লিউ থিয়ান হুয়া'র সঙ্গীত কর্মের সফলতা প্রধানত জাতীয় বাদ্যযন্ত্রের ওপর । তিনি দশটি এরহু বাজানোর সুর, তিনটি পিপা বাজানোর সুর ও দুইশটি ঐকতানের সঙ্গীত সৃষ্টি করেছেন। চীনের সঙ্গীতের উন্নয়নের ওপর লিউ থিয়ান হুয়ার সবচেয়ে অবদান হচ্ছে, এরহু ও পিপার সংস্কার, বাদ্যযন্ত্রের স্বরলিপি উন্নত করা এবং দেশীয় সঙ্গীত শিক্ষাদান প্রভৃতি।
তিনি বাদ্যযন্ত্রের স্বরলিপির উন্নয়ন করাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, বাদ্যযন্ত্রের স্বরলিপির অনুন্নত ও অসম্পূর্ণতার কারণে চীনের প্রাচীনকালের সঙ্গীতগুলো সম্পূর্ণরূপে সংরক্ষিত হয়নি। তিনিই সর্বপ্রথম চীনের সঙ্গীতে পাঁচ লাইনের স্বরলিপি ব্যবহার করেন। বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন লিউ থিয়ান হুয়ার আরেকটি প্রতিনিধিত্বশীল কাজ 'সুন্দর রাত'।
১৯২৮ সালের বসন্ত উত্সবের আগের দিন রাতে লিউ থিয়ান হুয়া নিজের সঙ্গীত জীবনে সবচেয়ে স্বল্প পরিসরের একটি সুর সৃষ্টি করেন। এ সুরের নাম দেয়া হয়েছে "সুন্দর রাত"। এ সুরটিতে সরল, আনন্দময়, প্রাণবন্তভাবে সুরকার তার বন্ধুদের সঙ্গে বসন্ত উত্সবের আগের দিন রাতের সুন্দর সময় কাটানোর অনুভূতি বর্ণনা করেছেন। সেদিন রাতে তিনি দরিদ্র ছাত্রদের নিজের বাসায় এসে বসন্ত উত্সব পালন করার আমন্ত্রণ জানান। যখন তার কয়েক বছরের যত্নের প্রচেষ্টায় দেশীয় সঙ্গীত উন্নত হয়েছে। কাজের অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে এবং সবেমাত্র 'দেশীয় সঙ্গীত উন্নয়ন সংস্থা' প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। ঠিক তখন তিনি ভবিষ্যতের ওপর বড় আশাবাদী হয়ে ওঠেন। ঘরের বাইরে বাচ্চাদের হাসি ও আতশবাজির আওয়াজ শুনে বসন্ত উত্সবের আনন্দময় আমেজ অনুভব করেন। এ সময় তিনি এরহু হাতে নিয়ে বাজাতে শুরু করেন। বাজতে বাজতে তিনি হঠাত দাঁড়িয়ে উঠে কাগজে সংগীতের স্বরলিপি লিখেন। এ সুরই হলো "সুন্দর রাত"।
'সুন্দর রাত' হচ্ছে লিউ থিয়ান হুর দশটি এরহু সুরের মধ্যে একমাত্র আকস্মিক কর্ম। এ সুর তৈরি করতে হয়েছে অতি দ্রুত, এ সুর খুব ছোট্ট। বর্তমান চীনের জাতীয় এরহু পরীক্ষায় 'সুন্দর রাত'কে প্রাথমিক পর্যায়ের সুর গণ্য করা হয়। এ সুর ক্ষুদ্র ও সরল। বাজতে কোন জটিল কৌশলের প্রয়োজন হয় না।
১৯৯৩ সালে এ সুর চীনের জাতীয় সংস্কৃতি কমিটির 'বিংশ শতাব্দীতে চীনা সঙ্গীতের শ্রেষ্ঠ কর্ম পুরস্কার' অর্জন করেছে। ১৯২৮ সাল এ সুরের জন্ম হওয়ার পর বিদেশী অতিথি ও বন্ধুদের অভ্যর্থনাসহ এ সুরটি বিভিন্ন সঙ্গীতানুষ্ঠানে বার বার বাজানো হয়েছে। এটা 'এরহুর সেরা দশটি সুরের' অন্যতম। এই সুরের সবল জীবনীশক্তি আছে। বন্ধুরা, এবার শুনুন তাইওয়ানের নতুন সিমফনি অর্কেস্ট্রায় বাজানো 'সুন্দর রাত' নামের সুরটি।
লিউ থিয়ান হুয়া আজীবন দেশীয় সঙ্গীতের উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি 'সঙ্গীতকে অভিজাত সম্প্রদায়ের খেলনা হতে' বিরোধিতা করেছেন। তিনি 'সঙ্গীত জনসাধারণের চাহিদা মেটানোর উপায়' এমন ধারণা উত্থাপন করেছেন। তবে তিনি চীনের জাতীয় সঙ্গীতের ঐতিহ্যকে মূল্য দেওয়ার পাশাপাশি পশ্চিমা সংগীতের পরিচয় দেওয়া, পশ্চিমা সঙ্গীতের সঙ্গে সমন্বয় ও সহযোগিতার মধ্য দিয়ে এক নতুন পথ খুঁজে বের করার' প্রস্তাব করেন।
বন্ধুরা, এবার শুনুন "অকার্যকরভয়েস" নামের একটি সুর। এ সুর ১৯২৯ সালে সৃষ্টি করা হয়েছে। সে সময় চীনের সঙ্গীত শিক্ষা শুরু হয়। শাংহাই সরকারি সঙ্গীত কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সে সময়। পেইচিং সঙ্গীত ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার আবেদনও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয়েছে। লিউ থিয়ান হুয়া এক গভীর নিরব রাতে এ সুর লিখেছেন। তাতে চীনের সঙ্গীত শিক্ষার ওপর তার অবিচলিত আস্থা প্রকাশিত হয়েছে।
বন্ধুরা, এতোক্ষণ আপনারা চীনের উদ্ভাবনশীল সঙ্গীতজ্ঞ ও সঙ্গীত শিক্ষাবিদ লিউ থিয়ান হুয়ার পরিচয় এবং তার প্রতিনিধিত্বকারী বেশ কয়েকটি সুর শুনলেন। আশা করি, অনুষ্ঠানটি আপনাদের ভালো লেগেছে। এতোক্ষণ আমার সঙ্গে থেকে অনুষ্ঠান শোনার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। (ইয়ু/মান্না)
| ||||