আপন আলোয়-৮৫
2022-09-09 11:23:56

এ পর্বে অন্তরঙ্গ আলাপনে অতিথি সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ আবুল মোমেন

 

 

 


 

 

চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য

চায়না আর্ট ফেস্টিভ্যালের বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী

ছবি: চায়না আর্ট ফেস্টিভ্যালে সংগীত পরিবেশন করছেন শিল্পীরা।

চায়না আর্ট ফেস্টিভ্যাল চীনের সংস্কৃতি জগতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। চলতি মাসের ১ তারিখে বেইজিংয়ে জমকালো উদ্বোধনীর মাধ্যমে শুরু হয় ১৩তম চায়না আর্ট ফেস্টিভ্যাল। 

ন্যাশনাল সেন্টার ফর পারফরমিং আর্টস ভবনে অনুষ্ঠিত এ বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দর্শকদের মুগ্ধ করে। গত এক দশকে চীনের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অগ্রগতি তুলে ধরা হয় এই অনুষ্ঠানে। এ উদ্বোধনী গালা অনুষ্ঠানে  গান, নাচ, অপেরাসহ চোখ ধাঁধানো বিভিন্ন পরিবেশনা ছিল। চায়না আর্ট ফেস্টিভ্যালে অপেরা, সংগীত, নৃত্য পরিবেশনের পাশাপাশি ক্যালিগ্রাফি, আলোকচিত্র, পেইন্টিং প্রদর্শনীও চলছে।

চীনের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বেইজিং পৌর সরকার, থিয়ানচিন পৌর সরকার এবং হ্যপেই প্রাদেশিক সরকারের যৌথ উদ্যোগে আযোজিত হচ্ছে ১৩তম চায়না আর্ট ফেস্টিভ্যাল। বেইজিং, থিয়ানচিন এবং হ্যপেই প্রদেশের বিভিন্ন শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই উৎসব।

এ বছরের উৎসবে পেশাদার মঞ্চ পরিবেশনার জন্য ওয়েনহুয়া সম্মাননা এবং অপেশাদার মঞ্চ পরিবেশনার জন্য ছুয়ানসিং সম্মাননা প্রদান করা হবে। ১ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া চায়না আর্ট ফেসিটভ্যাল চলবে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

 

অন্তরঙ্গ আলাপন

জেলা শহরগুলো এখন কালচারালি, স্যোশালি ডায়িং সিটিজে পরিণত হয়েছে: আবুল মোমেন

আপন আলোর ৮৫তম পর্বে অতিথি সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ আবুল মোমেন

এক.

বাংলাদেশ আসলে এমন একটা ঘটনা ঘটেছে যে, অনেক স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের মতো আমাদের দেশটিও এক নগরীর দেশে পরিণত হয়েছে। ফলে কেবল যে গণমাধ্যমের সুযোগ সমর্থন-পাওয়া, সুযোগ পাওয়া তা নয়, পৃষ্ঠপোষকতার জায়গাটাও ঢাকা-কেন্দ্রিক হয়ে গেছে।

অতীতে চট্টগ্রামে অনেক শিল্প-কারখানা, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, এমনকি ব্যাংক ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের, সরকারি অনেক দপ্তরের হেড অফিস ছিল। যে কারণে অনেক ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যেত। কিন্তু এখন যেহেতু দেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমস্ত ব্যাপারটা ঢাকা কেন্দ্রিক হয়েছে, ফলে ব্যবসায়-বাণিজ্যসহ তাদের কেন্দ্রীয় অফিস ঢাকায় চলে গেছে।  ফলে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিশেষ করে প্রায়োগিক শিল্প চর্চায় ভাটা পড়তে বাধ্য। এটা শুধু চট্টগ্রামে নয়, আসলে সারা বাংলাদেশে জেলা শহরগুলো এখন কালচারালি, স্যোশালি ডায়িং সিটিজে পরিণত হয়েছে।

দুই.

