শিপিং হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করবে এটি।

সিঙ্গাপুরে কোম্পানিটির শাখা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বল হয়, এই অঞ্চলের অন্যতম বাণিজ্যিক ও আর্থিক কেন্দ্র, সমুদ্র পরিবহন ও আঞ্চলিক শিপিংয়ের কেন্দ্রস্থল এটি। পাশাপাশি এটি চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ এগিয়ে নেওয়ার অন্যতম আঞ্চলিক মিত্র।

কোম্পানিটির চেয়ারম্যান হুও কাওইউয়ান জানান, আঞ্চলিক বাণিজ্যে গতি আনতেই গঠন করা হয়েছে এই ভর্তুকিমূলক কোম্পানি।

 

 

কোম্পানি প্রোফাইল: সাংহাইয়ের সেরা স্মার্ট কারখানার মর্যাদা পেলো এটি অ্যান্ড এস

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনের বাণিজ্যিক নগরী সাংহাইয়ের ১শ’টি স্মার্ট কারখানার মধ্যে শীর্ষে আছে আধুনিক সার্কিট বোর্ড ও সেমিকন্ডাক্টর প্রস্তুতকারী কোম্পানি এটি অ্যান্ড এস (চায়না) কোম্পানি লিমিটেড।

সাংহাই ভিত্তিক এই কারখানায় তৈরি হয় নতুন প্রজন্মের প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড ও আধুনিক ধরনের সেমিকন্ডাক্টর। ব্যবহার করা হয় আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্ট বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সম্প্রতি সাংহাইয়ের মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষ এমন ঘোষণা দেয়। 

সাংহাইয়ের মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সাংহাই মিউনিসিপ্যাল কমিশন অব ইকোনমি অ্যান্ড ইনফরম্যাটাইজেশন নানা রকম যাচাই বাছাই করে শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা তৈরি করে। পরে সাংহাই মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করা হয়।

বৈশ্বিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নেতৃত্ব দেওয়া এটি অ্যান্ড এস কেবল চীনে নয়। চীনের বাইরেও সুনাম কুড়িয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশ অস্ট্রিয়ার সবচেয়ে বড় চীনা বিনিয়োগেরও প্রতিনিধিত্ব করছে এই কোম্পানিটি। এই কোম্পানির মাধ্যমে ইউরোপের বাজারে চীনা পণ্য আধিপত্য ধরে রেখেছে টানা ২২ বছর ধরে।

এটি অ্যান্ড এস এর বেশিরভাগ পণ্য উৎপন্ন হয় চীনের সাংহাই ও চংছিং প্রদেশে। বিশেষ করে সাংহাইয়ের প্ল্যান্টে তৈরি হয় হাই ডেনসিটি ইন্টারকানেক্ট বা এইচডিআই। এইচডিআই ব্যবহার করা হয় মোবাইল ডিভাইস ও অন্যান্য অটোমোটিভ ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতিতে। এইচডিআই তৈরি করার উদ্দেশ্যে ২০০৮ সালে প্রথম কারখানা তৈরি করে এটি অ্যান্ড এস।

চীনের প্রিন্টেড সার্কিট অ্যাসোসিয়েশন সিপিসিএ জানায়, চীনের ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট বা আইসি এবং মাইক্রোইলেক্ট্রনিকস শিল্পের আরো বিকাশ ঘটবে। এটি অ্যান্ড এস এর পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান শেনচিয়াং ফুয়া বলেন, ভবিষ্যত ডিজিটাল অ্যাপ্লিকেশন মার্কেটে নেতৃ্ত্ব দেবে এই প্রতিষ্ঠানটি। তিনি বলেন, এ শিল্পের বিকাশে নীতি সহায়তা দিচ্ছে সাংহাইয়ের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।