আগেকার দিনে বড় বড় সাহিত্যিকেরা নিজেদের (চট্টগ্রাম) জেলাতেই থেকেছেন। আবুল ফজল থাকলেন, মাহবুব আলম চৌধুরী এখানে থেকে গেলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী- এরা তো সবাই বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত মানুষ। সুচরিত চৌধুরী উঠে এলেন। এখান থেকে তারা জাতীয় পর্যায়ে লিখেছেন এবং পরিচিতি পেয়েছেন। এটা ৫০ ও ৬০-এর দশকে ভালোভাবে ছিল।

চট্টগ্রাম থেকে সীমান্ত পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে- যেখানে দুই বাংলার লেখকরা লিখতেন। ১৯৫০-এর ঘটনাবলীর পর দাঙ্গাবিরোধী যে সংখ্যাটা বেরিয়েছিল সেটা সম্পর্কে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, গোপাল হালদার এরা বলেছেন যে এরকম কোনো দাঙ্গাবিরোধী প্রয়াস পশ্চিমবঙ্গেও হয়নি। এ রকম উচ্চমানের কাজ চট্টগ্রামে হয়েছে। ফলে সেদিক থেকে চট্টগ্রাম স্বাবলম্বী ছিল। লেখালেখির ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের যোগাযোগটা কলকাতার সাথে ঢাকার চেয়েও বেশি ছিল।

আর চট্টগ্রামেই কিন্তু বাংলাদেশে আধুনিক প্রকাশনার সূত্রপাত হয়েছিল। সবিহ উল আলমের মতো শিল্পীরা মুদ্রণশিল্পে যুগান্তর ঘটিয়ে দিলেন- কাভার থেকে আরম্ভ করে অঙ্গসজ্জা পর্যন্ত সর্বত্র! আমরা চট্টগ্রামে যখন একুশের সংকলন প্রকাশ করতাম তখন আমাদের কাউন্টারাপার্ট যারা ঢাকায় আছেন তারা বসে থাকতেন দেখার জন্যে যে চট্টগ্রাম এবার কী দেখাচ্ছে! এটার প্রভাব কিন্তু অনেক কাল ধরে চলেছে- যতদিন পর্যন্ত না ঢাকা এককভাবে তার উত্থান ঘটায় এবং অন্য সবাইকে একেবারে মুড়িয়ে দেয় আর কী!

তিন.

ফুলকি একটা মুক্ত স্কুল, আসলে সাংস্কৃতিক স্কুল। কীভাবে শিক্ষার মধ্য দিয়ে শিশুরা মানুষ হয়ে উঠবে- সেটা সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্য দিয়ে। সংস্কৃতি বলতে আমি তার সামগ্রিক অর্থে ধরছি, জীবনচর্চার সঙ্গে ধরছি। সে অর্থে কীভাবে এটা তাদের সমৃদ্ধ করবে?

সে নেতৃত্ব দিতে পারে কি-না, সে সবার সঙ্গে মিশে কাজ করতে পারে কি-না, তার মধ্যে ফেলো ফিলিং আছে কি-না, মমত্ব আছে কি-না, গাছপালার প্রতি সংবেদনশীল কি-না- এমন অনেক গুণাবলী তার মধ্যে বিকশিত করতে হবে।

আমরা চাই প্রত্যেক শিশু গান করবে, প্রত্যেক শিশুই ছবি আঁকবে, প্রত্যেক শিশুই বিতর্ক করবে, আবৃত্তি করবে। প্রচলিত শিক্ষায় তো এ সবের চর্চা নেই, শিখবে কীভাবে? পরিবারও তো সে শিক্ষা দিচ্ছে না। তো সে শিক্ষা আমাদের (ফুলকির) শিক্ষার মধ্য দিয়ে হবে। আমরা একটা ইন্ট্রিগ্রেটেড শিক্ষা দিতে চাই- এটা একটা টোটালিটি- মানুষ হয়ে ওঠার জন্য।

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে চট্টগ্রাম তথা দেশে প্রায়োগিক শিল্পে পৃষ্ঠপোষকতার সংকট, চট্টগ্রামে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার অতীত-বর্তমান এবং নিজের শিশু-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফুলকির কার্যক্রম নিয়ে বললেন একুশে পদক জয়ী সাংবাদিক, সাহিত্যিকি ও শিক্ষাবিদ আবুল মোমেন। সংকট উত্তরণে তরুণ প্রজন্ম নিজেদের মতো করে পথ করে নেবে বলেও বিশ্বাস তাঁর।

 

সিএমজি বাংলা’র ফেসবুক পাতা facebook.com/cmgbangla এবং ইউটিউব লিঙ্ক youtube.com/cmgbangla তে গিয়েও আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে জানাতে পারেন আপনার মূল্যায়ন।

 

পরবর্তী অনুষ্ঠানে আমরা বাংলাদেশ-চীনের সংস্কৃতিক অঙ্গনের আরো কিছু খবর এবং গুণিজনের অন্তরঙ্গ আলাপন নিয়ে হাজির হবো আপনাদের সামনে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন।

 

অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও সাক্ষাৎকার গ্রহণ: মাহমুদ হাশিম

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া।

অডিও সম্পাদনা: তানজিদ বসুনিয়া।